× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গণপরিবহন সংকট ও যানজট, মানুষের সময়-জীবন উভয়ই নষ্ট

ড: তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব, এবং দাউদ ইব্রাহিম হাসান

২০ মে ২০২৫, ১৯:৩৯ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

ঢাকা শহরের চৌকস রাস্তায় চলতে চলতে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা কি কখনও এই ট্রাফিকের জট থেকে বেরোতে পারব? গাড়ির শব্দ, মানুষ ও যানবাহনের হট্টগোল—এ যেন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন অফিসে যাওয়ার পথে আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম এক কর্মীকে যিনি ৩ ঘণ্টা ট্রাফিকে আটকে ছিল, কিন্তু তবুও কাজে যেতে পারছিল না। তার চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। এই দৃশ্যটি আমাকে এক অন্য ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি করিয়ে দিল—গণপরিবহন সংকট এবং যানজট আমাদের সময় ও জীবন উভয়ই নষ্ট করছে। এই সমস্যা শুধু এক ব্যক্তির জন্য নয়, এটি পুরো শহরের জন্য এক অভিশাপ। প্রতিদিন মানুষের শ্রম ও সময় নষ্ট হচ্ছে, আর তাতে দেশের উন্নয়ন পথেও চরম বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।


“বাসের ছাদে ঝুলে থাকা, ঘামে ভেজা ক্লান্ত মুখ,
              রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকা, স্বপ্নগুলো হয় যেন নিশ্চুপ
 চাকা ঘোরে, সময় থামে, বাড়ে শুধু অপেক্ষার ব্যথা,
পথের শেষে নেই যে গন্তব্য, ক্লান্ত পথিকের অনন্তকালের যাত্রা?”

গণপরিবহন সংকট এবং যানজটের মূল কারণ গুলি বেশ জটিল। পরিকল্পনাহীন রুট ব্যবস্থাপনা, অপ্রতুল যানবাহন এবং অপর্যাপ্ত সড়ক ব্যবস্থা এই সমস্যাগুলোর জন্ম দিয়েছে। ঢাকা শহরের উদাহরণ দিয়ে বলি—যেখানে বাসের রুট রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এক বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মানুষের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তারপর আবার ভিড়ের মধ্যে জড়িয়ে যানজটের শিকার হতে হয়। ট্রাফিক সিগন্যালের অদ্ভুত অবস্থা, অসংখ্য গাড়ি এক সাথে রাস্তার মাঝখানে আটকে থাকে—এসব কিছুর সম্মিলিত প্রভাব মানুষের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। শুধু কর্মজীবী মানুষই নয়, শিক্ষার্থীরা, ব্যবসায়ীরা, এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এই সংকটের শিকার হচ্ছে। এখানে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং সরকারের পরিকল্পনার অভাব প্রকাশ পায়। সমস্যাগুলো সাধারণভাবে চোখে পড়ে, তবে এর গভীরে যেতে গেলে বোঝা যায়—এই সংকটের পরিণতি কতটা ভয়াবহ।

যদি এই সমস্যা সমাধান না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হবে। একদিকে যেমন যানজটের কারণে কর্মক্ষম সময় নষ্ট হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতিও বাড়বে। অনেক ব্যবসায়ী কর্মচারীদেরকে সময়মতো কাজে আসতে পারছেন না, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেন না, এবং সামগ্রিকভাবে মানুষ সমাজে সামাজিক যোগাযোগ ও মানসিক প্রশান্তি হারিয়ে ফেলছে। যদি ট্রাফিক ব্যবস্থা এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশে ভোক্তাদের চাহিদার ওপরও চাপ পড়বে, অর্থনীতির গতিপথও বদলে যাবে। ২০২০ সালে হাসান তার গবেষণা পত্রে বলেছেন যে গণপরিবহন সংকট শুধু এক দিন বা এক মাসের সমস্যা নয়, ভবিষ্যতে পুরো দেশের কার্যক্রমের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার মডেল আমাদের সামনে একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে যদি উদ্যোগমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাঁর উদ্যোগ গ্রামীণ ব্যাংক, যেখানে তিনি অর্থনৈতিক সংকটে পড়া মানুষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করেছিলেন, তেমনই পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও তিনি ছোট উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সৃজনশীল সমাধান এনেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ছোট ছোট উদ্যোগগুলো একত্রিত করে বৃহত্তর পরিবর্তন আনা সম্ভব। তার উদ্যোগের মতো কিছু প্রকল্প দেশের শহরের সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে পারে। স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা যদি তার মডেল অনুসরণ করে ছোট রুটে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তবে ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।

যত দ্রুত সম্ভব আমরা যানজট ও গণপরিবহন সংকটের সমস্যাটি সমাধান না করলে, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো। এই সমস্যা দূর করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি। ডঃ ইউনূসের মতো সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব, এবং ভবিষ্যতে উন্নত শহরের বাস্তবতায় আমরা সবাই বসবাস করতে পারব। শুধু ধৈর্য নয়, কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই সমস্যাটির সমাধান করতে সক্ষম হবো। "আমরা যদি একযোগভাবে কাজ করি, তবে কোনো সমস্যা অজেয় নয়—একটি সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।"

সংক্ষিপ্ত জীবনী :

ড: তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব : বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে, তিনি ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পাহাং থেকে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন, যেখানে তিনি ডক্টরাল স্কিম স্কলারশিপও পেয়েছিলেন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি সেইন্স মালয়েশিয়ায় পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তিনি প্রযুক্তিগত ছোট ও মাঝারি শিল্পে (SMEs) উদ্ভাবনী এবং কৌশলগত বাণিজ্যের ব্যবহার ক্ষেত্রে কাজ করেছেন।

দাউদ ইব্রাহিম হাসান : আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি-এর মার্কেটিং বিভাগের একজন সদস্য, মার্কেটিং এবং সিআইএম বিভাগের সাম্প্রতিক স্নাতক সম্পূর্ণকারী, যিনি ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট তৈরি এবং ডেটা বিশ্লেষণে গভীর আগ্রহী। তিনি 'গুগল অ্যানালিটিক্স', 'হাবস্পট', 'মেইলচিম্প', 'এসকিউএল' এবং 'পাওয়ার বিআই' ব্যবহার করে কার্যকর মার্কেটিং কৌশল তৈরিতে দক্ষ। ‘এআই’, ‘টেকসইতা’, এবং ‘উদ্যোক্তা’ বিষয়ে তাঁর গবেষণা সম্মেলন এবং জার্নালে স্বীকৃত হয়েছে। ‘শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট, তিনি সর্বদা নতুন জিনিস শিখতে এবং উন্নতি করতে আগ্রহী। সৃজনশীলতা এবং তথ্য-কেন্দ্রিক মনোভাবের মাধ্যমে, তিনি ডিজিটাল বিশ্বে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে প্রস্তুত।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.