দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণসহ হারিয়ে যাওয়া ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় অনুষ্ঠিত হলো ‘বৈচিত্র্যের ঐকতান’ শীর্ষক বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসব।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত এই সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)।
ফাল্গুনের উচ্ছল-উজ্জ্বল বিকেল তিনটায় উদ্বোধনী আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। এতে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য অভিনেতা ও একুশে পদক বিজয়ী সংস্কৃতিজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
উৎসবের উদ্বোধন করে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর দেশ। বহুজাতিগোষ্ঠী, বহুধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে নানা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য রাখা উচিত না। প্রত্যেকের পরিচয় তিনি এ দেশের নাগরিক। কাউকে ছোট করে, দূরে রেখে, বঞ্চিত দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। সবার ভাষা, শিল্প সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এ দেশের সম্পদ। এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আরো সমৃদ্ধ করতে হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নসহ সব সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি রক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। সংস্কৃতি ধারণ, লালন ও চর্চার মাধ্যমেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহমান থাকে। এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার জাতীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পরিচর্যা, বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হিজড়াদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। তারা আমাদেরই সন্তান। তাদেরও অধিকার আছে বেচে থাকার। বাংলার সকল বৈচিত্র্যকে এক সুতোয় বাঁধার জন্য তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
এছাড়াও এ উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, উৎসবের আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড শান্তনু মজুমদার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষক ফারহা তানজিম তিতিল, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, একশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, প্রাণ ও জীব বৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ, আইইডির সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
উৎসবের শুরুতেই সঙ্গীত পরিবেশন করেন গানের দল ‘সং ফর গুড’। বক্তব্যের ফাকে ফাকে এরপর ময়মনসিংহে হিজড়া সম্প্রদায়ের দল ‘আলোর পথে’, শেরপুরের কোচ সম্প্রদায়ের দল কোচ ইউনিয়ন, সবশেষে বিবাড়িয়ার গানের দল লোক রঙের মাধ্যমের উৎসবটি শেষ হয়। উৎসবটি সঞ্চালনা করেন মাদল ব্যান্ডের সমন্বয়ক হরেন্দ্রনাথ সিং।