রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দেশের বাণিজিক ব্যাংকগুলোর পাওনা ৫১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলের এমপি (নোয়াখাল-২) মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সব চেয়ে বেশি পাওনা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে। বিএডিসির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা, চিনিকলগুলোর কাছে ৭ হাজার ৮১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ফার্টিলাইজার, কেমিক্যাল ও ফার্মাটিসিক্যাল ইন্ডাস্টিজের কাছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা, টিসিবির কাছে ৫ হাজার ১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিমান করপোরেশনের কাছে ৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গ্রান্ড কমিশনসহ (ইউজিসি) দেশের ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে।
এদিকে প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের ফরিদা ইয়াসমিন এক প্রশ্নে ৩০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে মন্ত্রী তা জানাতে পারেননি। ফরিদা ইয়াসমিন তার প্রশ্নে দেশের ৩০ জন ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ও তাদের কাছে পাওনার পরিমাণ জানতে চান। জবাবে শীর্ষ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি (৬ জুন) ঋণখেলাপি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ না করলেও জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপিঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বেড়েছে।
সরকার দলীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেলেংকারী বন্ধে খেলাপিঋণগ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চিহ্নিত করা এবং ওই ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সে মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এছাড়া ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার নিমিত্তে বিতরণকৃত ঋণের অর্থ উদ্দিষ্ট খাতের পরিবর্তে যাতে অন্য খাতে ব্যবহৃত না হয় এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়, তা নিয়মিত তদারকির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এসএফএস) বর্তমানে (মার্চ ২০২৪) নিবন্ধিত এজেন্টের সংখ্যায় প্রায় ১৭ লাখ ৭০ হাজার। এমএফএস গ্রাহক ২২ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে নারী গ্রাহক ৯ কোটি ৩৩ লাখের বেশি। এসএফএসসহ অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে আগের তুলনায় অনেক সহজে রেমিট্যান্স পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
ভোলা-১ আসনের আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার।
মন্ত্রী জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ২০০৯ হতে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ১১জন নারীকর্মীসহ ৯৭ লাখ ৭ হাজার ২৫০ জন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিট্যান্স আহরণের গতি বহুলাংশে বেড়েছে। ২০০৯-১০ সালে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ হাজার ৭৫২ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে সব চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
পটুয়াখালী-১ আসনের এ বি এম রুহুল আমি হাওলাদারের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, চলতি বছরের মে মাসের হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ হাজার ১৬১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএমএফ-এর বিপিএম৬ অনুযায়ী, এই পরিমাণ ১৮ হাজার ৬৩৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সর্বশেষ গত মার্চ মাসের তথ্যানুযায়ী গ্রস রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহের সক্ষমতা রয়েছে।
ঢাকা-১৪ আসনের মইনুল হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বর্তমানে দেশে করপ্রদানকারীর সংখ্যা এক কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৬ জন। এর মধ্যে গত মে পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছে ৪২ লাখ ৬২ হাজার ৭০৬ জন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত আদায়ের পরিমাণ দুই লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh