চরফ্যাসনের মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও সাগর উপকূল থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন চর- চরাঞ্চলের জেলেরা অবাধে গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনু আহরণ করছে। চিংড়ির এ রেনু আহরণে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে নানা প্রজাতির জলজ প্রানী ও মাছের পোনা।
উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট, বেতুয়া স্লুইসঘাট, নতুন স্লুইস, সামরাজ মৎস ঘাট, হাজারিগঞ্জ আট কপাট, পাঁচ কপাট, মাইনুদ্দিন মৎস্যঘাট, খেজুরগাছিয়া, মাইনকা খালের মাথা, ঢালচরের সাগর উপকূলসহ তারুয়া চরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে প্রতিদিন চিংড়ির লক্ষ লক্ষ রেনুপোনা আহরণ করছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
অক্টোবরের শেষ সময় থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস চরফ্যাসনের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার নারী- পুরুষসহ জেলেরা মিলে চিংড়ি রেনু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রজনন মৌসুমে অবাধে চিংড়ি রেনুসহ অন্যান্য মাছ শিকার ও ক্রয় বিক্রয় করছেন জেলেরা। বেতুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রেনু আহরণকারীরা মশারি জাল ও ঠেলা জালে অন্যান্য মাছের পোনা ও জলজ প্রাণী ফেলে দিয়ে শুধু গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনু সংগ্রহ করছে।
প্রভাবশালী মহল চড়া দামে ক্রয় করে প্লাস্টিকের ড্রাম ও মাটির টালিতে করে খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোরের বিভিন্ন চিংড়ির ঘেরে অধিক মুনাফায় বিক্রি করছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের কতিপয় ব্যাক্তি প্রতি ট্রলার থেকে মাসিক চাঁদা কালেকশনের মাধ্যমে চরফ্যাসন উপজেলা থেকে জাটকা ইলিশসহ প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে লক্ষাধিক চিংড়ি রেনু পাচারে সহযোগিতা করছে।
আসলামপুর এলাকার মো. মৃদুল ইসলাম (১৯) জানান, বাগদা রেনু আহরণের জন্য প্রতিবছর এ মৌসুমে চলে আসেন, তিনি আরোও জানান, এক ইঞ্চি থেকে দুই ইঞ্চি বাগদা ও গলদা চিংড়ি রেনু একশত পিস ২ শত টাকায় মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন।
একই এলাকার বিবি আয়শা বেগম (৫০) বলেন, আমি ও আমার ছেলে প্রতিবছর রেনু আহরণ করে বিক্রি করি। অভাবের সংসার তাই বেড়িবাধের কিনারায় বাস করি। অবৈধ জেনেও পেটের দায়ে এ কাজ করছি।
নাজিম (২৯) বলেন, তিনি প্রতি বছরের এ মৌসুমে বেতুয়া, পুরান স্লুইস ও নতুন স্লুইসগেট এলাকায় চিংড়ির রেনু একশত পিস ৬০ থেকে ১শ টাকায় বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আড়তদার বলেন, চিংড়ির রেনু প্রতি পিস এক ইঞ্চি থেকে একটু বড় সাইজের রেনুগুলো ২ থেকে আড়াই টাকায় কিনলেও সব কিছু ম্যানেজ করে প্রতি পিস রেনুর দাম পড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে ধ্বংস করা হচ্ছে বিভিন্ন মাছের পোনা, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক বলেন, আমরা তথ্য পেলেই রেনু উদ্ধারসহ আসামিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে দেই। এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের কেউ যদি চাঁদা কালেকশন করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থ্যা নেয়া হবে।