ছবিঃ মোস্তাফিজুর রহমান
রংপুরের ৬ জন এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগনেতা সহ তার অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না এলাকায়। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই এলাকা ছেড়েছেন তারা। জনরোষানল থেকে বাঁচতে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে। আত্মগোপনের মধ্যে রয়েছে সদ্য সাবেক ৬ এমপি সহ বেশ কিছু উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা ক্ষমতার অপব্যবহার সহ সাধারণ মানুষকে নানান ভাবে হয়রানি করেছিলেন বলেন অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে জনরোষানল থেকে বাঁচতে তারা বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে তাঁরা গা ঢাকা দিলেও তাদের বাড়ি ঘর রক্ষা হয়নি।
গত সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পরই দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়ি ঘরে হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
জানা গেছে সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর রংপুর জেলায় আনন্দ মিছিল বের করে শিক্ষার্থী সহ জনতা। এছাড়াও উল্লাসে মেতে ওঠেন বিএনপি জামাত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও। ওই আনন্দ মিছিল ও উল্লাসের সুযোগে দুর্বৃত্তরা ওই নেতাদের বাড়িতে হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তবে তারা গত সোমবার ও মঙ্গলবার নেতাদের বাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করলেও ওই সময় কোন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখা যায়নি।
তবে অনেকেই বলছেন, যেসব নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে তার পেছনে আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মীর ইন্ধন ছিল। কারণ এমপিরা ক্ষমতায় থেকে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিলেন। যেসব সদ্য সাবেক এমপি ও নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে রংপুর-১ গংগাচড়া-সিটির একাংশ আসনের সদ্য সাবেক আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ তারাগঞ্জ) আসনে এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মন্ত্রী, রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনের সাবেক এমপি আশিকুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সদ্য সাবেক এমপি নাছিমা জামান ববি, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি হোসনেয়ারা লুৎফা ডালিয়া। রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনের এমপি জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা না হলেও তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনের এমপি ড. শিরীন শারমিন স্থানীয় না হওয়ায় তার বাড়িতে কোন হামলা হয়নি। তবে পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা ও ভাঙচুর করেছে। ড. শিরিন শারমিনও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও হামলা লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ হয়েছে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল, বদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট, কাউনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম মায়া, গংগাচড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, হারাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা সহ শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িঘরে। তবে তাদের বাড়িঘরে হামলার আগেই ওইসব জনপ্রতিনিধি ও নেতারা আত্মগোপনে গেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
গত রোববার (৪ আগস্ট) বদরগঞ্জ পৌর শহরের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করতে গেলে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিন বেলা ১১ টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট সহ ৮-১০ জনের বাসভবনে হামলা চালিয়ে একটি কার সহ অন্তত ৪০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। পরদিন সোমবার শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করলে শুধু উপজেলা যুবলীগ নেতা পলিন চৌধুরীর বাসভবন ছাড়া অন্যান্য নেতাদের বাসভবনের মালামাল লুট করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিন রাত ১০ টা পর্যন্ত এমপি ও পৌর মেয়রের বাসভবনের আসবাবপত্র লুটের পর ঘরের দরজা জানালা ও ইট খুলে নিয়ে যায় তারা। তবে ঘটনার সময় পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরী বাসভবনের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। শুধু এমপি ডিউক চৌধুরীর বদরগঞ্জ এর বাসভবন নয় তারা ঢাকায় সংসদ ভবনের বাসায়ও হামলা করছে চাকরি বঞ্চিত কয়েকজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বদরগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ওই জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় থেকে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিক সহ সাধারণ মানুষকেও নানান ভাবে হয়রানি করেছেন। এছাড়াও এমপি ডিউক চৌধুরী ও পৌর মেয়র চৌধুরীর হাত থেকে রেহাই পাননি তাদের আপন চাচা জাহিদুল হক চৌধুরী ও চাচাতো ভাই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পলিন চৌধুরীও। তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানি করেছেন ওই দুই নেতা। এ কারণে ওই দিন তাদের বাড়ির মালামাল লুট করে জনতা ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ওই নেতারা জনরোষানল থেকে বাঁচতে এলাকা থেকে আত্মগোপনে গেছেন।
তবে রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপি জাকির হোসেনের বাড়িতে কোন হামলার ঘটনা না ঘটলেও এই আসনের সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের বাড়িতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছেন দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ রয়েছে আশিকুর রহমান দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে তার কিছু নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ মানুষ তার বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তির নগরীর গুপ্তপাড়ায় তার ভবনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র লুট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে এই নেতা দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। তবে এইসব নেতাদের বাড়ি ঘরের পাশাপাশি রংপুর নগর ও ৮ উপজেলায় আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছেন দুর্বৃত্তরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh