প্রাকৃতিকভাবে ফরিদপুর জেলার মাটির উর্বরতা ধান চাষের জন্য উপযোগী। ফরিদপুরে চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে ধানের সোনালী শীষ আর এই দুলায় লুকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ চাষির রঙিন স্বপ্ন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি বছরে ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭৮০০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। আমন ধানের মধ্যে ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৩৯ ও বিনা ধান ১৭ অল্প খরচে ফলন ভালো হওয়ায় ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষকরা বেশি চাষাবাদ করছে। এবছর শুধুমাত্র আগাছা পরিষ্কার আর সামান্য পরিমাণ সার ব্যবহার করে আগাম ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে এ অঞ্চলের চাষিরা।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল মাতুব্বর (৫৫) বলেন, এই বছর ঝড় বৃষ্টি কম হওয়ায় অন্য অন্য বছরের তুলনায় এবছর আমন ধান ভালো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে ও পোকামাকড়ের উপদ্রব না হয় তাহলে এ বছর কৃষকরা ধান রাখার জায়গা পাওয়া কষ্ট হবে। আশা করতেছি এবছর প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ মন ধান পাবো।
ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল মুন্সি (৬৭) বলেন, চলতি বছরে আমাদের এলাকায় অতিবৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমন ধানের খুব ভালো আবাদ হয়েছে। মাজরাপোকা সহ অন্যান্য প্রকার আক্রমণ হতে রক্ষা পেলে আমন ধান চাষ করে এবছর কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ২০-২৫ মন আমন ধান উৎপাদন হতে পারে যার বিপরীতে কৃষকের ৫-৮ হাজার টাকা সার, কীটনাশক ও পোকামাকড়ের বালাইনাশক ঔষধ বাবদ উৎপাদন খরচ হতে পারে। সরকার নির্ধারিত প্রতি মন ধানের মূল্য ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও পোকামাকড়ের উপদ্রব না হলে এবছর ধান উৎপাদন করে এ অঞ্চলের কৃষকরা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারবে।
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, চলতে বছরে ভাঙ্গা উপজেলায় ৫২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি উন্নত ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদ করার জন্য। বিভিন্ন সময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি এছাড়া ধান রোপনের পরপরই সঠিক ভাবে লাইনের ধান রোপন, জাল পেতে দেওয়া পোকামাকড় দমনের জন্য সেই ব্যবস্থা গুলো কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছি এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা যারা আছেন তারা মাঠ পর্যায়ে সর্বদা যেকোন পরামর্শে ও রোগবালাই বা পরিচর্যার ক্ষেত্রে তারা কৃষকদের নিয়মিত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।