× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

অনুসন্ধান

কি ঘটেছিল ৪ আগস্ট?

বিএসএমএমইউ ইস্যুতে অনুসন্ধান; ৩৫ জন শনাক্ত

কামাল সিদ্দিকী বাবু

০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:২২ পিএম । আপডেটঃ ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩৫ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

সাবেক সরকারের শেষ দিন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন অনেকটাই তুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে ঘটে গেল এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এক আন্দোলনকারীকে ধরে নিয়ে চালানো হলো অমানবিক নির্যাতন। সেদিনের  সেই কাহিনীর একটি ভিডিও ফাঁস হয়ে পড়ার পরপরই প্রকাশ্যে এসেছে সেই রোমহর্ষক কাহিনীর চিত্র। যা নিয়ে তোলপাড় দেশের চিকিৎসা কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে। অমানষিক নির্যাতনের কথা সামনে আসতেই হতবাক দেশের সচেতন মহল। সেবামূলক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনাও ঘটতে পারে যা বিশ্বাসে আনতে কষ্ট হচ্ছে সকলের!  

গত ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গেটের সামনে ও ভিতরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।

প্রথমে বিএসএমএমইউ বিভিন্ন ভবনের ছাদের ওপর থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইট, পাথর নিক্ষেপ করা হয়। আর নিচে আন্দোলনকারীকে আটক করে হাত-পা টেনে হেঁচড়ে ধরে  চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। এসময়  একজন আন্দোলনকারী অচেতন হয়ে পড়লেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। কেউ লাঠি, কেউ গজারি দিয়ে তাকে নির্বিচারে পিটিয়ে খায়েস মেটানোর দৃশ্য দেখা গেছে।  নির্যাতিত ওই আন্দোলনকারীকে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ঘটনার প্রায় এক মাস ২২ দিন পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। ভবনের ওপর থেকে গোপনে এই ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদকের কাছে ওই ভিডিও সংরক্ষতি আছে।

কী ঘটেছিল সেদিন:

ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হাসপাতালটির কেবিন ব্লকের সামনে একজন আন্দোলনকারীকে টেনে হেঁচড়ে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে। নির্যাতনকারীর সংখ্যা ২০ জনের বেশি হবে। সবার হাতে ২ থেকে আড়াই হাত লম্বা লাঠি। সবাই একজনকে টেনে হিচঁড়ে পেটাচ্ছে। যাকে নির্যাতন করা হচ্ছে তিনি অচেতন।

বিএসএমএমইউ ৩ নম্বর গেট ও কেবিন ব্লকের সামনে খোলা জায়গায় এই বেধড়ক পেটানো হয়। ঘটনাস্থলের কাছে ভিডিওতে রোগী কল্যাণ সমিতির একটি সাইন বোর্ডও দেখা যায়। হাসপাতালের ভিতরে গেটের সামনে এই নির্মম নির্যাতন করা হয়।  সেখানে যুবকদের সঙ্গে বিএসএমএমইউ একজন নারী কর্মকর্তা ছিলেন। তার ছবি দেখে অনেকেই তাকে সনাক্ত করেছেন। বলছেন  তিনি আইন শাখায় কর্মরত এক কর্মকর্তা।হাসপাতালের ভিতর এই বর্বর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে অনেকেই হতবাক।

এবিষয়ে কথা হয়  হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যেমনটি বলছিলেন। ‘হামলাকারীরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অনেকেই এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে অনুসন্ধান তদন্ত করে হামলাকারীদের চিহ্নিত ও আইনের আওয়ায় আনা উচিত বলে এই চিকিৎসক মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত ধীর গতির কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

কথা হয় বিএসএমএমইউ’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি  জানান, ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। হামলার ভিডিও ফাঁস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান। এ বিষয়ে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে, বিএসএমএমইউ’র ডিন ডা. মো. মোজাম্মেল হককে। অন্য সদস্যরা হলেন, ডিন ডা. আহমেদ আবু সালেহ, ডিন ডা. মোহাম্মদ সফি উদ্দিন ও সদস্য সচিব, অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের ডা. শেখ ফরহাদ।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ জানান, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে ৩৫ জন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাকে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি ফুটেজ তাদের হাতে পৌঁছেছে। তারা তদন্ত চূড়ান্ত করে উচ্চ পর্যায়ে তাদের রিপোর্ট পেশ করবেন। তাদের কাছে দুই থেকে তিনটি ভিডিও ফুটেজ আছে। আর যে আন্দোলনকারীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে অন্য হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জেনেছেন। এরপরও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, হামলায় সরাসরি জড়িত থাকায় স¤প্রতি ডা. হাসানুল হক নিপুনকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বিএসএমইউ’র চিকিৎসক। গাজীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেন। রাজধানীর শাহবাগ থানা মামলায় (মামলা নম্বর-২৫,তারিখ-১৭-৯-২৪)। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফাঁস হওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা হামলাকারীদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করব। ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে বদ্ধপরিকর।

প্রাপ্ত তথ্য মতে,তদন্ত কমিটি প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে কারা জড়িত আর নেপথ্য কারা ঘটনার মদতদাতা তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রিপোর্ট পেশ করবেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. শেখ ফরহাদ রাতে জানান, তদন্ত কমিটি বৈঠক করে তদন্তের পরিকল্পনাটি চ‚ড়ান্ত করবেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার দিনের একাধিক ভিডিও ফুটেজ কালেকশন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব, ছাত্রদের ওপর হামলা, ছাত্রদের চিকিৎসাকাজে বাঁধাদানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা তদন্ত করবেন। এরপর শিগগিরই তাদের রিপোর্ট চুড়ান্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ৪ আগস্টের সকাল:

গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড় থেকে পরিবাগ মোড় পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে মিছিল ও যোগদান দিতে থাকেন।  ওই সময় হঠাৎ করে বিএসএমএমইউ বিভিন্ন ভবনের ছাদের ওপর ও ভেতর থেকে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে ইটপাথর নিক্ষেপ করা হয়। পরিবেশকে ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে অশান্ত করতে গজারি লাঠি নিয়ে অতর্কিত হামলা ও তান্ডব চালানো হয়। তাদের তাÐবে অনেক ছাত্র আহত হন। এমনকি  অনেক সাধারণ কর্মকর্তা ও রোগী এবং স্বজনরা বিপাকে পড়ে চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরো বিএসএমএমইউ ও শাহবাগ মোড় রণক্ষত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্ররা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপাতে মুখোশধারীরা গাড়িতে আগুন দিয়ে সরকারি সম্পদ ধ্বংস করে।   

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.