ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালন হয়। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস: সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার'।
সারাবিশ্বের
মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতার লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.
সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল
ডায়াবেটিস ফেডারেশনের দেয়া সংজ্ঞা মোতাবেক, ডায়াবেটিস এমন এক দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা
যার ফলে শরীর কার্যকরভাবে ইনসুলিন হরমোন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
সহজ ভাষায়,
ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা
অনেক বেশি বেড়ে যায়। এতে একবার কেউ আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্য তা বয়ে বেড়াতে
হয়।
তবে, খাদ্যাভাসে
পরিবর্তন ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা
সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে
একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুই জন নতুন ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়।
আইডিএফ ডায়াবেটিস
এটলাস বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান এবং তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়,
২০২১ সালে ৫৩.৭ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪.৩ কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮.৩ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
এবার বিশ্ব
ডায়াবেটিস দিবসকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের ৫টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা
হয়েছে। এগুলো হলো- ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীকে রোগ নির্ণয়ের আওতায় আনা। ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক
রোগীর রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা। ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী রক্তচাপ
সুনিয়ন্ত্রণে রাখা, ৬০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী, যাদের বয়স ৪০-এর বেশি তাদের স্ট্যাটিন
জাতীয় ওষুধ পাওয়া নিশ্চিত করা। শতভাগ টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীর কাছে ইনসুলিন ও অন্যান্য
সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
বর্তমানে
দেশের ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের ৭০ শতাংশের ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে নেই। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে এই রোগীদের কিডনি, চোখের রোগ, হৃদরোগসহ
আরও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। এতে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে।
দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের ৬১ শতাংশই জানেন না তারা এ রোগে ভুগছেন।
বাংলাদেশে
ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। পদক্ষেপ নিলে
এ রোগকে অনেক বিলম্বিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকরা বলছেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত
চারজনের তিনজনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর ডায়াবেটিস শনাক্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর চিকিৎসকের
কাছে আসায় অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও মুখে ইনফেকশনের মতো জটিল
রোগ দেখা দিচ্ছে। দুঃশ্চিন্তার বিষয় হল, এমন রোগীর বড় অংশই তরুণ।
নিউইয়র্কের
ওয়েল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের একটি গবেষণা বলছে, সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কোন ক্রমে
সেই খাবার খাওয়া হচ্ছে তার উপরেও রক্তের শর্করার পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে।
গবেষকদের
দাবি, কার্বোহাইড্রেট প্রথমে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ যতটা বৃদ্ধি পায় তার তুলনায়
আগে শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অনেকটাই কম থাকে রক্তে শর্করার মাত্রা। আগে
প্রোটিন ও শাক-সবজি খেলে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দু'ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা কম
থাকে যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ।
রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাস
নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস
দিবস' উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও
‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস' পালনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
ডায়াবেটিস
দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। এসব কর্মসূচির মধ্যে
রয়েছে রোড শো, বিনামূল্যে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, আলোচনা সভা, হ্রাসকৃত মূল্যে
হার্ট ক্যাম্প, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও ডায়াবেটিস সম্পর্কে
গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, ‘কান্তি’
ও ‘ডায়াবেটিস নিউজলেটার’-এর বিশেষ সংখ্যা, সচেতনতামূলক পোস্টার
ও লিফলেট প্রকাশেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি
‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস' উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh