কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদ সদস্য আকতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজের বিরুদ্ধে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরকারকে ফাঁকি দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বড়উঠানের শাহমীরপুর এলাকায় অল্প পরিসরে উৎপাদানে যায় অরবিট ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড নামে ওষুধ কারখানাটি। যার ৩০% শেয়ার নিয়ে ডিরেক্টর হিসেবে মালিকানা নিয়েছিলেন আকতার উদ্দিন পারভেজ । স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪০ হাজার বর্গফুটের একটি ভবন নির্মাণে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্স দেয়নি। এর ফলে দুই কোটি দশ লাখ টাকা সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে।তিনি সেরিমেছান গ্রুপ ও অরবিট ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান।
আকতার উদ্দীন মাহমুদ পারভেজ ২০২০ সালে কোম্পানীটির নাম পরিবর্তন করেন। অরবিট ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড এর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটির নাম করণ করেছিলেন এভারক্স ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। কিন্তু ৮বছরেও উৎপাদনে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৮ বছর উৎপাদনে না থাকলেও ভ্যাট ফাঁকি, লাইসেন্স নবায়নের সময় আরোপিত নানাবিধ শর্ত ভঙ্গ ও অনিয়মের অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে।
এনবিআর এর তথ্যানুযায়ী টীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধান আরও জানা যায়, এলাকায় একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত, পাশাপাশি মালয়েশিয়াতে অর্থ পাচারে জর্জরিত ছিলেন আকতার উদদীন মাহমুদ পারভেজ, এসব কালো টাকায় কুয়ালালামপুরে অনেক সম্পদের মালিকও হয়েছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এভারক্স ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের ভবন নির্মাণেও মিলেছে একাধিক অনিয়মের দৃশ্য, ২০১৬ সালে দুই তলা বিশিষ্ট ভবনের অনুমতি নিয়েছিলেন অরবিট ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড যার আনুমানিক আয়তন ছিল ১০-১২ হাজার বর্গফুট,কিন্তু ২০১৭/১৮ সালে কারখানার নকশা জালিয়াতি করে ১৮-২০ হাজার বর্গফুটের ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনে পরিণত করেন,পরবর্তীতে ২০১৯সালে কারখানা আয়তন গিয়ে দাঁড়ায় ৩০-৩৫ হাজার বর্গফুটের ৫তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে,পরে আবারও মূল কারখানার সাথে একটি ২তলা বিশিষ্ট "এল শেপ" তৈরি করা হয়,যার আয়তন ১০-১৫ হাজার বর্গফুট, সব'শেষ ২০২০ সালে কারখানার মোট আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার বর্গফুটে,দৃশ্যমান হয় ৫তলা ও ২তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন, এসব ভবনের কোনটাই কোম্পানির টেক্স ফাইলে দেখানো হয়নি, বিষয়টি বেশ কিছুদিন আগে সার্কেল -৭৩, টেক্স জোন -০৪ কর্তৃক প্রেরিত অনুসন্ধান দলের নজরে আসলে এসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে আসে বলে জানতে পারেন টীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধান টিম।
ভবনের নকশা জালিয়াতি করে এবং সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আকতার মাহমুদ পারভেজ ৫ আগষ্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।