রংপুর বিভাগ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা না রাখাকে ‘চরম বৈষম্য’ দাবি করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ছাত্র-জনতা। অবিলম্বে রংপুর থেকে উপদেষ্টা নিয়োগসহ সকল বৈষম্য দূর করতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। অন্যথায় রংপুরকে অচল করতে ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’ কর্মসূচিসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
আজ (১১ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড আখতার হোসেন ও সারজিস আলমসহ উত্তরবঙ্গ থেকে অন্তত ১০ জনকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বলেন, শহীদ আবু সাঈদের রক্তে রঞ্জিত উত্তরবঙ্গের প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মানুষ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। আমাদের অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষেরা আন্দোলন সংগ্রাম করে, জীবন দেয়ার পরও কেন বৈষম্যের শিকার? শুধু কি চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-ঢাকাসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা খুঁজে পাওয়া যায়, রংপুর-রাজশাহী বিভাগ থেকে কেন উপদেষ্টা রাখা হচ্ছে না? কাদের ইশারায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে পরিচিত ও বিতর্কিতরা উপদেষ্টা হচ্ছেন। আর কারাই বা রংপুরকে পেছনে ফেলে রাখার ষড়যন্ত্র করছে, তা উত্তরবঙ্গের মানুষ জানতে চায়।
ছাত্র নেতারা আরও বলেন, আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেঈমানি আর কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সফরে এসে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতায় এখন আজ ভিন্ন। দফায় দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও আবু সাঈদের অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত একজনও নেই। অথচ জুলাই বিপ্লবের টার্নিং পয়েন্টে ছিল রংপুর থেকে গড়ে উঠা আন্দোলন সংগ্রাম।
মঙ্গলবার সরকারি অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা না পেলে সারা দেশের সাথে রংপুর বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারী দেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার অফিস চলাকালীন আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে রংপুরের প্রতি যে অবহেলা ও বৈষম্য করা হচ্ছে, তা দূরীকরণে সুস্পষ্ট ইতিবাচক বার্তা চাই। অন্যথায় বুধবার বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরবার স্মারকলিপি প্রদান করে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে এবার রংপুরের মানুষ আর নিরব থাকবে না বলেও জানান দেন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমরান আহমেদ, ইমতিয়াজ ইমতি, সাজ্জাদ হোসেন, ডা. জামিল, নাহিদ হাসান খন্দকার, হামীম মুনতাসীর অহন, মুহম্মদ রাজিমুজ্জামান হৃদয়, ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ।
গতকাল রোববার নতুন আরও তিন উপদেষ্টার শপথ নেয়ার মধ্যদিয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়লেও সেই তালিকায় শুন্য রয়েছে উত্তরাঞ্চল। একারণে ফুঁসে উঠেছে এখানকার ছাত্র-জনতা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করাকে 'চরম বৈষম্য ও অবহেলা' হিসেবে দেখছেন এই অঞ্চলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে সমানতালে সমালোচনা।
নতুন উপদেষ্টাদের তালিকায় রংপুর বিভাগের কাউকে না রাখায় হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগ লিখেছেন, ‘সবার আগে বুক পেতে জীবন দিলো রংপুর বিভাগের আবু সাঈদ। বিনিময়ে পেয়েছে পিয়ন। আর চট্টগ্রাম বিভাগ পেলো ১৩ জন উপদেষ্টা। আলহামদুলিল্লাহ।’
জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মোহাম্মদ আরিফ আলী লিখেছেন, ‘লা-শ চাই উত্তরের! সব শাসক হবে দক্ষিণের?’ একই রকম ক্ষোভ ঝেড়ে রংপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সেরাফুল ইসলাম হিমেল লিখেছেন, ‘যে রংপুর থেকে দেশের পরিবর্তন হলো। সেখান থেকে কাউকে নিলেন না উপদেষ্টা পরিষদে, আপনাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ লিখেছেন, ‘আবু সাঈদের চেতনায় যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো সেই রংপুর থেকে একজন উপদেষ্টা দেয়ার কথা কেউ চিন্তা করলেন না? রংপুরে থেকে উপদেষ্টার দাবিতে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিতে চাই।’
সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম হৃদয় লিখেছে, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ শংকু সমজদার ও ২০২৪ এ আবু সাইদ। ইতিহাস বলে আন্দোলনে সম্মুখভাগে থাকা উত্তরের জনপদ সেই রংপুর সবসময় বৈষম্যের শিকার।’
মশিউর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩জন উপদেষ্টা! অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টা জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার উপর ফ্যাসিস্ট তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে।’ মোফাখখারুল ইসলাম তোতা লিখেছেন, ‘বরাবরই রংপুর বঞ্চিত ও অবহেলিত । আবু সাঈদের জন্মভূমিতে উপদেষ্টা নেই। রংপুর থেকে উপদেষ্টা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আতিকুজ্জামান আতিক লিখেছেন, ‘উত্তরাঞ্চলে নির্ভেজাল স্বৈরাচারের দালাল নাই, তাই উপদেষ্টা বানাতে পারছে না কাউকে। উত্তরাঞ্চল যেনো একখন্ড পূর্ব পাকিস্তান।’
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খাঁন সজীব লিখেছেন, ‘আবু সাঈদের রংপুর থেকে একজন উপদেষ্টাও নেই। অথচ আন্দোলন সংগ্রামে কোনো ভূমিকা নেই, এমন মানুষও হয়ে গেছে উপদেষ্টা।’