× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বরকতময় পবিত্র শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

হাসান মাহমুদ রাজীব

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৭ পিএম । আপডেটঃ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৭ পিএম

মহান আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা মুসলিম উম্মাহকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। তাই তিনি তাঁর প্রিয় বান্দার গুনাহসমূকে ক্ষমা করার জন্য অনেক ধরনের সময় ও সুযোগ দিয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ তাআলা এমনকিছু বরকতময় দিন ও রাত দিয়েছেন যাতে ইবাদত করলে তাঁর নৈকট্য লাভ করা বান্দার পক্ষে সম্ভব।

এর মধ্যে পবিত্র শবে বরাত একটি। হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। শাবান মাসে শবে বরাতের পরই পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। তাই শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

শবে বরাতের পরিচয়

শবে বরাত শব্দ দুটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। বরাত আরবি ‘বারাআতে’র সমশব্দ। যার অর্থও মুক্তি।  ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সারারাত মুসলমানরা শবে বরাত পালন করবেন। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত। কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ১-৫)। 

একাধিক হাদিসে রাতটিকে বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে উদ্ধুব্ধ করা হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিনগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও...।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)

কিন্তু আমাদের সমাজে এ রাতের ইবাদতকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রমাণিত বিষয়াদিরও প্রচলন রয়েছে। যেমন, শবে বরাতের বিশেষ নামাজ। যে নামাজে নির্দিষ্ট কিছু সুরা ও দোয়া পড়তে হবে, নির্ধারিত কিছু সুরা একাধিকবার পড়তে হবে এবং এ রাতের রোজাকে আবশ্যক মনে করা ইত্যাদি। যেগুলোর কোনোটিই সহি হাদিস দ্বারা প্রামাণিত নয়। 

শবে বরাতের ফজিলত

শবে বরাতের ফজিলত বিষয়ে এ হাদিসটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও গ্রহণীয়। এ রাতের সব ফজিলত এ একটি হাদিসের মাধ্যমেই বুঝে আসে। এ রাতের প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তাওবাকারীকে ক্ষমা করে দেবেন, অভাবীকে রিজিক দেবেন, বিপদগ্রস্তকে বিপদমুক্ত করবেন।

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) এর ভাষায় কোনো এক শাবান মাসের অর্ধরাতে নবী করীম (সা.)কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি নামাজে দাঁড়ানো এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না?

নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

কবর জিয়ারত করা 

এ রাতে মহানবী (সা.) জান্নাতুল বাকিতে উম্মতের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা এ রাতে আমি মহানবী (সা.)-কে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকি। এরপর আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দুহাত তোলা অবস্থায় পেলাম।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)। এ থেকে আমরা এ রাতে কবর জিয়ারতের বিষয়টি সাব্যস্ত করতে পারি। 

বিশেষ দোয়া করা

রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রাসুল (স.) একটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই দোয়াটি আমরা পুরো রজব-শাবানে পড়তে পারি। দোয়াটি হলো: اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (স.) এই দোয়া পাঠ করতেন। (বায়হাকি: ৩৫৩৪; নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)

শবে বরাতে ক্ষমা প্রার্থনা করা

এই রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ বরকতময় এই রাতে আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে নেমে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গুনাহ মাফ করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত আগমন করে তখন আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৮০) আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফজিলতপূর্ণ এ রাতকে যথাযথভাবে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করেন। আমিন। 

শবে বরাতে করণীয়

শবে বরাতে (ক) নফল নামাজ ১. তাহিয়্যাতুল অজু, ২. দুখুলিল মাসজিদ, ৩. আউওয়াবিন, ৪. তাহাজ্জুদ, ৫. ছলাতুত তাসবিহ, ৬. তাওবার নামাজ, ৭. ছলাতুল হাজাত, ৮. ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ ইত্যাদি পড়া ভালো।

শবে বরাতে (খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। (গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা; (ঘ) কোরআন শরিফ- যেমন: সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা; (ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; (চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; (ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা; (জ) কবর জিয়ারত করা; (ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।

শবে বরাতে বর্জনীয়

শবে বরাতে (১) আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, (২) ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা না করা, (৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস না করা, (৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ না করা, (৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন না ঘটানো, (৭) হালুয়া-রুটি বা খাওয়া-দাওয়ার পেছনে বেশি সময় নষ্ট না করা। লোকমুখে প্রচলিত আছে- শবে বরাতের কাই কার ঘরে নাই। আসলে এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। কারণ হালুয়া-রুটির সঙ্গে এ রাতের কোনো সম্পর্ক নেই। 

একাকী নফল ইবাদতের গুরুত্ব

শবে বরাতের রাতে একাকি যত বেশি ইচ্ছা নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াতসহ জিকির-আজকার, ইস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিল পড়া যাবে। দলবদ্ধ হওয়া ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতেও কোনো সমস্যা নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন।

শবে বরাত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত। এ রাতে আল্লাহ পাপী বান্দাদের মুক্তি দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কেননা এদিন সূর্যাস্তের পরই আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছো রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ কথা বলতে থাকেন।’ (ইবন মাজাহ : ১৩৮৮)।

অবশ্যই করণীয়

তবে এতোসব নফল ইবাদতের মধ্যে কোনোভাবেই যেন ফরজ তরক না হয় এবং জামাতে নামাজ ছুটে না যায় সেদিকে অবশ্যই অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামাজ চেষ্টা করবো মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করতে। হজরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করলো তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদ আহমাদ ৫/২৩৮)

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের সবাইকে শবে বরাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত সম্পর্কে জানা, বোঝা ও সেই অনুয়ায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। বিদআত- হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র থাকার তাওফিক দান করুন। পবিত্র শাবান মাসজুড়ে নফল রোজা, দীর্ঘ নফল নামাজ, দান-সদকা, তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.