মানুষের দেহে যেসব পুষ্টির প্রয়োজন প্রায় সবই আছে কাঁঠালের মধ্যে। এক সময় বাঙালির পুষ্টির অভাব পূরণ করতো এই কাঁঠাল। এখনও বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টির জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন।
বাজারে সবেমাত্র পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। তবে পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। বিক্রেতার কথায় পাকা কাঁঠাল কিনে অনেকেই ঠকে যান! এ কারণে কয়েকটি কৌশল জেনে রাখা জরুরি।
বাজারে কাঁঠালের ছড়াছড়ি। স্বাদ, গুণ ও গন্ধের কারণে এটি আমাদের জাতীয় ফল। এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অসংখ্য। তবে বাজারে গাছপাকা কাঁঠাল খুব একটা পাওয়া যায় না, কারণ কাঁচা অবস্থায়ই কেটে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করা হয়। আর কাঁঠালের বাইরের থেকে যেহেতু ভেতরের অবস্থা বোঝা যায় না, তাই কাঁঠাল কিনে অনেকেই ঠকে যান। হয়তো আগ্রহ নিয়ে কাঁঠাল ভাঙা হলো, খেতে গিয়ে দেখলেন স্বাদ একেবারেই পানসে; অথবা এখনও ভালোভাবে পাকেনি।
ঠকে যাওয়ার ভয়ে কি কাঁঠাল কেনা থেকে বিরত থাকবেন? বরং শিখে নিতে পারেন কিছু উপায়। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কাঁঠালটি মিষ্টি হবে কি না।
জেনে নিন পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল চেনার উপায়
* মিষ্টি কাঁঠাল চেনার জন্য প্রথমে দেখতে হবে এর রং। পাকা কাঁঠালের রং হবে আলাদা। যদি দেখেন কাঁঠালটি এখনও অনেকটা সবুজ তাহলে বুঝে নেবেন যে এটি এখনও পাকেনি এবং খেতে মিষ্টি হবে না। যে কাঁঠালের রং হলুদ, সেটি কিনুন। কারণ কাঁঠালের রং হলুদ মানে সেটি পাকা।
* ভালো কাঁঠাল চেনার আরেকটি উপায় হতে পারে হাতের সাহায্যে চেপে দেখা। যে কাঁঠাল কিনতে চাচ্ছেন সেটি আলতো হাতে চেপে দেখুন। যদি দেখেন কাঁঠালটি এখনও শক্ত তাহলে সেটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। কাঁঠাল যদি পাকা হয় তবে সেটি অবশ্যই নরম হবে।
* ভালো কাঁঠাল কিনতে চাইলে এর গন্ধ পরীক্ষা করে দেখুন। যদি কাঁঠাল পাকা হয় তবে মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ আসবে। যা আপনি কাঁঠালের পাশে দাঁড়ালেই টের পাবেন। আর যদি কাঁঠাল নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখার পরেও কোনো গন্ধ না পান তবে বুঝবেন কাঁঠাল এখনও ভালো করে পাকেনি।
* কাঁঠাল কেনার সময় খেয়াল রাখুন তা যেন অক্ষত থাকে। কাঁঠালের কোনো অংশে যদি বাড়তি চাপ লেগে নরম হয়ে যায় তাহলে তা কিনবেন না।
* বেশি নরম কিংবা তুলতুলে কাঁঠাল কেনা থেকে বিরত থাকুন। এমন কাঁঠালের ভেতরের কোয়াগুলোও বেশি নরম থাকে।
* অনেক সময় কাঁঠাল কেটে তার পর বিক্রি করা হয়। এতে ভেতরের অংশ দেখে স্বাদ কিংবা অন্যান্য গুণাগুণ অনুমান করা যায়। এ ধরনের কাঁঠাল কেনার ক্ষেত্রে ভেতরের কোয়াগুলো যেন অক্ষত, নরম ও তাজা থাকে এমন দেখে কিনুন।
এবার জেনে নিন কাঁঠালের উপকারিতা
কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
- কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ সামান্য। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম।
- কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। এই পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্য কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপে উপশম করে।
- কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
- কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন-সি তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে এই ভিটামিন-সি।
- কাঁঠালে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। যা আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী।
- বদহজম রোধ করে কাঁঠাল। এই ফল আঁশালো হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে।
- কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন, যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।
- কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণ খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ, যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- এই বৃহৎ ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। যা মানব দেহের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালীকরণে ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
- কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এই ভিটামিন বি৬।
- ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।
- চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো ক্যামিক্যালস। যা মানব দেহের জন্য উপকারী।
- কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের কারণে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে এটি ওজন কম বাড়িয়েই যোগাতে পারে অনেক এনার্জি।
- কাঁঠাল বিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি। মাছ, মাংস যাদের কম খাওয়া হয় তাদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল বিচি উৎকৃষ্ট খাবার।
- কাঁঠালবিচির জীবানুনাশক গুণও রয়েছে। এটি Escherichia coli I Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান Jacalin এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
- এতে থাকা পটাশিয়াম ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তথ্যসূত্র : পুষ্টিবিদদের গবেষণা এবং উইকিপিডিয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh