মেঘ যত বড়ই হোকনা কেন, সেই মেঘ ভেঙে একটা সময় ঠিকই চাঁদ উঁকি দেয়। নিজের আলোয় আলোকিত করে সারা পৃথিবী। ঠিক তেমনই, প্রতিভা এমন একটা জিনিস যা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই। চেষ্টা, শ্রম আর অধ্যাবসায় যদি ঠিক থাকে, তবে গন্তব্য ঠিকই স্বপ্নের বন্দরে পৌঁছে দেয়। আর সেই কাজটাই করে দেখিয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একঝাঁক দামাল তরুণ। সবার অলক্ষ্যে তারা খেলাধুলায় নিজ নিজ স্বপ্ন জয়ের পথে হেঁটে চলেছেন বীরের মতো। আর তাদের আলোয় শুধু বিরামপুর নয়, সারা বাংলাদেশ আলোকিত হচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী বিরামপুরের এসব প্রতিভাবান কৃতি খেলোয়াড়দের বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন এবং বিরামপুর ক্রিড়া সংস্থার পক্ষ থেকে একমঞ্চে একত্রিত করে সংবর্ধনা দেয়ার মাধ্যমে আরও উজ্জীবিত করার এক অনন্য আয়োজন করলেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব পরিমল কুমার সরকার। এমন অসাধারণ এক আয়োজনটি যেন সবধরনের খেলোয়াড় এবং খেলা অনুরাগীদের এক মিলনমেলায় রূপ ধারণ করে। মোট ৯ জন কৃতি খেলোয়াড়কে এই সংবর্ধনা স্বরূপ ক্রেস্টসহ ফুলেল শুভেচছা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন -
১- তানভীর হোসেন (অধিনায়ক, অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল, অনূর্ধ্ব ২০ সাফ চ্যাম্পিশনশীপ-২০২২ রানার্সআপ, (ভারত) এএফসি কাপ বাছাইপর্ব-২০২২(বাহরাইন), অনূর্ধ্ব ১৯ সাফ ফুটবল-২০১৯।
২- জাকারিয়া আলম শান্ত (অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ক্রিকেট দল)।
৩- শাফায়েত হোসেন অমিত (অনূর্ধ্ব ১৩, ১৪, ১৬, ১৯ ফুটবল, স্পেশাল অলিম্পিক(ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত)।
৪- নাজমুল ইসলাম (ব্যাডমিন্টন জাতীয় দল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত)।
৫- কাওছার আলম রক্তিম (বক্সিং) জাতীয় দল।
৬- সোহেল রানা (হ্যান্ডবল) জাতীয় দল।
৭- সাবিনা ইয়াসমিন(অধিনায়ক, প্রমিলা ভলিবল, সাফ গেমস, বাংলাদেশ গেমস, এশিয়ান গেমস, ইসলামিক সলিডটরী গেমস, (নেপাল, ভারত)।
৮- আবির আহমেদ রাসেল (ব্যাডমিন্টন), থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া।
৯- মোস্তাকিম হোসেন (ব্যাডমিন্টন), সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ব্যাডমিন্ট টুর্নামেন্ট-২০২২ (অনূর্ধ্ব ১৫ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন )।
ইউএনও পরিমল কুমার সরকার এর সভাপতিত্বে বিরামপুর উপজেলা কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একে একে উপস্থিত হন বিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম রাজু, বিরামপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আক্কাস আলী, বিরামপুর থানা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন কুমার মহন্ত সহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ, অভিভাবক এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ বিরামপুরের ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সকলেই।
বিরামপুর একটি সীমান্তঘেঁষা উপজেলা হওয়ায় এখানে মাদকের আগ্রাসন বেশি। তাই এর থেকে বাঁচতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে ইউএনও পরিমল কুমার সরকার বলেন, "একমাত্র খেলাধুলায় পারে আমাদের যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে দূরে রাখতে। তাই তরুনদের খেলাধুলায় মনোযোগী করে তুলতে হবে। এজন্য এখানকার খেলা অনুরাগী ও বিভিন্ন সংগঠন গুলো যারা আছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে। তাহলেই আজকে যারা উপস্থিত আছেন তাদের মতো আরও অনেক মেধাবী খেলোয়াড় বেড়িয়ে আসবে। প্রশাসনিক ভাবে সবধরনের সহযোগিতা আমাদের থাকবে।" এসময় উপস্থিত কৃতি খেলোয়াড়দের ভুয়সী প্রশংসা করেন তিনি। এবং তাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগান। পাশাপাশি তাদের অনুরোধ করেন যে, তারা বিশ্বসেরা হলেও যেন নিজের মা ও মাটিকে না ভোলেন। অসহায় প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের হাতটা যেন তারা ধরেন।
এছাড়াও উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম রাজু, পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আক্কাস আলী, ওসি সুমন কুমার মহন্ত, বিরামপুর প্রেসক্লাব এর সভাপতি আকরাম আলী সহ আরও অনেকে।