বাঁধনডাঙ্গা গ্রাম হয়তো বিশ/পঁচিশ বছর আগেও অন্যরকম ছিল। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই তখন গ্রীস্মকালে ধুলা ভরা আর শীতকালে প্যাঁক কাদাময় মাটির রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতো, জুতা স্যান্ডেল পরা মানুষ দেখা যেত খুবই কম। কিন্তু এখন সেখানে পাকা রাস্তা হয়েছে, সেই রাস্তায় রিকশা চলে, ব্যাটারিচালিত চার্জার গাড়ি চলে, মাঝে মাঝে মাইক্রো আর প্রাইভেটও চলে। মানুষজনের পায়ে এখন রংবেরঙের জুতা স্যান্ডেল উঠেছে, খালি পায়ে ধুলো মাড়িয়ে অথবা প্যাক কাদা পায়ে লাগিয়ে হাঁটা মানুষ দেখা যায় কদাচিৎ। গ্রামে ছনের ঘর আর টিনের ঘর প্রায় উঠেই গেছে, যেদিকে তাকানো যায় চোখে পড়ে ইটের দালান, পাকা পায়খানা। আগে মানুষের বসত বাড়ির পেছনে থাকতো গাছ গাছালি ভরা জংলা আর বাঁশঝাড়, সেইসব জংলায় একদিকে যেমন আব্রু রেখে প্রাকৃতিক কর্মাদি সারা যেত তেমনি আবার ঝড়-বুষ্টিতে বাড়ির সুরক্ষাও হতো। এখন আর সেসবের বালাই নেই। বাঁধনডাঙা তার এতদিনের গ্রাম্য পরিচয় মুছে ফেলে ধীরে ধীরে শহর হয়ে উঠতে চাইছে। গ্রামে ঢোকার পথেই রাস্তার পাশে মানিকের বাপের চা-সিগারেট-পান- বিড়ির দোকান। তবে সেই দোকানে এখন আর মানিকের বাপ বসে না, বসে মানিক নিজেই। কিছুদিন হলো সেই টিনের দোকান’ও পাকা হয়েছে ্ মানিক একটা টেলিভিশনেরও ব্যবস্থা করেছে। দিনের বেলা সেখানে অল্পবয়সীরা হিন্দি আর বাংলা সিনেমা দেখে, গুলতানি মারে। তাদের জন্য ফ্রিজে পেপসি কোকাকোলা থাকে, থাকে টাইগার আর শক্তি ড্রিংকস। সন্ধ্যায় আসে গ্রামের বয়স্করা। তাদের জন্য রিমোট টিপে খবর দেখার ব্যবস্থা করে দেয় মানিক। তারা খায় চা। কেউ আদা চা, কেউ দুধ চা। যার যেমন পছন্দ। দোকানের সামনে মালার মতো ঝুলে থাকে রঙিন চকচকে সস্তা চিপসের প্যাকেট। বা”চারা আসে সেইসব মোড়কের মোহিনী টানে। দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা সবসময়ই মানিকের দোকান থাকে জমজমাট।
মাঝে মাঝেই সেই দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় একজন লম্বা, ঋজু, মেদহীন ছিপছিপে শরীরের বৃদ্ধ মানুষকে, বয়সের ভারে যার শরীরটা খানিকটা বেঁকে গেছে, তার মুখে কাচাপাকা দাড়ি, মাথার এলোমেলো চুলগুলোও অধিকাংশ সাদা হয়ে গেছে। লোকটার পায়ে অন্যদের মতো কোন জুতা থাকে না, খালি পায়ে লেগে থেকে গ্রামের ধুলা কাদা। তার গায়ে কখনো থাকে একটা ছেঁড়া ময়লা শার্ট, কখনো বা খালি গা। বৃদ্ধ মানুষটা বড় বড় পা ফেলে হন হন করে সারা গ্রামের এমাথা থেকে ওমাথা হাঁটতে থাকে, কখনো কখনো, হয়তো খাঁ খাঁ দুপুরে কিংবা একটু গভীর রাতে যখন মানিকের দোকানে লোকসমাগম থাকে, কিংবা দোকানের সামনের বেঞ্চিটা খালি থাকে তখন তাকে দেখা যায় বেঞ্চিতে এসে চুপচাপ বসে থাকতে। এমনিতে লোকটার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নেই, শুধু চোখ দুটো চঞ্চল, যেন সতর্কভাবে দেখছে চারপাশ। আরেকটু খেয়াল করলে দেখবেন লোকটার কোমরে একটা দড়ির সাথে অনেকগুলো প্লাষ্টিকের বা লোহার চাকতি বাধা। যদি কেউ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘ও ভাই তোমার কোমরে এইসব কি?’
