- প্রতীকী ছবি
সোমবার ছিল পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে পলাশ বনেও লেগেছে আগুন। বসন্তের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হচ্ছে ভালোবাসা দিবস এবং আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিনটি দিবসকে ঘিরেই রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ফুলের কদর।
একাধিক কবি বলেন, শীতের আড়মোড়া ভেঙে বসন্ত আজ। প্রকৃতিতে ঝরা পাতার বিষন্নতা ছাপিয়ে ফাগুন এসেছে নতুন রঙে, সতেজ রূপে। প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের মনও যেন পাখা মেলে এসময়। এজন্যই বুঝি বসন্তকে ডাকা হয় ঋতুরাজ নামে। বলা হয় বসন্ত বাতাসে থাকে ভালোবাসার সৌরভ। সে কথাকে আরো সত্য করে তুলতেই যেন ফাগুনের প্রথম দিনটি একইসাথে ভালোবাসার দিনও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পহেলা ফাল্গুনে।
ফুলের পাশাপাশি উৎসবপ্রিয় বাঙালি বসন্তের প্রথম দিনটি উদযাপন করে নিজেকে উজ্জ্বল হলুদ রঙে রাঙিয়ে। আবার এদেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হচ্ছে টকটকে লাল রঙে মুড়িয়ে। তবে গতবছর থেকে এই দু’টি বিশেষ দিন একই দিনে পালিত হচ্ছে বলে রঙে রঙে মাতোয়ারা হয়ে আসে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় ফুল এবং মাথায় ফুলে মোড়ানো রিং পড়ে ঘোরাফেরার এক দারুণ সময় এই দিনটি। বাঙালি তার স্বভাবসুলভ উৎসব মুখরতাকে আরো অর্থবহ করতেই যেন হলুদ আর লালের গন্ডি পেরিয়ে পোশাকে নিয়ে এসেছে নতুন রঙের বাহার। যদি দিনের প্রথম ভাগে প্রাধান্য পায় বসন্তকে বরণের আয়োজন, তো দিন শেষ হয় ভালোবাসার ছন্দে।
বসন্ত বরণ ও ভালোবাসার দিনটি একই দিনে হওয়ায় দিনটির সাজসজ্জায় থাকা চাই বিশেষত্ব। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও সেকথা মাথায় রেখে এবারের ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের কালেকশনে রয়েছে নতুন বৈচিত্র। হলুদ, লালের পাশাপাশি এবার নীল, সাদা, সবুজও নজর কাড়ছে সাধারণের। বিভিন্ন ফুলেল নকশার পাশাপাশি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে জ্যামিতিক নকঁশাও। মিলিয়ে পরেছে শাড়ি-পাঞ্জাবির কাপল।
ভালোবাসার উৎসবের ছোঁয়া শহরের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা গ্রাম-বাংলায়। মুঠোফোনের খুদেবার্তা, অনলাইনের ই-মেইল আর ফেসবুক চ্যাটিংয়ে প্রেমকথার কিশলয়। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুটবে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে তালে তাল রেখে ভালোবাসার জয়গানে সুর মেলাবে স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাইবোন সবাই। বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, এমনকি সহকর্মীর মাঝেও দিনভর হবে ভালোবাসার ভাব বিনিময়। ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, বাংলা একাডেমির বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, হাতিরঝিল, সংসদ ভবন, যাদুঘর, চিড়িয়াখানা, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলবে প্রেমিক- প্রেমিকার ভালোবাসার অভিসার। দিনভর চলবে চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, আংটি, প্রিয় পোশাক, বই কিংবা রক্তগোলাপ বিনিময়। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আজ 'গাঁটছড়া' বাঁধবে অনেকেই।
শুধু তাই নয়, প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে দিনটি অন্য রকমের। ঢাকার প্রতিটা দর্শনীয় স্থান, পার্ক ও অভিজাত রেস্তোরায় চুটিয়ে আড্ডা জমবে। সর্বত্রই যুগলদের উপস্থিতি দেখার মত। আহসান মঞ্জিল, আমুলিয়া, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় থাকবে উপচেপড়া ভীড়। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের রঙিন পোশাক পরে প্রেমিক যুগলরা হাতে হাত ধরে হাঁটবে।
এদিকে ফাগুনের প্রথম তেজোদীপ্ত রবির আলোর নাচনে লাগবে দোলা উৎসবপ্রিয় বাঙালির সহজ-সরল মনে। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে সবাই। বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল বীর বাঙালি সেনারা। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত পরিণত হবে এক অনন্য উৎসবে। ফুল হাতে নিয়ে বাসন্তী রংয়ের শাড়ি আর সফেদ-শুভ্র পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা বইমেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উদ্যানমালা, ক্যাফেতে বসন্ত আবাহন করবে নানা নৈবদ্যে, নানা অনুষঙ্গে।
এদিকে বসন্তে গ্রামবাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙায় বাসন্তী রঙে। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তালের পিঠা উৎসবও। দিনটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। দিনটিকে ঘিরে মোবাইল ফোন, ফেইসবুক,টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালায় শুভেচ্ছাবিনিময়। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ দিনভর চলবে আনন্দ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh