বাংলাদেশে
একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে—এমনটি জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার
(২৯ মে), জাপানের টোকিওতে আয়োজিত ‘নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’-এ মূল বক্তা
হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক
ইউনূস বলেন, "গত বছর বাংলাদেশে
ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমরা এখন জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের
জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য—ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।”
তিনি
আরও বলেন,"আমরা বিশ্বাস করি, এখনই সময় আমাদের অতীতের ভুলগুলো সংশোধনের, নতুন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান
গঠনের এবং একটি ন্যায্য সমাজ বিনির্মাণের। নানা অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা
মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদান
রাখছে। একই সঙ্গে, আমরা মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১০ লাখেরও বেশি
রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে চলেছি।”
জলবায়ু
পরিবর্তনের অভিঘাত তুলে ধরে তিনি বলেন,“বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জলবায়ু সংকটের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। একদিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, অন্যদিকে তৈরি করছে জটিল নৈতিক দ্বিধা। বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের উত্থান মুক্ত বাজার ব্যবস্থার ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে, আর অর্থনৈতিক বৈষম্যও
দিন দিন বাড়ছে। এতে জাতিগুলোর মধ্যে, সমাজের ভেতরে এবং এমনকি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও
পারস্পরিক আস্থা হ্রাস পাচ্ছে।”
তিনি
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন,“বাংলাদেশ ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্রসহ
বিভিন্ন দেশে আমরা বিভাজন, অসন্তোষ এবং অস্থিরতা প্রত্যক্ষ করেছি, যা শেষ পর্যন্ত
শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে রূপ নিয়েছে।”
অধ্যাপক
ইউনূস তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে বলেন,“এশিয়া মানবতার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসভূমি। যদিও এই অঞ্চল অনিশ্চয়তার
কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, এটি সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুও বটে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এশিয়ার সামনে একটি সুযোগ, এমনকি দায়িত্বও রয়েছে—বিশ্বকে একটি বিকল্প পথ দেখানোর। সেটি
হবে শান্তি, সংলাপ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ।”