দেশে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। উন্নত তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিলুপ্তপ্রায় কৃষিপণ্য চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে। এক সময় দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে কাউন আবাদ হতো। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গের প্রায় বেশ কিছু এলাকায় কাউনের আবাদ হতো। আবার এক সময় গরিবের প্রধান খাদ্যও ছিল এ কাউন।
দিনের পর দিন মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এখন আর সেভাবে এসব অঞ্চলে কাউন চাষ হয় না। কাউনের জায়গা দখল করে নিয়েছে বাদাম, ভূট্টা, বোরো ধানসহ বিভিন্ন প্রকার অর্থকারি ফসল। কালের আবর্তে কাউন চাষ হারিয়ে গেলেও বর্তমানে উন্নত তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উঁচু জমিতে বাদামের সাথে কাউন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের মো. রেজানুর ইসলাম রেজা নামে এক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন জার্নালের মাধ্যমে স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন তিনি।
উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারিপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. রেজানুর ইসলাম রেজা প্রথমবারের মতো প্রায় সাড়ে ৩ একর উঁচু জমিতে বারি-৬ জাতের বাদাম আবাদ করেছেন। এরমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় একর জমিতে বাদামের সাথে তিতাস জাতের কাউন চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার কৃষি খাতকে স্মার্ট কৃষি হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সরকারের এই উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন জার্নালের কলাম পড়ে বাদামের সাথে কাউন চাষ শুরু করি। কৃষিতে পূর্ব ধারণা না থাকায় বিষয়টি আমার জন্য কঠিন ছিল। বাদাম এবং কাউন একসাথে চাষ করা তেমন সহজ ছিল না। এলাকার কৃষকরা তেমন একটা উৎসাহ জোগায়নি। তবে আমি কিন্তু নিরাশ হইনি এবং থেমেও যায়নি।
বাদামের সাথে কাউন চাষে খুব স্বল্প খরচেই করা সম্ভব। একই সাথে চাষ করার ফলে সেচ অনেক কম লাগে। খুব একটা রোগবালাই না থাকলেও ইঁদুরে উপদ্রবে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আগে থেকে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের কম দামে পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ একর জমিতে বাদাম চাষে সব মিলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাদামে প্রতি বিঘায় ১২-১৪ মণ এবং কাউনে প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ সফল হবে বলে আশা করেন। বর্তমান বাজার হিসাবে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা আয় হতে পারে বলে আশা করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাদামে সাথে কাউন চাষে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। এটি চাষাবাদে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তবে এই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তার এই উদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখেছে। তার সফলতা আমাদের কৃষকদের উৎসাহিত করবে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সহ উত্তরাঞ্চলে এক সময় প্রচুর কাউন চাষ হতো। কাউন চাষ তেমন দেখা না গেলেও কাউনের চালের নানা ধরনের খাবার ধনীদের বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে।