ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যর ইতিহাসে এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব, যিনি আধুনিক বাংলা কবিতার ধারায় গভীর ও স্মরণীয় প্রভাব ফেলেছেন। রূপসী বাংলার কবি হিসেবে খ্যাত জীবনানন্দ দাশ তার সাহিত্যে ভিন্ন ধরনের চিত্রকল্প, সুর, রূপক এবং ব্যঞ্জনা প্রয়োগে এক নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছেন।
জীবনানন্দ
দাশের জন্ম ও শৈশব
কবি
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, পূর্ববাংলার
বরিশাল জেলার বেতাগী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী গোবিন্দচন্দ্র
দাশ এবং মা চৈতালি দেবী।
ছোটবেলা থেকেই কবি সাহিত্যচর্চার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং সেখানেই তার সাহিত্যিক পথচলার শুরু।
সাহিত্যকর্ম
এবং বিশেষত্ব
জীবনানন্দ
দাশের সাহিত্যকর্মে রয়েছে গভীর অন্তর্দৃষ্টি, প্রকৃতির প্রতি বিশেষ ভালোবাসা, এবং মানবিক বিষয়ের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। তিনি কখনও সরল এবং সরাসরি কথা বলেননি, বরং তার কবিতায় ছিল নানা রূপক, আলঙ্কারিক ভাষা ও অপ্রকাশিত ভাবনা।
তার কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল আধুনিকতার সাথে প্রকৃতির সংমিশ্রণ, বিশেষত বাংলার প্রকৃতির বর্ণনায়।
কবি
জীবনানন্দ দাশের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত রূপসী বাংলা (১৯৩৮)। এই গ্রন্থে
তিনি বাংলাদেশ তথা পূর্ববঙ্গের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সুনিপুণ
বর্ণনা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি
বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য, গ্রামের জীবনযাত্রা এবং তার পরিবেশকে অমর করে রেখে গেছেন।
রূপসী
বাংলা গ্রন্থের মধ্যে সন্নিবিষ্ট কবিতা গুলোর ভাষার বৈচিত্র্য এবং কবির আত্মবিশ্বাসী ভাবনা পাঠকদের মুগ্ধ করেছে। "মৃত্যু", "রূপসী বাংলা", "বিশ্বসাহিত্য", "বেদনার আনন্দ"—এগুলি তার জীবনের অমর কবিতা হিসেবে পরিচিত।
আধুনিক
বাংলা কবিতার নির্মাণ
কবি
জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কবিতার এক নতুন পথিকৃৎ
হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতায় যে নিস্তব্ধতা, একাকীত্ব,
ব্যর্থতা এবং নৈঃশব্দ্যের তীব্র প্রকাশ ছিল, তা বাংলা সাহিত্যে
এক নতুন আবহ সৃষ্টি করেছিল।
বহু
বিশ্লেষক তার কবিতার মধ্যে “নতুন রোমান্টিকতা" এবং
“প্রকৃতির প্রতি একটি দৃষ্টিভঙ্গি” খুঁজে পেয়েছেন, যা পুরনো ধারা
থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। কবি জীবনানন্দ দাশ শৈল্পিক দিক থেকে বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করেছেন এবং আধুনিক বাংলা কবিতার ভাষাকে শুদ্ধ ও গঠনমূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত
করার প্রয়াস নিয়েছেন।
মৃত্যুর
পরও অমর
১৯৫৪
সালে কবি জীবনানন্দ দাশ মারা যান, তবে তার সাহিত্যকর্ম আজও জীবন্ত। আজও তার কবিতার প্রতিটি লাইন আধুনিক পাঠকদের ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়। মৃত্যুর পরও তাঁর কবিতার সৌন্দর্য, গভীরতা এবং অসাধারণ কল্পনার জন্য তাঁকে স্মরণ করা হয়।
আজকের
দিনে কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন উদযাপন
আজ
তার ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে নানা অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমের আয়োজন করা হচ্ছে। নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাহিত্যিক মঞ্চ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
কবি জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে
আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
এদিন,
বরিশালের বেতাগী গ্রামে কবির জন্মস্থান এবং তার স্মৃতিসৌধে বিশেষ প্রার্থনা এবং শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলকাতার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এই বিশেষ দিনটি
উদযাপন করছে। সাহিত্যিক এবং ছাত্রছাত্রীরা কবির কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করে তার সাহিত্যকে স্মরণ করছে।
অধিকাংশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সাহিত্য বিষয়ক বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকরা জীবন্ত কবির স্মৃতি রক্ষায় বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনাসভা এবং কবিতা পাঠের আয়োজন করেছে। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে কবির লেখা এবং কবিতার বিশেষ উদ্ধৃতি শেয়ার করা হচ্ছে, যাতে নতুন প্রজন্ম কবির সাহিত্যিক মূল্যমান উপলব্ধি করতে পারে।
আজকের
দিনটি জীবিত কবি এবং তার সাহিত্যকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি বিশেষ উপলক্ষ। কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি এবং তার সাহিত্য আজও আমাদের মধ্যে জীবন্ত এবং প্রাসঙ্গিক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh