× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কোথাও পৃথিবী নেই

হাসান রাজীব

১১ জুন ২০২৩, ১০:১৬ এএম । আপডেটঃ ২৯ জুলাই ২০২৩, ১৫:৩২ পিএম

১০,০০০ সাল। পৃথিবী ভীষণ উত্তপ্ত। জ্বলন্ত লাভাগুলো অগ্নিগোলকের কঠিন পাথরে পরিণত হয়েছে। পাহাড় থেকে জলপ্রপাতের পানির পরিবর্তে নেমে আসছে ফুটন্ত ধোঁয়াউড়া আগুনের লেলিহান শিখা। পাহাড়গুলো আগেই একেকটা নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে অবস্থা থেকে কালো স্তূপাকারের রূপ নিয়েছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির পরিবর্তে আগুন তরলাকারে নদীপথে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়ছে। বিশাল বিশাল সাগরে পানির কোনো অবশিষ্টাংশও নেই। সেখানে ফুটন্ত আগুন জ্বলতে জ্বলতে একেকটা সমুদ্র যেন একেকটা ব্লাকহোলে পরিণত হয়েছে।

অগ্নিসমুদ্রগুলো তার আশপাশের দেশ মহাদেশ শহর বন্দর নগরগুলো যেন গিলে খেতে চাইছে। নদীগুলো আগেই তাদের প্রবাহিত পথের জনপদগুলো ধ্বংস করতে করতে এসেছে। ক্ষেতের সবুজ ফসলগুলো কৃষ্ণ বর্ণের লতিকায় পরিণত হয়েছে। বড় বড় বন বনানী যেন বিশাল বিশাল একেকটা কয়লার স্তূপ। বনের গাছপালা ভয়ঙ্কর দাবানলে পুড়তে পুড়তে কয়লায় পরিণত হয়ে গেছে। সেসব বনে কোনো পশু পাখির লেশমাত্র নেই। ছোটো বড় সব পশু গরমে গরমে আগুনের তাপে জ্বলতে জ্বলতে প্রথমে শীর্ণকায় পরিণত হয় পরে একময় পশুগুলোর মরদেহ বনজঙ্গলের বিভন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পাখিগুলো উপরে উড়তে উড়তে নিচে গাছের ডালে আর ফিরে আসেনি। কারণ তাদের বসবাস করার জন্য গাছইতো নেই।

ফুটছে পৃথিবী 

শুধু যেখানে অতি ঘন জনবসতি ছিলো সেখানে কিছু মানুষের দেখা মিলেছে। সেখানকার মানুষগুলো যন্ত্র এবং বিরূপ প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকার সর্বশেষ চেষ্টাটুকু চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের দৈহিক গঠনেও এসেছে পরিবর্তন। অতি দীর্ঘকায় মানুষগুলো হয়ে গেছে বেটে ও বামনাকৃতির।  মানুষের হাত মাথা শরীর হয়ে গেছে ক্ষুদ্রকায় কিন্তু পা দুটো যেন সেই তুলনায় কিছুটা লম্বাটে। এর অবশ্য একটা কারণও আছে। কারণ হলো পৃথিবীতে এখন অতি উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ। উষ্ণ মাটি ও গরম থেকে বাঁচতে মানুষগুলো মরুভূমির উটের মতো হয়ে গেছে। তবে গবেষণায় তারা এগিয়েছে বহুদূর। চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র এখন ছোটো শিশুদের খেলনা। যখন খুশি যেকোনোটা নিয়ে শিশুরা খেলতে থাকে যেন। 

বড়দের গবেষণা আরো বিস্তৃত। মহাবিশ্বের সর্বশেষ নক্ষত্রমণ্ডলীর নাড়ি নক্ষত্র তাদের জানা। প্রথম মহাশূন্য ছাড়িয়ে তারা প্রথম আসমানের প্রান্তসীমা আবিষ্কারের নেশায় তারা মত্ত। তৈরি করেছে কল্পনার গতিতে চলা অতি আলোকরশ্মিকে হার মানিয়ে চলা নভোযান।

অতিব শক্তিশালী আসোয়া যান তৈরির সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, এই আসোয়াযান দিয়ে মহাবিশ্বের যেকোনো বাঁধা অতিক্রম করে আসমানের সর্বশেষ প্রান্তে পরিভ্রমণ করা যায় যেখানে নক্ষত্রমণ্ডলীর আবাস শেষ। এমনকি যেখানে কোনো নক্ষত্রমণ্ডলীর আলোক রশ্মিও পৌঁছেনি। সেখান থেকেই ছুটতে শুরু করবে এই আসোয়াযান। 

পৃথিবীর রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায়ও এসেছে আমূল ও সর্বশেষ পরিবর্তন। আলাদা ও ভাগ ভাগ করা কোনো রাষ্ট বা সমাজব্যবস্থা এখন আর নেই। সমগ্র পৃথিবী একটা দেশ, একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ। আর একটিমাত্র রাষ্ট্রের মানুষগুলোর একটায় রাজনীতি, একটায় সমাজনীতি, একটায় অর্থনীতি, একটায় পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা আর তা হলো, পৃথিবীর আয়ু যখন শেষ তখন যেভাবেই হোক পৃথিবী থেকে দূরের কোনো মহাবিশ্বের কোথাও সবুজ বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা এবং ততদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা।

শহর বন্দর নগর ব্যবস্থা ধারণার পরিবর্তন হয়েছে অনেককাল আগে থেকেই। কেননা তারা জেনে গেছে, এই শহর বন্দর নগর ব্যবস্থার ধারণাগুলো এসেছে বস্তুবাদ ও পূঁজিবাদ থেকে, আর বস্তুবাদ পূঁজিবাদসহ সব ধরনের বাদ অনুবাদেও শেষ হয়ে গেছে কয়েক হাজার বছর আগেই। এগুলো এখন আদিম যুগের ধারণা বলে গণ্য করা হয়। এখন আধুনিক সভ্যতা বলতে আলোক সভ্যতা ও শব্দ সভ্যতার সংমিস্রণে এক নতুন গঠন কাঠামোতে মানুষের চলাফেরা। 

যেন ফুটন্ত কড়াইয়ে জ্বলছে সবুজ পৃথিবী 

এখানে আলোক সভত্যার একটা ধারণা দেয়া যেতে পারে। আলোক সভ্যতা মূলত আলোক রশ্মিকে কেন্দ্র করে। অতি উজ্জ্বল আলোক রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের বস্ত ও অবস্তু বিষয়গুলো পরিচালনা করা এবং সেগুলো মানবকল্যাণে কাজে লাগানো।

এভাবে আরো কয়েক হাজার বছর ধরে চললো মানুষের গবেষণা। পৃথিবীর অবস্থা এখন আরো করুণ। একেবারে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে পৃথিবী। যেকোনো সময় প্রচণ্ড ভূমিকম্প অথবা বিশাল অগ্নিচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে সমগ্র পৃথিবী। এখন পৃথিবীর অধিবাসী বলতে কিছু গাবেষক মাত্র বেঁচে আছে। বাদ বাকি মানুষ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আছে শুধু কয়েকজন বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত একদল গবেষক। এই গবেষক দলও তাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের অত্যাধুনিকতায় আর মাত্র কয়েকশ বছর বাঁচতে পারে। এরপর আর কোনো মানুষ মহাবিশে^ অবশিষ্ট থাকবে না। তাই এখনই মানুষের নতুন প্রজন্মের বংস বিস্তার জরুরি। আর তার জন্য প্রয়োজন মানুষের বসবাসের উপযোগী সবুজ জলজ অনুকূল আরেকটি পৃথিবী। অথচ মহাবিশে^র কোথাও এ ধরনের কোনো গ্রহের সন্ধান মেলেনি। তবে এখনো আশা ছাড়েনি তারা। চলছে গবেষণা, অনুসন্ধান। হয়তো মহাবিশে^র কোথাও না কোথাও মিলতে পারে নতুন পৃথিবী। বেঁচে থাকা শেষ মানুষটার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত চলবে এই প্রচেষ্টা। এছাড়া আর কিছু করার নেই পৃথিবীর মানুষের।

অচিরেই থেমে গেছে পৃথিবীর শব্দ, থমকে গেছে পৃথিবীর গতি। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে কয়েকটি মহাদেশ তামা হয়ে যাওয়ার খবর। সাগরগুলো মরুভূমি হয়ে গেছে। সূর্য আর কোনো আলো দিতে চাইছে না। অন্ধকার হয়ে আসছে সমগ্র পৃথিবী। শুধুমাত্র পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে একটি মান মন্দিরে টিপ টিপ করে জ্বলছে বাতি। পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের হাজার বছর ধরে গবেষণার ফসল এই গবেষণাগারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় রয়েছে কয়েকজন বিজ্ঞানী। ইতোমধ্যে তারাও জেনে গেছে পৃথিবীর শেষ সময় আসন্ন। আর এজন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের নভোযান। মহাবিশ্বের যেকোনো পরিবেশে এই নভোযানটি টিকে থাকবে অন্তত কয়েক লক্ষ বছর।

এখন প্রস্তুতি চলতে নভোযানটিতে বিজ্ঞানীদের আসন গ্রহণের। আর খুব বেশি দেরি করা সম্ভব নয়। সাহারা মরুভূমিতে চলছে প্রচণ্ড অগ্নিঝড়। হিমালয় ধসে গেছে। আলপ্স পর্বমালা প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে গভীর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার কোনো অস্তিত্ব নেই। এশিয়া মহাদেশের নিশানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোমা ফোটানোর মতো একটা অবস্থার জন্য পৃথিবী এখন প্রস্তুত। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা। তারপরই মহাশূন্য এবং ব্রহ্মাণ্ড থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে বুড়িয়ে যাওয়া চিরচেনা এই সবুজ পৃথিবী।   

ঠিক সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড গতিতে ড. নাহিনদের এয়ার স্পেসশিপটা উড়াল দিলো মহাশূন্যে। এ যাত্রায় হয়তো নাহিনদের টিমের সকল সদস্য রেহাই পাবে কিন্তু সেই আদিম পৃথিবীর কি অবস্থা তা তারা কেউ জানে না। হয়তো এতোক্ষণে মহাপ্রলয়ের ধ্বংসলীলায় ইহকাল সাঙ্গ করেছে পৃথিবী। অথবা এলিয়েনরা সেটিকে তারা তাদের বাসযোগ্য করে নিচ্ছে। নাহিনরা এখন তাই পৃথিবীর সকল আশা পরিত্যাগ করে মহাশূন্যে নতুন আবাসের খোঁজে, নতুন পৃথিবীর সন্ধানে চলেছে।

পথিমধ্যে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি থেকে নাহিনদের স্পেসশিপটা কিছুটা ফুয়েল নিয়ে নিল। অতি উজ্জ্বল এই নক্ষত্রই এখন পৃথিবীবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। পৃথিবী নামক গ্রহটার মতো মানুষরাও হয়তো কালের গহ্বরে চির ধূলিস্মাৎ হয়ে যেত যদি না প্রক্সিমা সেঞ্চরি থেকে মানুষ বেঁচে থাকার নতুন উপাদানের সন্ধান পেত, যেটা অনেক আগেই সূর্য তার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

সূর্য আসলে মাঝারি মানের একটি নক্ষত্র এবং এর আলোই ছিল পৃথিবীবাসীর শক্তির প্রধান উৎস। সেটা জানতে আদিম মানুষগুলো একটু সময় লেগেছিল বটে আর এই ১০,০০০ সালে এসে বিকল্প সূর্যও মানুষ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো। 

নাহিনের মনে পড়ছে গত বছর এক ব্রহ্মাণ্ড সম্মেলনে তার শিক্ষক ড. এভান বলেছিলেন, সূর্যের যে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তার সবটাই আসে সূর্যের মূল কেন্দ্রের বাইরে থাকা কয়েকশো কিলোমিটার পুরু গ্যাস থেকে। এই স্তরটিকে বলা হয় আলোকমণ্ডলী। মূলত পৃথিবী থেকে আমরা এই আলোকমণ্ডলী দেখি। এই আলোকমণ্ডলীকে বিজ্ঞানীরা সূর্যের ওপরিতল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ড. এভান বলেছিলেন, সূর্যের এই আলোকমণ্ডলী বা ওপরিতলের তাপমাত্রা হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সূর্যের অভ্যন্তরে মূল কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি থেকে দুইশো কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। ধারণা করা হয়, প্রায় ৫ বিলিয়ন কোটি বছর আগে সূর্যের সৃষ্টি। নীহারিকা থেকে যেমন নক্ষত্রের সৃষ্টি তেমনি সূর্যের সৃষ্টিও মাঝারিমানের বিস্তৃত অঞ্চলের নীহারিকা থেকে। সূর্যের মূল উপাদান হলো হাইড্রোজেন গ্যাস। সূর্যের প্রায় ৭৩ ভাগ হাইড্রোজেন গ্যাসে ভর্তি এবং ২৫ ভাগ হিলিয়াম ভরা। আর বাকি ২ ভাগে রয়েছে হাইড্রোজেন, নিয়ন, কার্বন এবং আয়রন।

আর এসব উপাদানের সমন্বয়ে বিকল্প সূর্যও আমরা তৈরি করেছিলাম কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। সূর্যে হিলিয়ামের পরিমাণ হাইড্রোজেনের তুলনায় বেশি হওয়ায় সূর্যের এখন অন্তিম অবস্থা। তাইতো পৃথিবীবাসী ছুটছে অন্য একটি নক্ষত্র জগতের সন্ধানে। যেখানে এই শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের নতুন আবাস গড়ে তুলবে।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎই একটা ধাক্কা খেল নাহিন। সম্বিত ফিরে সে চেয়ে দেখে অদূরেই মাত্র এক আলোকবর্ষ দূরে তাদের জন্য বিরাট হা করে অপেক্ষা করছে এক বিশাল ব্লাকহোল। ভাগ্য ভালো সে বিষয়টি আগেই টের পেয়েছে। না হলে এক ভয়ানক বিপদ তাকে একবারে ধ্বংস করে দিত।

ড. নাহিনদের স্পেসশিপটা এবার যথেষ্ট গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সেটি চলছে নিউট্রোবর্ষের গতিতে। আলোকবর্ষের মাপ শেষ হয়েছে পাঁচশ বছর আগেই। কারণ বিজ্ঞানিরা দেখেছেন আলোও তার চলার পথে কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। কেননা আলোর মধ্যে তাপ থেকে শুরু করে অনেক কিছু বিদ্যমান। তাই আলোর গতিকে পেছনে ফেলে এখন গতির পরিমাপ হয় নিউট্রোবর্ষের হিসাবে। এই হিসাবে গতিকে আলো ও দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে কল্পনায় অনুপ্রবেশ করানো সম্ভব হয়।

অর্থাৎ মানুষ তার কল্পনায় প্রতি সেকেন্ডে যতটুকু পথ অতিক্রম করতে পারে সেটাই হলো এক নিউট্রোবর্ষ। তার মানে নাহিনদের টিমের এই স্পেসশিপটা এখন কল্পনার গতিতে চলছে। এই পথ পরিক্রমায় অবশ্য বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। অর্থাৎ চালক বা পাইলটের মনকে সব সময় ফ্রেশ রাখতে হবে। না হলে যেকোনো মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

অনেক ঝড় তুফান পেরিয়ে তারা এখন সূর্য সীমানার বাইরে। নিজের চোখের সামনে সবুজ পৃথিবীকে ধ্বংস হতে দেখেছে। অবশ্য মাটির পৃথিবীর কোনো দোষ ছিল না তাতে। রক্ত মাংসের মানুষগুলো হয়ে পড়েছিল অতিমাত্রায় কপোট্রনিক। প্রযুক্তিকে নিয়ে গিয়েছিল কল্পলোকের দোর গোড়ায়। মুহূর্তেই বিকল্প মানুষ তৈরি যেন শিশুদের খেলার মতো বিষয় ছিল। মানুষগুলো চির যৌবনপ্রাপ্ত হয়েছে ৬০৯৯ সালের আগেই।

