ছবিঃ সংগৃহীত।
চা গরম! চা গরম! আইসড টি, মালাই চা, চকলেট চা, মশলা চা আরও হরেক রকম চায়ের ভীড়ে যাদের পছন্দ শুধুই এক কাপ গরম গরম চা! তাদের জন্য শুভ দিন আজ, ওয়ার্ল্ড হট টি ডে, বা বিশ্ব গরম চা দিবস!
আজ ১২ জানুয়ারি
‘গরম চা দিবস বা ‘হট টি ডে' । ১৯৫০ যুক্তরাষ্ট্রের চা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর
এই কাউন্সিল ২০১৬ সালে ‘গরম চা দিবস' বা ‘হট টি ডে' এর প্রচলন শুরু করে।
গরম
চায়ের আছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস। যা প্রায় ৫
হাজার বছর আগের। চা নিয়ে একটি
গল্প প্রচলতি আছে- একজন চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নীচে বসেছিলেন। তখন কিছু কিছু শুকনো পাতা ওই কাপে এসে
পড়ে। পরে সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হন। এভাবে গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও এই গল্প কতটা
সত্যি তা বলা মুশকিল।
কিন্তু, এটাতো সত্যি কথা যে- শত শত বছর
ধরে মানুষ গরম চা পান করে
আসছেন।
বছরের
পর বছর ধরে চা নিয়ে নানান
গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গরম পানির সঙ্গে গুল্ম ও পাতা মিশিয়ে
পান করা হয়েছে। কিন্তু চায়ের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ গরম পানির সঙ্গে কয়েক টুকরো চা পাতার মিশিয়ে
পান করা। এই পাতা ক্যামেলিয়া
সাইনেনসিস উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এশিয়ায় গরম চা পান শুরু
হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। আর ষোড়শ শতাব্দীর
আগে ইউরোপে চা প্রবেশ করতে
পারেনি।
বাংলাদেশিদের
চায়ের অভ্যাস শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামল থেকে। তখন স্থানীয় বাজারে চায়ের খুব বেশি চাহিদা
ছিল না। বাগানের উৎপাদিত বেশিরভাগ চা ব্রিটেন রপ্তানি হতো। এছাড়া তখন এ অঞ্চলে থাকা
ব্রিটিশ বা ইউরোপীয় লোকজন চা খেতেন, স্থানীয় অভিজাত গোষ্ঠীও চা খেতে শুরু করেছিলেন।
তখনো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চায়ের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়নি।
ব্রিটিশ
শাসনামলে ১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলে প্রায়
১৮ মিলিয়ন কেজির মতো চা উৎপাদিত হতো।
তার প্রায় ১৫ মিলিয়নই রপ্তানি
হতো, তিন মিলিয়ন কেজির মতো এখানে খাওয়া হতো। ১৯৭১ সালে সেই উৎপাদন এসে দাঁড়ায় ৩১ মিলিয়ন কেজিতে।
সুতরাং বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে চা খাওয়ার প্রতি
আগ্রহ বাড়ছিল, চায়ের উৎপাদনও বাড়ছিল। ১৮০০ শতাব্দীর প্রথমভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও আশপাশের এলাকায়
চা চাষ শুরু হয়।
তারই
ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে জমি বরাদ্দ হয়। চট্টগ্রাম শহরে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাবসংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত
হয়েছিল যা কুণ্ডুদের বাগান
নামে পরিচিত। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত
হয়।
পৃথিবীতে
কত জাতের চা আছে শুনলে
চমকে উঠবেন। সংখ্যাটা আনুমানিক ৩ হাজার। পানি
বাদ দিলে চা হলো পৃথিবীতে
বেশি পান করা পানীয়।
আজও
কফি, এনার্জি ড্রিংক বা অন্য কোনো
লোভনীয় পানীয় এ সম্পর্কে চিড়
ধরাতে পারেনি! তবে বাজারে এখন চা হরেক রকমের
পাওয়া যায়। দুধ চা, লেবু চা, কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনদের গ্রিন টি, ব্ল্যাক টির পাশাপাশি মানুষের মনে বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছে বাদাম চা, মালাই চা, পনির চা, মসলা চা, অপরাজিতা ফুলের চা, মাল্টা চায়ের মতো বৈচিত্র্যময় সব চা।
বাংলাদেশে
সবচেয়ে বেশি চা-বাগান আছে
মৌলভীবাজার জেলায়। এখানকার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও রাজনগরে অনেক
চা-বাগান দেখতে পাবেন। সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায়ও
চমৎকার ও ঐতিহ্যবাহী কিছু
চা-বাগান আছে। দেশের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়ার
অবস্থান সিলেট শহরেই।
ব্ল্যাক
টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি, ওলং টি—সব ধরনের
চা আসে ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের উদ্ভিদ থেকে। তাদের স্বাদ, চেহারা আর গন্ধে ভিন্নতার
কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা।
এতসব কাহিনী তো পড়লেন, এখন দেরি না করে দ্রুত এক কাপ গরম চা পান করে নিন!
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh