বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা এর কোনো নেতাকর্মীর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে, তাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৭ মে) কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "মানুষমাত্রেই ভুল করতে পারে, আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। দল হিসেবে আমরা কখনও দাবি করি না যে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মী বা দলের মাধ্যমে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমরা কোনো শর্ত ছাড়াই, নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।"
এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আপিল বিভাগ থেকে খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে। এতে দলটির আমির শফিকুর রহমান যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, "আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আমি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছি—আমরা নিজেরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চেষ্টা করেছি জনগণের পাশে থাকতে। শহীদ পরিবার, আহত ও পঙ্গু ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। তবে আমরা জানি, আমরা আমাদের সব দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল, আমাদের অনেক কিছু করতে দেওয়া হয়নি। এজন্য যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।"
তিনি আরও বলেন, “জাতির সামনে এখনো অনেক বার্নিং ইস্যু রয়ে গেছে। সেগুলোর সমাধানে সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই কামনা করি।”
ভবিষ্যতের অঙ্গীকার করে শফিকুর রহমান বলেন, “যদি জনগণ আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি নয়, বৈষম্যহীন, মানবিক ও কল্যাণমুখী সমাজ গঠনে কাজ করব। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত এবং সাম্যভিত্তিক সমাজ—সেখানে সবাই থাকবে সমান অধিকার নিয়ে।”
তিনি যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় নিয়ে বলেন, “আমাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর ছিল একটি পরিকল্পিত নেতৃত্ব নির্মূল অভিযান। এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে—সত্যকে চিরদিন চাপা দেওয়া যায় না। সত্য শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। আল্লাহ আজ আমাদের সেই সত্য দেখিয়েছেন।”
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়। এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, যা আপিল বিভাগও বহাল রেখেছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তার রিভিউ শুনানি শেষে ২৭ মে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেয়।