বিস্মৃতির কৃষ্ণগহ্বরে
স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে সুহাসিনী
কবিতার মুগ্ধতাও তার লোকালয়ে স্টপেজ হারায়।
অজস্র পঙক্তিমালায় টুংটাং শব্দে
ভাঙা কালভার্টেও রাজপথের সম্মান;
নর্দমার বিভিষিকায় ফিরেছে সুয়োপোকাগুলো।
অশ্বত্থ ছায়ায় ছন্দের সুর লহরি অথবা পুবালি বাতাসে
কবিতার ঝরা পাতগুলো নকশিকাঁথায় বুনেছিল বুকের জমিন
পৌষের শেষ গোধূলির সম্ভাষণে
আনাগত কবির আক্ষেপে সেই ছিল সুহাসিনী।
বুকের গহিনে নিমিষে উবে যাওয়া
সুনামির সহস্র সংকেত, নীলাভ সবুজর ঘনঘটায়
নূপুরের কিংকন শব্দের মূর্ছনায় সে এসেছিল।
বিমুগ্ধ দৃষ্টির মোহনীয় আবেশে
পুঁইডগার মতো উঠে আসা আজন্ম পিয়াসি নিতম্ব,
অসংখ্য মিছিলের মতো ঝরাপাতার কান্নায়
টুপটাপ শিশিরের লাবণ্যে
শিরা উপশিরার অদৃশ্য ভাঁজে আটকে থাকা সুহাসিনী।
মায়াবী আবহে জড়িয়ে রাখে বুভূক্ষ
প্রেতাত্মার চাপা গোঙানি। নিমিষে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।
সুহাসিনীর বাঁধভাঙা জোয়ার অদম্য কৌতূহলে
ভেসে চলে দরিয়ার নীলাভ ফেনা।
ঘর্মাক্ত শিশির থেকে জলাধার নালা, ক্যানাল, নদী, মোহনা;
অবশেষে প্রশান্তেই শান্ত।
এরপর অণু পরমাণু লোনা জলের অফুরন্ত কষ্টগুলো
মানবীয় কোষ, কলা, অস্থিমজ্জায় দ্রবণ, দ্রাবকে একাকার হয়ে,
সহস্র আলোকবর্ষ পেরিয়ে বিস্মৃতির কৃষ্ণগহ্বরে আজ সুহাসিনী।
বেওয়ারিশ
শবদেহগুলো লাশ হয়ে যাচ্ছে
লাশের বিকারগ্রস্ত চাহনিতে
কবরস্থানগুলো শ্মশান হয়ে যাচ্ছে।
শ্মশানের ভস্মগুলো বাতাশে গন্ধ ছড়ানোর আগেই
বেওয়ারিশ কিশোরী ছাইওয়ালির খোরাক হচ্ছে।
কিশোরীর বিকারগ্রস্ত চাহনিতে
সভ্যতাগুলোও কবরস্থ হচ্ছে।
বেঁচে থাকার আদিম নেশায় অপলক
শকুন, বেওয়ারিশ, কিশোরী আর লাশ।
ফলে জন্ম নিচ্ছে আরেক বেওয়ারিশ,
বেওয়ারিশে বেওয়ারিশে ভরে যাচ্ছে শ্মশান।
শ্মশানে শ্মশানে ফুলে ফেঁপে উঠছে
ওই কিশোরী ছাইওয়ালির খোরাক।
আর প্রতিটি ছাইয়ের কণায়
ফুরফুরে প্রজাপতির মতো উড়ছে
অসংখ্য বেওয়ারিশ কিশোরীর আত্মা।
নৈঃশব্দের আহ্বান
এইতো বয়ে চলেছে নিরন্তর জীবন
যেন অনন্তকাল ধরে
দিবসের কাকডাকা ভোর থেকে
নিশিথে নিয়নের নিভু নিভু বাতির
সোনালিছটায় অলস বসে থাকা।
অদূরে টেক্সির ভেপু বাজানোর শব্দ
বিজ্ঞাপনের সাইন থেকে থেকে জ্বলে
পার্কের ইতোস্তত ছড়ানো কিছু বেঞ্চ
যেন নৈঃশব্দের আহ্বান
আমার কাছে এসো এবং শান্ত হও।
মানুষগুলো যন্ত্রের সাথে করেছে আড়ি
কে কার আগে ছুটতে পারে এই নিয়ে
তাই বিরামহীন মানুষের চলা।
থেমে যাওয়া মানেই ধ্বংস এবং পরাস্ত
অথবা চির শান্তিতে যন্ত্রণার প্রহর গোনা
পার্কের এই নৈঃশব্দের আহ্বানে।
এখানে বর্ণমালার বালাই নেই
বৃথা যাতনা নেই জীবন সায়াহ্নে কথা কহিবার
অথচ কী মধুর স্বপ্নের খেয়াযান।
সব যাতনার বীজের কণা
চিরতরে আজ হোক অবসান
শুধু রয়ে যাক দখিনা বায়ুর স্রোতে
এই নৈঃশব্দের আহ্বান।