তখন সে হয়তো নিচু হয়ে তাকাবে নিজের কোমরের দিকে। কিছুক্ষণ কোমরে ঝুলিয়ে রাখা অচল চাকতিগুলোতে হাত বুলাবে, তারপর ফিসফিস করে বলবে,
‘এইসব হলো গ্রেনেড....’
আপনি হয়তো অবাক হবেন, হয়তো আপনার হাসিও পাবে। মনে হবে, কি বলছে লোকটা? তার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো? তখন কথার তালে কথা বলতে গিয়ে আপনি হয়তো আবার জিজ্ঞেস করবেন,
‘গ্রেনেড? এইসব গ্রেনেড? কি করবা গ্রেনেড দিয়া?’
লোকটা তখন বিড় বিড় করে বলবে, ‘উড়ায়া দিবো, শত্রুর ঘাঁটি উড়ায়া দিবো ...’
বাধনডাঙা গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই লোকটাকে চিনে। তার নাম আকবর। মুক্তিযোদ্ধা আকবর। আকবর সাহসী যোদ্ধা ছিল এটা গ্রামের বয়স্করা মনে করতে পারেন। ছোটরাও বিভিন্ন সময় বড়দের মুখে তার বীরত্বের কাহিনী শুনেছে।
তারা শুনেছে, যুদ্ধের সময় আকবর ছিল ২৫ বছরের এক টগবগে তরুণ। শহরের কলেজে তখন বিএ ক্লাসের ছাত্র ছিল সে। একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে, গ্রামবাসীরা বলেন, বৈশাখের শুরুতে বা চৈত্র মাসের শেষের দিকে একদিন কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে উধাও হয়েছিল আকবর। পরে জানা গেল, সমবয়সী আরো কয়েকজনের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত চলে গিয়েছিল সে। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে রণাঙ্গনে। তারপর কি যে কষ্ট করেছে তারা, আকবর ফিরে এসে গল্প করেছে, একদিন খেয়েছে তো দুইদিন খাবার নেই। এক রাত ঘুমাতে পেরেছে তো তিন রাত আর ঘুমানোর উপায় নেই। এর মধ্যেই সমুখ যুদ্ধ। গুলি আর বোমার মধ্যে জীবনবাজি রেখে ছুটে যাওয়া। আকবরের সঙ্গী সাথীরা এখন বলে, ৬/৭ টা অপারেশনে নাকি অংশ নিয়েছিল সে। এমনও শোনা যায় ডিনামাইট দিয়ে একটা সেতু নাকি একাই উড়িয়ে দিয়েছিল আকবর।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আকবর যখন গ্রামে ফিরে এল তখন তার মাথায় লম্বা চুল। হাতে মেশিনগান। চোখে অনেক স্বপ্ন। আকবর আর কলেজে ফিরে যায়নি। পাকিস্তানি মিলিটারির দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর ঠিকঠাক করে টুকটাক ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেছিল সে। কিন্তু তাতে ঠিক সুবিধা করতে পারেনি। পরে শহরে গিয়েছিল হয়তো চাকরি-বাকরির আশায়। কিন্তু সেই আশাও পূরণ হয়নি তার। কিছুদিনের মধ্যেই আকবর আবার গ্রামে ফিরে এসেছে, তারপর একেবারে কচ্ছপের মতো গুটিয়ে গেছে নিজের ভেতর। ঠিক কবে, কখন থেকে যে আস্তে আস্তে আকবরের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো, তা কেউ ঠিক-ঠাক বলতে পারে না। আসলে সবাই নিজ নিজ ধান্দায় ব্যস্ত, কে আর খবর রাখে আকবরের, কার এত আজাইরা সময় আছে? প্রথম বোধহয় আকবরের মায়ের চোখেই ব্যাপারটা ধরা পড়লো। তিনিই সবাইকে জানালেন, আকবর সহজে ঘর থেকে বের হয় না। চুপ-চাপ অন্ধকারে ঘরের কোণায় বসে থাকে, কারো সঙ্গে কথাও বলে না, হাসেও না। খাবার দিলে খায়, না দিলে খায় না। আপন মনেই কি যেন বলে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না। কেমন শূন্য দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
