× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

‘পমপম’ নামে টেলিগ্রাম গ্রুপ খুলে আপত্তিকর ভিডিও বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মে ২০২৩, ১০:৫৫ এএম

রবিবার (২২ মে) রাজধানীর মালিবাগে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

তরুণীদের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করতো ‘পমপম’ নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ। এরপর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে আইডি ব্যবহারকারীদের ব্ল্যাকমেইল করতো তারা। পরে তাদের কাছে টাকা দাবি করতো। টাকা দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে বাধ্য করতো। কোনও প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ভুক্তভোগীদের নাম-পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিতো। শুধু ভুক্তভোগীর কাছ থেকেই অর্থ আত্মসাৎ নয়, আপত্তিকর ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করে কোটি টাকা আয় করতো চক্রটি।

ওই চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো– মার্ক-সাকারবাগ ওরফে আবু সায়েম, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, বোগদাদী শাকিল, ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান, জসিম, ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ ও মিয়া ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট।

সিআইডি প্রধান জানান, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটিকে শনাক্তের কাজ শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল।

তিনি বলেন, ‘মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের ক্রেতারা গ্রুপটির সদস্য হতো। তারা ওইসব কনটেন্ট কিনতো এবং সংরক্ষণ করতো।’

সিআইডি জানায়, চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক-সাকারবাগ। তার নাম আসল নাম আবু সায়েম। এনআইডি অনুযায়ী তার বয়স ২০ বছর, থাকে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা করেছে সে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এরই মধ্যে আরাফাত নামে এক ভুক্তভোগী এবং তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গ্রুপে ছড়িয়ে দেয় সায়েম। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীর হাউজিং এলাকা থেকে অভ্র এবং উখিয়া থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি প্রধান জানান, সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে ‘মার্ক-সাকারবার্গ’ আইডিটি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘পমপম গ্রুপের’ যতগুলো চ্যানেল এবং গ্রুপ আছে—তার অ্যাডমিনদের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়। অ্যাডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কনটেন্ট জোগাড় করা। নতুন কনটেন্ট পেতে তারা ভুয়া এনআইডি বানিয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করতো।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘তবে বর্তমানে তাদের খুব বেশি কষ্ট করতে হতো না। কারণ, ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকরাই নতুন নতুন কনটেন্ট দিতো। তারা সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতো, প্রতিশোধের নেশায় সেগুলোই তুলে দিতো ওই গ্রুপে। সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে, ৩০-৪০ সেকেন্ডের প্রমো বানিয়ে আপলোড করা হতো। প্রমো দেখে যারা ফুল-ভার্সন দেখতে চাইতো, তাদের এক থেকে দুই হাজার টাকার প্রিমিয়াম সার্ভিস কিনতে হতো।’

সিআইডি প্রধান আরও  জানান, সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে পেজের অ্যাডমিনদের আসল পরিচয় উদ্ধার করা হয়। সায়েমের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। তার দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কন্টেন্ট সেভ করে রাখা এবং নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া। মশিউর চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করে। তাকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার সহযোগী জসিমকেও।

তিনি বলেন, ‘সায়েম এবং মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রুপগুলোর অনেক অ্যাডমিন ঢাকায় অবস্থান করছে। তাদের গ্রেফতারে বেইলি রোড এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে গেটটুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেফতার হয় অ্যাডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ এবং মিয়া ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট।’

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘সায়েম এবং তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কনটেন্ট রয়েছে। অপরদিকে মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় দুই হাজার ৭৫০ জন। আমরা তাদের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। তাদের নিয়েও কাজ করছি।’



Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.