একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার ( ২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে মুক্তি পান। এ সময় তার দলের নেতাকর্মীরা তাকে হাসপাতাল গেটেই স্বাগত জানান। মুক্তি পাওয়ার পরপরই তিনি শাহবাগ মোড়ে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
এর একদিন আগে, ২৭ মে, আপিল বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেন। বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে, চলতি বছরের ৮ মে এই মামলার আপিলের শুনানি শেষ হয় এবং রায় ঘোষণার জন্য ২৭ মে দিন ধার্য করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারকে ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল। রংপুর অঞ্চলে সংগঠিত এসব অপরাধের মধ্যে ছিল ১,২৫৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও গণহত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক করে নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বহু বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা। এসব অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি এটিএম আজহারের পক্ষ থেকে আপিল দায়ের করা হয়। এতে ১১৩টি যুক্তির মাধ্যমে তাকে নির্দোষ দাবি করে রায় বাতিল চাওয়া হয়। এই আপিলের মূল আবেদনের দৈর্ঘ্য ছিল ৯০ পৃষ্ঠা এবং সহায়ক দলিলসহ মোট ২,৩৪০ পৃষ্ঠার নথিপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ পূর্বের রায় বহাল রাখলেও পরবর্তীতে এটিএম আজহার রিভিউ আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ আদালত অবশেষে তাকে খালাস দেয়। জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই এই মামলাকে “প্রহসনের বিচার” বলে উল্লেখ করে আসছিল এবং খালাসের রায়কে দলটির নেতারা তাদের বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।