× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাহে রমজান শুরু

হাসান রাজীব

২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৯ এএম

শান্তি, সাম্য ও মানবতার একমাত্র চাবিকাঠি ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হলো রমজানের সিয়াম পালন। সংযম, আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ তথা তাকওয়ার মাস এই রমজান।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারেরা তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিও; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত- এই সাক্ষ্য দান করা যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ বা মাবুদ বা উপাস্য নেই, আর নিশ্চয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি, হাদিস: ৭, পৃষ্ঠা: ১৬)। 

মানবমুক্তির একমাত্র দিশারি পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস এই রমজান। রমজান মাস উপবাস পালনের মাস। যাতে ধনীরা অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারেন। কিন্তু আমরা রমজানকে ভোজের আয়োজনে পরিণত করি। পানাহারের প্রতি এত বেশি মনোযোগী হই, যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সামর্থ্যবানেরা এত বেশি বাজার করেন, এতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ পায় না, যা রমজানের শিক্ষার ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সহমর্মিতার এ মাসে আমাদের আশপাশে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী আছেন, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট ভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে (মুসলিম)।’ 

এদিকে দেশের কোথাও গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) হিজরি ১৪৪৪ সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। আর সংযমের মাস পবিত্র রমজান আজ শুক্রবার (২৩ মার্চ) থেকে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে রাতে তারাবির নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। এরপর ভোরে সেহরি খাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাখবেন প্রথম রোজা।

বুধবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি মো. ফরিদুল হক খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ঢাকায় প্রথম দিন সেহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৩৯ মিনিট। ইফতারের সময় ৬টা ১৪ মিনিট।

তবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বুধবার সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। সেখানে আজ প্রথম রোজা রাখছেন মুসলমানরা।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের মাস। রমজান রহমত (আল্লাহর অনুগ্রহ), মাগফিরাত (ক্ষমা) ও নাজাত (দোজখের আগুন থেকে মুক্তি)- এ তিন অংশে বিভক্ত। এ মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সহবাস ও যেকোনো ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেন মুসলমানরা। এ মাসের শেষ অংশে রয়েছে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম লাইলাতুল কদরের রাত। 

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন।

আজ রাতে মসজিদে মসজিদে তারাবি জামায়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে তাকওয়া, সংযম ও আত্মশুদ্ধির ইবাদত।

আমরা নিজেদের ধর্মপ্রাণ ভাবতে পছন্দ করি, কিন্তু ধর্ম প্রকৃত উপায়ে পালন করি না, বাস্তব জীবনে চর্চা করি না। আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতাদের উচিত এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা; তারাই পারেন সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রকৃত বার্তা বুঝতে সহযোগিতা করা। প্রকৃত বার্তা গ্রহণ না করে আমরা যদি ধর্মের ব্যাপারে কেবল আচার-সর্বস্ব থেকে যাই, তাহলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার আর ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করা কঠিনই হবে। 

বৈষয়িক প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা এবং সব ধরনের লোভের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করাই সংযম। এ মাসে যেখানে দরিদ্রের না খেয়ে থাকার কষ্ট, বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সম্পদ না থাকার কষ্ট বোঝার সাধনা করার কথা, সেখানে যদি ব্যবসায়ীরা কেবল বেশি মুনাফার লোভে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন, এই অসততা মেনে নেয়া যায় না। খাদ্যাভ্যাসে সংযমের পরিবর্তে আমরা দেখি ইফতারের বাজারের রমরমা বাণিজ্য; এতো চটকদার ইফতার আয়োজন কোনোভাবেই সংযমের পরিচয় বহন করে না। আর ভেজাল ও ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে সেসব খাবারকে বাহারি ও সুস্বাদু করার যে প্রবণতা ইফতারি বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা যায়, তা রোজাদারদের সঙ্গে কেবল প্রতারণাই নয়, রীতিমতো অপরাধ। আমরা ধর্মকে ভয় হয়তো পাই, কিন্তু ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করি না।

