মাঘী
পূর্ণিমা হল মাঘ মাসের
পূর্ণিমা তিথি। এই দিনটি হিন্দু
ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীর কাছেই একটি পবিত্র উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এটি শুধু একটি তিথি নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক মিলনক্ষেত্র,
যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন
দেখা যায়।
পৌরাণিক
কাহিনী অনুসারে, এই দিনে দেবতারা
মর্ত্যে নেমে এসে গঙ্গা সহ অন্যান্য পবিত্র
নদীতে স্নান করেন। তাই এই দিনটিতে নদীতে
স্নান করা অত্যন্ত ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে প্রয়াগের ত্রিবেনী সঙ্গমে স্নান করা এই দিনের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ আচারগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে
এখানে স্নান করলে মানুষের সকল পাপ ধৌত হয় এবং মোক্ষ লাভ হয়।
মাঘী
পূর্ণিমা শুধু স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই দিনটিতে দান
করা, দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং ধর্মীয় কাজকর্ম করা অত্যন্ত পূণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়। অন্নদান, বস্ত্রদান এবং অন্যান্য দান করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
এই দিনে অনেকেই উপবাস রাখেন এবং বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর পূজা
করেন। এটি আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি বিশেষ সময়, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও ঈশ্বরের প্রতি
ভক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করে।
বৌদ্ধ
ধর্মাবলম্বীদের কাছেও মাঘী পূর্ণিমা একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতে, এই পূর্ণিমা তিথিতে
তথাগত বুদ্ধ তার ভিক্ষু সংঘের কাছে নিজের মহাপরিনির্বাণ দিবস ঘোষণা করেন। অর্থাৎ তিনি মাঘী পূর্ণিমা দিবসে ঘোষণা করেছিলেন, ওই দিন থেকে
তিন মাস পর শুভ বৈশাখী
পূর্ণিমা তিথিতে স্বীয় দেহত্যাগ করবেন। আর সেটাই হয়েছিল।
এ কারণে এদিন সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী
বুদ্ধের কথিত অনিত্য ভাবনা করে, ইহকাল ও পরকালের সুন্দর
জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য ধ্যান সমাধি করে এবং জীবনকে শীলময়, ভাবনাময় ও বিশুদ্ধিপূর্ণ করার
জন্য কঠোর সংকল্পে ব্রতী হয়।
সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিরা জানান, আজ সন্ধ্যা ৭টা
২৫ মিনিটে এই তিথি শুরু
হবে, আর শেষ হবে
১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে।
মাঘী
পূর্ণিমা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ধর্ম, বর্ণ,
জাতি নির্বিশেষে আমরা সবাই এক এবং আমাদের
সকলেরই উচিত একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা দেখানো।
এই পূর্ণিমার পবিত্রতা আমাদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে
আসুক।