আকবরের মা মমতাভরা কন্ঠে বলে, ‘তোমার কি হইছে বাবা? কেন তুমি কথা কও না, খাও না, কি হইছে তোমার?’
আকবর যেন মায়ের কোন প্রশ্নই বুঝতে পারে না। সে এদিক ওদিক তাকায়। মাথা চুলকায়। আর হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার করে উঠে, ‘ফায়ার, ফায়ার’ বলে।
এসব দেখে শুনে আত্মীয় স্বজন বললো, বিয়া করায়া দেও, ঘরে বউ আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিš‘ যে ছেলে কামাই রোজগার করে না, তার কাছে মেয়ে দেবে কে?
আকবর ধীরে ধীরে ম্লান হতে শুরু করলো। যেন একটা উজ্জ্বল প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভতে থাকলো। প্রথম দিকে বন্ধুবান্ধবরা খোঁজখবর করতো। কয়েকজন ওকে ধরে বেঁধে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। মুরুব্বীরা কবিরাজি চিকিৎসা করিয়েছে। তাবিজ কবজও আনা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। আকবর দিন দিন আরো বেশি করে নিজের অন্ধকার গহবরে ডুবে গেছে।
মাঝে মাঝে উচ্চ স্বরে চিৎকার করে উঠেছে, ‘হিট অ্যান্ড রান, রান অ্যান্ড হিট।’
গ্রামের দুষ্ট শিশুরা তাই মাঝে মাঝেই আকবরের পেছনে দল বেঁধে চিৎকার করেছে, ‘হিট এন্ড রান, হিট অ্যান্ড রান’ বলে। আকবর তখন অযথাই আকাশের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠেছে।
বাধনডাঙার মানুষেরা ধীরে ধীরে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকবরকে নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ ছিল না তাদের। ফলে আকবর নিজের মতো একা ও নীরবে এই গ্রামের বিস্তৃত ধানক্ষেত, পুরনো গাছপালা এবং খাল ও পুকুরের অংশ হয়ে পড়েছিল অথবা তাদের সমকক্ষ হয়ে গিয়েছিল।
যতদিন মা বেঁচেছিল ততদিন তিনিই আকবরের দেখা শোনা করেছেন। তিন বেলা খাবার দিয়েছেন। দু’চারদিন পর পর পুকুরে নিয়ে গিয়ে গা ডলে গোসল করিয়েছেন। কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর আকবরের দেখা শোনার কেউ রইল না। পাড়া-প্রতিবেশিরা দয়া পরবশ হয়ে মাঝে সাজে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করলো। কিন্তু তাও আর কত দিন? প্রায়ই অভুক্ত অবস্থায় তার দিন কাটতো। চাচাতো ভাইয়েরা যেখানে ছাগল রাখতো সেই ছাগল রাখা ঘরে দয়া করে একটা কাঠের চৌকি পেতে দিয়েছিল, সেইখানেই নোংরা ময়লায় পড়ে থাকতো আকবর। মাঝে মাঝে উঠে মানিকের দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসতো। গ্রামবাসী কেউ দয়া করে একটা কলা, একটা পাউরুটি বা এক কাপ চা দিলে চুপচাপ খেতো।
‘ও ভাই, তোমার কোমরের গ্রেনেড গুলি ফাটাও না কেন? ফাটায়া দেও দেখি একবার ..’
