× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে “বাসিয়া নদী”

মাহমুদ খান, সিলেট প্রতিনিধি।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:০৫ পিএম

ছবিঃ মাহমুদ খান

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী, যা একসময় খরস্রোতা ও প্রাণবন্ত ছিল। বর্তমানে নদীর দুই তীর দখল ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করার কারণে চরম সংকটের মুখে রয়েছে। ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০০ মিটার প্রস্থের এই নদীতে একসময় নৌকা, বড় বড় লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করত। কিন্তু এখন শুকনো মৌসুমে সামান্য পানিও থাকে না, ফলে নদীটি একটি মৃতপ্রায় খালে রূপ নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসিয়া নদীর উৎপত্তি সুরমা নদী তীরবর্তী মাসুকগঞ্জ বাজার থেকে, যা সিলেটের জালালাবাদ থানায় অবস্থিত। এটি দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও জগন্নাথপুর উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে রাণীগঞ্জের স্বাধীন বাজারে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই পাঁচটি উপজেলার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বাসিয়া নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নদীর উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নদীর দুই তীর দখল ও ভরাট করার কারণে সুরমা নদী থেকে পানির প্রবাহ বাসিয়া নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এর ফলে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীটি প্রায় শুকিয়ে গেছে।

বিশেষত মাসুকগঞ্জ বাজারে নদীর উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়ায় ও বিশ্বনাথ, ওসমানীনগরসহ অন্যান্য এলাকায় নদীর দুই তীর দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বসতবাড়ি ও বিপণিবিতান নির্মাণ করার ফলে নদীর প্রস্থ সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে করে নদীর পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে নদীটি সরু খালের আকার ধারণ করেছে। একসময় এই নদী দিয়ে নিয়মিত নৌযান চলাচল করত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল, কিন্তু এখন এটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাসিয়া নদী দখল ও দূষণের বিষয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর ফলে দখলদাররা দিন দিন আরও সাহসী হয়ে উঠেছে এবং নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। শুকনো মৌসুমে নদীটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর নাব্যতা না থাকার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই তা বন্যায় রূপ ধারণ করে। এছাড়াও ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে অতিষ্ঠ হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এদিকে বিশ্বনাথে নদীর দুই তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮৬ জনের নামে মামলা করা হয় (মামলা নং ০৪/২০১৭)। কিন্তু প্রায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। মামলা চলমান থাকলেও দখলদাররা হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন, যার কারণে চলমান মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছেনা। এতে স্থানীয়রা হতাশ। তারা অভিযোগ করছেন, প্রশাসনের উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

পরিবেশবিদ ও স্থানীয় জনগণ বাসিয়া নদী পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনঃস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, এই নদীটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাসিয়া নদী যদি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা না হয়, তাহলে এই অঞ্চলের জলবায়ু ও পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। 

নদীর সেই পুরোনো গৌরব ফিরে পেতে হলে অবিলম্বে ‘বাসিয়া নদী’ পুনঃখনন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ফজল খান বলেন, বিশ্বনাথসহ আশপাশের উপজেলাগুলোর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই বাসিয়া নদী। তবে অবৈধ দখল, নদীর বিভিন্ন জায়গায় ভরাট ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খরস্রোতা এই নদীটি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। তাছাড়া পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতি দ্রুত নদীর উৎস মুখ ও কুশিয়ারা নদীর মিলিত স্থান সহ সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া নদীর অনেক জায়গায় ভরাট হয়ে গেছে, সে অংশে খনন করা জরুরি। তা না হলে পানি নিষ্কাশনের অন্য কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।

বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনন্দা রায় বলেন, যেহেতু মামলা চলমান রয়েছে এবং হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে সেটি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  যদি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার কোনো সুযোগ থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই করা হবে। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, মামলা ও রিট পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া নদী দখল মুক্ত করার জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.