রমজান মাস উপবাস পালনের মাস। যাতে ধনীরা অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারেন। কিন্তু আমরা রমজানকে ভোজের আয়োজনে পরিণত করি। পানাহারের প্রতি এত বেশি মনোযোগী হই, যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সামর্থ্যবানেরা এত বেশি বাজার করেন, এতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ পায় না, যা রমজানের শিক্ষার ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সহমর্মিতার এ মাসে আমাদের আশপাশে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী আছেন, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। 

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট ভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে (মুসলিম)।’

আল্লাহর রহমত সর্বকালে সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে; পবিত্র রমজান মাসে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, তিলাওয়াত, দান–সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আসকার যাবতীয় ইবাদত অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জন সহজ হয়।

পবিত্র রমজানন মাসেই মুসলিম জাতির ওপর রোজা ফরজ করা হয়। যাবতীয় কামনা–বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে মহান আল্লাহ তায়ালার একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার চেষ্টায় রত হন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ মাসেই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ন হয় মানবমুক্তির সনদ পবিত্র কুরআন মাজিদ। মহান আল্লাহর করুণা ও অপার রহমত প্রাপ্তির সৌভাগ্য মেলে এ মাসে। পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির সুযোগ এনে দেয় রমজান। অন্য মাসের তুলনায় ইবাদতের সওয়াবও বাড়িয়ে দেয়া হয় বহুগুণে। শ্রেষ্ঠতম এ মাসে ইবাদাত-বন্দেগী করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ধাবিত হতে চান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, বিরত থাকেন যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে। এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে চলে তারাবির নামাজ। সুবহে সাদিকের আগে সাহরি খেয়ে পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার না করে সংযম পালন করেন মুসলমানরা। রাতে পড়েন তাহাজ্জুদের নামাজ।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি সদয় হোন যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায় আর স্ত্রী যদি উঠতে অস্বীকার করে তাহলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। আল্লাহ সে মহিলার প্রতি সদয় হোন যে রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং নিজের স্বামীকেও জাগায় আর স্বামী উঠতে অস্বীকার করলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। (আবু দাউদ)

এ মাসে এমন একটা রাত রয়েছে যা হাজার রাতের চাইতেও উত্তম। যে রাতের নাম লাইলাতুল কদর। মহান আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আমি কোরআন নাযিল করেছি কদরের রাতে।’ (সুরা কদর-১) ‘অবশ্য আমি কোরআন নাযিল করেছি একটি বরকতপূর্ণ রাতে’ (সুরা দুখান-৩)

লাইলাতুল কদরের রাতে যাতে আমাদের অগোচরে বিদায় হতে না পারে সে জন্য রমজানের শেষ দশদিনে ইতিকাফ করা হয়ে থাকে।

আয়শা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশদিনে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদরের সন্ধান কর।’ (বুখারি মুসলিম) 

আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিন শুরু হলে রাসুল (সা.) সারা রাত জাগতেন, নিজের পরিবারবর্গকেও জাগাতেন এবং (আল্লাহর ইবাদতে) খুব বেশি সাধনা ও পরিশ্রম করতেন।’ (বুখারী মুসলিম)

এ কদর রাতে আল্লাহতা’য়ালার দরবারে কি বলতে হবে তাও সরওয়ারে কায়েনাত, বিশ্বমানবতার মহান মুক্তির দিশারী, আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের সুন্দরভাবে শিখিয়েছেন।

এদিকে পবিত্র কুরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও যাতে কেউ বঞ্চিত না হন সেজন্য পবিত্র রমজান মাসে দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে খতম তারাবি পড়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পবিত্র কুরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও যাতে কেউ বঞ্চিত না হন সেজন্য রমজান মাসে খতমে তারাবিহ নামাজ পড়ার সময় সারা দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। রমজান মাসের প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে এক পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এভাবে ২৬ রমজান রাতে অর্থাৎ শবেকদরে পবিত্র কুরআন খতম হবে। রমজান মাস শেষেই আসবে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.