ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর মুনছুর আলী একাডেমি বিদ্যালয়ে জাল ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদে আবুল খায়ের নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে জাল সনদে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) হিসাবে ওই বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল খায়ের ২০০৮ সালে পাশ করা একটি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জমা দিয়ে ২০১০ সালে নিয়োগ দেখিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এরপর তিনি ২০১১ সালের পহেলা মে ১০৫৫৯৩১ ইনডেক্স নম্বরে এমপিওভুক্ত হন। নিয়োগ দানের সময় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন আমিন উদ্দীন। তিনি বর্তমানেও প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই জাল সনদে আবুল খায়েরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগের জন্য ২০/০৮/২০১০ ইং তারিখে আঞ্চলিক দৈনিক গ্রামের কাগজ ও ১৮/০৮/২০১০ তারিখে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক আবুল খায়ের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করেন। সে সময় ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ৭জন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিবন্ধন সনদ যাচাই বাছাই না করে সর্ব্বোচ্চ নম্বরধারী দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীনের যোগসাজশে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নওশের আলী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বোর্ড কমিটি কে ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবুল খায়েরকে নিয়োগ দেন। তৎকালীন সময়ে নিয়োগ বোর্ড কমিটিতে ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন,ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন, জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম ছায়েদুর রহমান, প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীন, ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যসহ মোট ছয়জন।
সূত্রটি আরও জানায়, আবুল খায়ের গত ২৫/০৯/২০১০ ইং তারিখের নিয়োগ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অত্র বিদ্যালয়ে "সহকারী শিক্ষক" পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭/০৯/১০ ইং তারিখে যোগদান করেন।
শিক্ষক নিবন্ধনের তথাকথিত ভুয়া কাগজ জমা দিয়ে চাকরি পাবার পরও ওই শিক্ষক এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল খায়েরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়োগের সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই করেছে। তাছাড়া এর আগেও একাধিকবার শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর থেকে সনদ যাচাই করেছে। সবাই সঠিক পেয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের জাল সনদে চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীন বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১২টি আবেদন জমা পড়ে। পরবর্তীতে আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সনদ যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সনদ ভুয়া কিংবা জাল হওয়ার কথা নয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান শেষে নিয়োগের সময় ওই শিক্ষকের জমা দেয়া রোল নম্বর-১১৬১১৫৩০ এবং নিবন্ধন নম্বর-৮০০০৫৮৮৯ এর শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি যাচাইয়ের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার সনদ যাচাইয়ের পর জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ আবুল খায়েরের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয় এবং জাল ও ভুয়া বলে জানান।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, তথ্য গোপন করে জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি করার কোন সুযোগ নেই। সনদটি যাচাই-বাছাই করে বাতিল করার প্রয়োজন ছিলো।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০ মার্চ ২০০৫ সালের পর এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক। কারও সনদ জাল প্রমাণিত হলে তার সনদের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।