কেউ কেউ হয়তো ঠাট্টা করে তাকে বলতো। আকবর তখন ফিসফিস করে বলতো, ‘কমান্ডার স্যার বলে নাই তো। কমান্ডার স্যার বললেই ফাটায়া দিমু। অর্ডার লাগবে, অর্ডার ...’
আকবরের কবে জ্বর উঠেছিল, কবে সে জ্বরের ঘোরে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল, তা চাচাতো ভাইদের বাড়ির কেউ টের পায়নি। সকালবেলা বাড়ির রাখাল ছাগল বের করতে গিয়ে প্রতিদিনের মতো ‘ও চাচা, উঠেন, সকাল হইছে’ বলে আকবরকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগাতে গিয়েছিল। আর তখনই সে বুঝতে পেরেছিল, জ্বরে বৃদ্ধ লোকটার গা পুড়ে যাচ্ছে।
লোক লজ্জাতেই হোক বা চক্ষু লজ্জাতেই হোক, মরেনি যখন, তখন এই আপদকে ধরাধরি করে ভ্যানে তুলে শহরের সরকারি হাসপাতালে ফেলে এলো চাচাতো ভাইরা। সেখানে আদৌ আকবরের কোন চিকিৎসা হয়েছিল কীনা সে কথা কেউ জানে না। তবে দিন পাঁচেক পর তার মৃত্যুর খবরটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন এক চাচাতো ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আকবরের জন্য কান্নাকাটি করার কেউ ছিল না। চাচাতো ভাইরা বড়ই বিরক্ত হয়ে লাশ গ্রহণ করলো। হাসপাতালের বিল মেটাতে গিয়ে তাদের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। তবু যাক এটা তার শেষ বিদায় বলে কথা।
মসজিদের হুজুর স্বউদ্যোগে আকবরের গোসল দিলো। চাচাতো ভাইরা জানাজা শেষে গ্রামের গোরস্তানে দাফন করার জন্য লাশও নিয়ে এসেছিল। তখন হঠাৎ বাঁধনডাঙা গ্রামে ঢোকার রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ঢুকলো একটা পুলিশের জিপ। মানিকের দোকানে বসে গুলতানি মারা ছেলেরা সচকিত হয়ে উঠলো। ঘটনা কী? পুলিশ কি তবে কোন আসামি ধরতে আসছে? কোন আসামি? কে আসামি? মানিক দ্রুত টেলিভিশন বন্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে এল। জিপ থেকে তখন লাফ দিয়ে নামল দুইজন পুলিশ।
‘আসসালামু অলাইকুম স্যার, আপনেরা হঠাৎ কি কারণে, স্যার?’
পুলিশদের মনে হলো খুব চঞ্চল। তারা জিজ্ঞেস করলো
‘আচ্ছা, এই গেরামে আকবর নামে কেউ আছে?’
‘আকবর, কোন্ আকবর? মুন্নাফ মিয়ার পোলা আকবর, যে বাহরাইনে থাকে? নাকি ফারুকের শালা কাইল্যা আকবর?’
‘আরে না, মুক্তিযোদ্ধা আকবর...’
