বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বর্ষবরণ শোভাযাত্রাকে ঘিরে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, “এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়, আমরা শুধুমাত্র ‘ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব’ ব্যবহার করেছি। কারণ ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়, এটি সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।
আজ (১৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায়’ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শোভাযাত্রার চরিত্র ও বার্তা নিয়ে ফারুকী বলেন, “অতীতে শোভাযাত্রাকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের প্রতিপক্ষকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তবে এবার তা নয়। এখানে রাজনীতি নেই, বরং রয়েছে বাংলাদেশের বহুবর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। মুঘল থেকে সুলতানি আমল পর্যন্ত সকল ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ দেখা যায় এই শোভাযাত্রায়। তবে এখানে ‘টিপিক্যাল রাজনীতি’র কোনো জায়গা নেই।”
নামকরণ বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন, “চারুকলায় প্রথম এই শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। ১৯৯৬ সালে এর নাম দেওয়া হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এবার চারুকলা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুরুতে যে নামে শোভাযাত্রার যাত্রা হয়েছিল, সেই ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামেই ফিরবে। এটি চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং পূর্বের চাপে দেওয়া নাম থেকে একটি প্রত্যাবর্তন।”
চারুকলার কিছু শিক্ষার্থী শোভাযাত্রার নতুন নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, “এটি চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং নামটি পূর্বের ঐতিহাসিক ধারায় ফিরে যাওয়া। এই সিদ্ধান্ত চারুকলার পক্ষ থেকেই এসেছে।”
শোভাযাত্রার সার্বজনীনতা নিয়ে তিনি বলেন, “এই আয়োজন আর শুধু বাঙালির উৎসব নয়। এবার আমরা এটিকে বাংলাদেশের প্রাণের উৎসবে রূপ দিয়েছি। চাকমা, মারমা, গারোসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এবারের আয়োজনে। ফলে এটি এখন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।”
ফারুকীর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, শোভাযাত্রার মাধ্যমে এবারের নববর্ষ উদযাপন পেয়েছে নতুন মাত্রা—রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, ঐতিহ্য-নির্ভর, এবং সর্বজনীন অংশগ্রহণে উৎসবমুখর এক মিলনমেলা।