তথ্য এবং তার মাধ্যম বলে কোনো জিনিস ছিল না। কারণ কোনো ঘটনা ঘটাকালীনই অতিক্ষমতাসম্পন্ন মানুষেরা তা দেখতে পেত। এমনকি ওই ঘটনার পূর্বের এবং পরের ঘটনাও তারা অবলোকন করতে পারতো। ফলে বিপজ্জনক কিছু ঘটার সম্ভাবনা ছিল প্রতি ১০ বিলিয়নে একটি। আর এই ১০ সংখ্যাটির প্রতিও ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে মানুষ।

এক পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে আপডেট করতে থাকে। মানুষ অমরত্ব পাই। তবে সেটা ভিভিআইপি লোকদের জন্য বরাদ্দ করে দেয় বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছিল এই ব্যবস্থা সার্বজনীন করা হবে ১০,০০০ সালের পরে। এই সময়ের মধ্যে মহাশূন্যের অন্য জগতের বাসিন্দা অর্থাৎ এলিয়েনদের জীবন পরিক্রমা এবং তাদের গতিবিধি বিষদ পর্যালোচনা করা হবে। তাই সূর্যের কিরণকে অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে তা পৃথিবীর জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে অন্তত ১০,০০০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছিল। কথা ছিল আন্তঃগ্রহ এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থিতিশীলতায় আপডেট পৃথিবীকে পুরোনো সূর্যের বলয় থেকে বের করে অন্য কোনো নক্ষত্রের বলয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এই মেগা পরিকল্পনায় হঠাৎ বাধা হয়ে দাঁড়ায় এলিয়েনরা।

বিজ্ঞানীদের অবিরাম চেষ্টায় পৃথিবী যখন আপডেট হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে সৌরজগতের সকল গ্রহের সর্দারে পরিণত হলো। ঠিক তখনই ঘটে এক মহাবিপর্যয়। বিজ্ঞানীদের তৈরি করা আকাশে পৃথিবী রক্ষার মহাবেষ্টনী অতিক্রম করে দলে নেমে এলো এলিয়েন। প্রথমে তারা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করে পৃথিবীবাসীর কাছে। তারপর সঙ্গোপনে মিশে যায় মানুষের আত্মার সঙ্গে। ধীরে ধীরে পৃথিবীর সকল সাদা মনের মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে সেটাকে তারা কনভার্ট করে এবং সেখানে একটা বিধ্বংসী মনোভাব গড়ে তোলে।

মহাবিশ্ব ও আকাশমণ্ডলী থেকে একসময় হারিয়ে যাবে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী

এরপর তারা অতি সতর্কতার সঙ্গে এই ভূপৃষ্ঠের সকল গোপন অস্ত্র ভান্ডারের দখল নেই অত্যাধুনিক সাইবার সিস্টেমে। তারপর তারা একসময় হানা দেয় পৃথিবীর একমাত্র শক্তির উৎস সূর্য কিরণের দখল নিতে। এরপর কৃত্রিম সূর্যগুলোকেও তারা নিযন্ত্রণ করে ভুল পথে পরিচালনার চেষ্টা চালাই। আর তখনই অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম সূর্যগুলো সতর্ক বার্তা পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এদিকে আসল ও অদিম সূর্যটিও যেন ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে তার নির্দিষ্ট সীমানা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তাই পালানো ছাড়া পৃথিবীবাসীর দ্বিতীয় আর কোনো পথ খোলা রইলো না।   

এলিয়েনদের এই আগ্রাসী মনোভাব অবশ্য ড. এভানরা টের পেয়েছিলেন এক হাজার বছর আগেই। আর সে জন্যই তারা এলিয়েনদের স্পেসশিপের আদলে আরেকটা যান তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেন। একসময় সফলও হন। তবে এই স্পেসশিপটা এলিয়েনদের স্পেসশিপের তুলনায় আরও ১০ লক্ষ গুণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং দ্রুতগতির। ড. এভান আজ আর নেই। এলিয়েনদের সঙ্গে সম্মুখ নিউক্লিয়ার যুদ্ধে তিনি দেহত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার আবিষ্কৃত সেই স্পেসশিপের নতুন সংস্করণ ড. নাহিনদের এই স্পেসশিপটা।

