দিনাজপুর বীরগঞ্জে চলতি মৌসুমে ভুট্টাচাষে বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা। ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টাচাষে স্বল্প খরচ এবং অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক ঝুঁকছেন ভুট্টাচাষে। বাজারদর ভালো পেলে এবার মুখে হাসির ঝিলিক ফুটবে এমনটাই প্রত্যাশা ভুট্টাচাষিদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মোহনপুর, মরিচা পলাশবাড়ি, মোহাম্মদপুর, নিজপাড়া, শতগ্রাম, শিবরামপুর, সুজালপুর, পাল্টাপুরসহ সব ইউনিয়নেই ব্যাপকহারে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক আগাম জাতের ভুট্টাচাষ করেছেন। আগাম জাতের এসব ভুট্টা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই তারা বিক্রি করতে পারবেন। আর কিছু ভুট্টা পরিপক্ব ও বিক্রির উপযোগী হতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লাগতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলাজুড়ে সর্বমোট ১২ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছরে ছিল ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ভুট্টা চাষী এন্তাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও আগাম পাওনিয়ার ৩৩৫৫, পুনর্ভবা ৩৫৫৫, কাবেরি-৫ জাতের ৯ বিঘা ভুট্টা চাষ করেছি। কারণ, আগাম ভুট্টার চাহিদা বেশি ও দামও ভালো পাওয়া যায়। আমার প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে জমি তৈরি, সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরি ও সেচসহ সর্বমোট ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, যদি দাম ভালো থাকে তাহলে, প্রতি বিঘা ৬০-৭০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারব।
একই ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর প্রথমবারের মতো ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গত বছরে ধান চাষ করেছিলাম, তেমন লাভবান হতে পারি নাই। তাই অধিক লাভের আশায় এ বছর ভুট্টাচাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং কোনো প্রকার রোগবালাই নেই, আশা করছি ভালো দামে ভুট্টা বিক্রি করতে পারব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, অধিক লাভের আশায় বীরগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টার চাষ। অধিকাংশ কৃষকরা আগাম ভুট্টাচাষ করেছে, কারণ আগাম ভুট্টা চাষে ফলন বেশি এবং দামও ভালো থাকে। তাই কৃষকরা আগাম ভুট্টাচাষে সাবলম্বী হচ্ছেন। আর ভুট্টাচাষের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।
বীরগঞ্জে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল
সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালুগাছ। প্রতিটি গাছের গা থেকে যেন হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে। সোনালু ফুল প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে অপরূপ ডানা মেলে সেজেছে নতুন রূপে। যার হলুদ উজ্জ্বল রূপ পথগুলোকে শোভিত করেছে। তীব্র গরম আর কাঠফাটা রোদে হলুদের অপরূপ দৃশ্য যেন ক্লান্ত পথিকের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। হলুদ ফুলের চোখ-জুড়ানো অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার, যা সবার মনে দাগ কেটে যায়।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় পথেঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় সোনালু ফুল। যার অপরূপ সৌন্দর্য আলোকিত করছে চারপাশ।
এই গাছটি গ্রীষ্মের প্রকৃতির সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ দখল করে রাখে। এমনকি বসন্তেও এর ফুলেল রূপ দেখা যায় না। সমস্ত বসন্ত হলো এর প্রস্তুতি কাল। পুরোটা বসন্ত প্রস্তুতি নিয়ে বৈশাখের শুরুতে, ইংরেজি এপ্রিল/মে মাসের দিকে এই হলুদ সোনালু ফুল ফোটা শুরু হয়। এর হালকা মিষ্টি সুবাস প্রজাপতি, মৌমাছি, পাখিদেরও কাছে ডেকে আনে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ পূর্ব এশিয়ায় এই গাছটির দেখা মেলে। সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও সোনালুগাছের পাতা ও বাকল বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন। সোনালুর ফল লাঠির মতো গোল ও আকারে বেশ লম্বা হয়। তা ছাড়া ফুল, ফল ও পাতা বানরের খুব প্রিয়। গাছটি ১০ থেকে ২০ মিটার উচ্চতার হয়। এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
একসময় বীরগঞ্জ উপজেলার পথে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে অসংখ্য সোনালুগাছ চোখে পড়ত। কয়েক দশকের ব্যবধানে তার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। উপজেলার ৫ নম্বর সুজালপুর, ১১ নম্বর মরিচাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, পথের ধারে, ঝোপঝাড়ে এখনো কিছু সোনালুর গাছ চোখে পড়ে। এ গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম হয়। বেড়ে ওঠার সময় তেমন চোখে না পড়লেও ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সবার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়, প্রশান্তিতে হৃদয়-মন ও চোখ জুড়িয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, সোনালুগাছগুলো পরিবেশের জন্য উপকারী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এর ফুল চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় শোভাবর্ধনকারী হিসেবে পরিচিত। এই গাছ থেকে ভালো মানের কাঠও পাওয়া যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh