সিন্ডিকেটকারীদের সতর্ক করে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রোজাদারদের প্রতিটি নিশ্বাস গজব হয়ে নাজিল হবে। আল্লাহর গজবে অতল গহ্বরে চলে যাবেন। তাই আল্লাহকে ভয় করুন।

আজ (২ মার্চ) দুপুর ১২টায় রাজধানীর উত্তরায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, "হাসিনা পারে নাই, এর আগের সরকার পারে নাই। আমরা আশা করেছিলাম। অধ্যাপক ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। তার ওপর আমরা এখনও আস্থা রাখি। কিন্তু যাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি কী উদ্যোগ নিয়েছেন—জাতির সামনে সেটি পরিষ্কার নয়।"

মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য ও উত্তরা মডেল থানা আমির অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম খলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উপস্থিত ছিলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান, উত্তরা মডেল থানার নায়েবে আমির হারুনুর রশীদ তারেক, তুরাগ মধ্য থানা নায়েবে আমির কামরুল হাসান প্রমুখ।

এ সময় রমজান মাসে যে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল বাজার থেকে সরিয়েছেন, যে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেট করে বসে আছেন তাদের আল্লাহর জাহান্নামের আগুনকে ভয় করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন সেলিম উদ্দিন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, "বাংলাদেশে কোনো জিনিসের উৎপাদন সংকট নেই। যেসব পণ্যে দাম বাড়ানো হচ্ছে একটিরও সংকট নেই, আপনারাই সিন্ডিকেট করে সংকট তৈরি করছেন।"

রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হয়ে যারা চাঁদাবাজি করে, তারা মানবতার দুশমন বলে মন্তব্য করে সেলিম উদ্দিন বলেন, "কিছু রাজনৈতিক দলের গুন্ডা-পান্ডা। যারা চাঁদাবাজি করেন-তাদের চাইতে বড় মানবতার দুশমন আল্লাহর জমিনে আর নেই।"

সেলিম উদ্দিন বলেন, "শেখ হাসিনা ও তার দল স্বীকার করেছে, বাজার আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। তারা এমন একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বানিয়েছিল, যাদের তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।"

সেলিম উদ্দিন বলেন, "এ সরকার রাজনৈতিক নয়, বহুল সমর্থিত সরকার। তারাও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আল্লাহর ভয় আছে এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দল-কর্মী ছাড়া আর কেউ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বিগত ৫৩ বছর যারা দেশ শাসন করেছেন, তারা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত আইন দিয়ে দেশ শাসন করার চেষ্টা করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত ও মুহাম্মদ সা. প্রদর্শিত বিধি বিধান দিয়ে শাসন করেননি।"

তিনি বলেন, "জামায়াতে ইসলামী এই ৫৩ বছরে ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের শিকার। দেশ পরিচালনাকারী তিনটি সরকার কেউই বলতে পারবে না, যে জামায়াতের ওপর খড়ক চালায়নি, নির্যাতন, নিপীড়ন করেনি, গলাকেটে লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিগত সরকারগুলোর এতো অত্যাচারের পরও জামায়াত সরকারে না থেকেও এ দেশের মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলামিক পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াত যে অবদান রেখেছে। বিগত সরকারগুলো আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুক, নিজেদের খতিয়ান নিক, তারা সরকারে গিয়েও দেশের জন্য কতটুকু করেছেন।"

তিনি আরও বলেন, "সরকারে না গিয়েও আমরা দেশের জন্য কি করেছি তা দেশের জনগণই সাক্ষী। কোথাও আগুন লাগলে সবার আগে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বা তার প্রতিনিধি সেখানে চলে যান। কোথাও বন্যা হয়েছে সবার আগে জামায়াত সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যায়।"

সেলিম উদ্দিন বলেন, "জামায়াত ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো করে না। মানুষের কল্যাণের জন্য এগুলো করে। আর যারা ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো করে, তারা এখনো হাজার হাজার বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা কামাই করতেছে, ভোট করার জন্য। চাঁদ রাতে এসে তারা চাঁদাবাজির টাকা বিলায়। নির্বাচনে পাস করে আসার পর আবার জনগণকে শোষণ করেন তারা।"

তিনি বলেন, "দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পেতে হলে আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দিতে হবে, কাকে ভোট দিলে দুর্নীতি দূর করতে পারবেন, তা জনগণকে ভাবতে হবে। যারা আজন্ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তাদের যদি আবার এমপি বানান তাহলে তার সমস্ত দুর্নীতির দায় ভোট দাতার।"

শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "আমাদের দেশে সবচেয়ে দানবীয় সরকার ছিল হাসিনার সরকার। এই হাসিনার ভাবখানা এমন ছিল দিনকে রাত ও রাতকে দিন বানাবে। সে যা বলবে তাই হবে।"