ড. নাহিনদের টিম এটার নাম দিয়েছে ‘এনজিস্পেসনান’। মানুষের কল্পনাকেও যেন হার মানায় এটি। মহাজাগতিক আবিষ্কৃত-ননআবিষ্কৃত সব ধরনের ইফেক্টকে সে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে এবং নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করতে পারে। এর আল্ট্রা ভায়োলেট অতিরঞ্জিত কিরণ যেন আদিকালের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বর্ণনার সেই অলৌকিক নুরের বাস্তব প্রতিফলন। মহাশূন্যের যেকোনো ধরনের বাধা পেরুতে পারে এই ‘এনজিস্পেসনান’।

ইতোমধ্যে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে নাহিনদের যানটি। দূরে হঠাৎ হঠাৎই চোখে ভেসে উঠছে সৌরজগতের আবাসস্থল সেই গ্যালাক্সি ও মিল্কিওয়ের অনুজ্জ্বল শুভ্র আভা। নাহিন ভাবছে সে কি সৌরজগতের মিল্কিওয়েটাই দেখল নাকি অন্য কিছু। পরক্ষণে আবার ভাবে না এটা হয়তো তার মনের ভুল। তারা তো এখন কল্পনার যানে আছে। যেটা ড. এভানের পরিকল্পনায় তৈরি ‘এনজিস্পেসনান’। সৌরজগৎ পেরিয়ে আসতে এর প্রয়োজন মাত্র কয়েক সেকেন্ড। সেখানে তাদের পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েক ঘণ্টা।

এরই মধ্যে তার কণ্ঠনালি সংকেত দিল গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে। নিজের অজান্তে সে আরেকবার ঢোক গিলল। টিমের বাকি ৯ জনেরও হয়তো একই অবস্থা। তাই সে তার সঙ্গীদের চিয়ার্চ করে পৃথিবীর তৈরি কোমল পানীয়তে একটা হালকা চুমুক দিল। নিমিশে প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে গেল তার মস্তিষ্কে।

শুভ্রতার শীতল উষ্ণতা অনেকটা বেশিই মনে হলো। তাহলে কি পৃথিবীর তৈরি পানীয়তে মহাশূন্যে বেশি ক্রিয়া করে। কিন্তু এর আগেও তো সে মহাশূন্যে বহুবার এটা পান করেছে। এসব ভাবতে গিয়েই পর মুহূর্তেই স্পেসশিপের পাইলট জানালো, গাইস, আমরা শিগগিরই বাসযোগ্য নতুন এক গ্রহে ল্যান্ড করতে যাচ্ছি। আশা করছি এটাই হবে আমাদের আগামীর পৃথিবী। সবাই যে যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিন নতুন পৃথিবীতে অবতরণের।

নাহিনের বুকের ভেতরে এবার শুভ্রতার সেই সুবাতাস যেন আরও সহস্র গুণ বাড়িয়ে দিলো পাইলটের ওই আহ্বানে। অবশেষে তাহলে আমরা পেরেছি। আমরা পেয়ে গেছি পৃথিবীর মানুষের জন্য নতুন এক আবাসস্থল, ‘নতুন পৃথিবী’। আবারও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, আবারও জীবন, নতুন গবেষণা, নতুন স্বপ্ন। ক্রমেই দৃশ্যমান হওয়া সম্মুখের এক বিশাল বস্তুপিণ্ডের দিকে চেয়ে নাহিন যেন নতুন আশাই বুক বাধতে শুরু করলো। মনে মনে বিড় বিড় করে বলে উঠল, ‘এটাকে আমরা পৃথিবীর মতো সবুজ করে তুলব। যেখানে থাকবে না সাইবার কলুষতা, থাকবে না অস্ত্রের ঝনঝনানি আর কপোট্রনিক যান্ত্রিকতা’।

কিন্তু না, পরক্ষণেই বহুদূর থেকে ইথারে ভেসে এলো একটা সতর্ক সংকেত। তাতে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, ‘দূরে চলে যাও! আরও দূরে!! বহু দূরে!!! এখানে জীবন নেই, এখানে পৃথিবী নেই...।’

অগত্যা ড. নাহিনদের দৃষ্টি গেল আবারও দিগন্ত বিস্তৃত মহাশূন্যে। (সংক্ষেপিত)

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.