পুলিশের লোকটা বলে। তখন গ্রামবাসীর মুক্তিযোদ্ধা আকবরের কথা মনে পড়ে।
‘হ, মুক্তিযোদ্ধা আকবর ...কিন্তু ইনি তো মারা গেছেন। বাদ আসর মসজিদের সামনে জানাজা হইছে। লাশ তো গোরস্তানে। মনে হয় এতক্ষণে কবর দিয়া লাইছে।’
‘না-আ -আ--- ” বলে প্রায় আর্তনাদ করে উঠলো পুলিশের লোকেরা। ‘কবর দিতে না করো, তাড়াতাড়ি যাও, না করো কবর দিতে। ’
এইবার গ্রামের লোকের অবাক হওয়ার পালা। মরা মানুষ কবর দিবে না, এইটা কেমন বিধান? খুন জখম হইলে এক কথা, পুলিশ তখন লাশ কাটা-ছেঁড়া করার আগে দাফন করতে দেয় না। কিন্তু আকবর তো জ্বরে মরছে, বুড়া মানুষ জ্বরের তেজ সহ্য করতে পারে নাই। তারে কবর দিতে কি বাধা?
‘কেন স্যার? কবর দিতে সমেস্যা কি?’
‘আরে বলতাছি। আগে আটকাও, আটকাও। কবর দিতে মানা করো ..’
গ্রামের তরুণ কিশোরদের পিছু পিছু পুলিশরাও এরপর তাদের টুপি ঠিক করতে করতে গোরস্তানের দিকে দৌড়ায়।
ততক্ষণে কবর খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল। একটা খাটিয়ায় শ্বেত-শুভ্র কাফনে জড়ানো মুক্তিযোদ্ধা আকবরের লাশ রাখা ছিল পাশে। হয়তো এক্ষুণি তাকে শোয়ানো হতো কবরের গহ্বরে। পুলিশের লোকজন হাঁপাতে হাঁপাতে গোরস্তানে পৌঁছায়।
শ্বাস টানতে টানতে বলে, ‘থামান। একটু দেরি করেন। কাজ আছে।’
গ্রামবাসী তখন দাফন থামায়। পুলিশরা বলে, ‘ইনাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হবে।’
গ্রামবাসী মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা’ বিষয়টা কি? মরা মানুষকে কোন জিনিস দিলেই কি আর না দিলেই বা কী? সে কি আর ওইটা নিয়া কবরে যাইতে পারবে? যাই হোক, এখানে একটা তামশা যে হবে সে বিষয়ে গ্রামের লোকের কোন সন্দেহ নেই, ফলে তারা সেই তামশা দেখতে দাঁড়িয়ে গেল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঁধনডাঙা গ্রামের রাস্তায় ধুলা উড়িয়ে আরো কিছু সরকারি গাড়ি ঢুকলো। সেসব গাড়িতে ছিলেন মহামহিম জেলা প্রশাসক, বাধনডাঙা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাঁধনডাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আরো গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। শত শত গ্রামবাসী নীরবে দাঁড়িয়ে দেখলো বাঁধনডাঙা উপজেলা পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল মৃত মুক্তিযোদ্ধা আকবরের মরদেহে ‘গার্ড অব অনার’ দিল। জীবিত অবস্থায় এমন সালাম পাগলা আকবরকে কখনো পেতে দেখেনি গ্রামবাসী। আকবরও হয়তো কখনো ভাবেনি মরার পর তার জন্য সরকারের ভা-ারে এ ধরনের সম্মান জমা রাখা ছিল।
পুরো আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেল দশ মিনিটের মধ্যে।
আকবরের লাশও নামিয়ে ফেলা হলো কবরে। কোদালে টেনে মাটিও ফেলা হয়ে গেল।
আর তখনই দেখা গেল এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা হাতে একটা ভাঁজ করা লাল সবুজ জাতীয় পতাকা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে গোরস্তানের দিকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ডাক দিলেন, ‘এই মাহফুজ, কই যাও?’
মাহফুজ অর্থাৎ সেই তরুণ কর্মকর্তা তখন তোতলাতে থাকে, ‘স্যার, একটু দেরি হয়ে গেছে স্যার, একটা জাতীয় পতাকা আনছিলাম, উনার লাশের উপর দেয়ার জন্য, স্যার। ’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh