× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় আটকে গেল জাপানি সামুদ্রিক খাবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

জাপানের সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ, নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতার পরে জাপানি সামুদ্রিক খাবারের সব আমদানিও নিষিদ্ধ করবে চীন। বুধবার সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রচার করেছে, চীন জাপানকে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে।

তবে জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা সাংবাদিকদের জানান, টোকিও চীন সরকারের কাছ থেকে সামুদ্রিক খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি পায়নি। এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জাপানের সামুদ্রিক খাবার চীনে রপ্তানি করলেও, তারা কোনো বাজার খুঁজে পাবে না।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, যদি জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি তার মন্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তবে চীনকে পাল্টা কঠোর এবং দৃঢ় ব্যবস্থা নিতে হবে। এশিয়ার শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক বিবাদের সর্বশেষ ঘটনা এটি। 

জাপানের নতুন এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি বলেছেন, তাইওয়ানের ওপর চীনের আক্রমণ জাপানের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমন হলে জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

এই মন্তব্যের পরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে।

চীন জাপানের এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া চীন তার নাগরিকদের জাপান ভ্রমণ না করার আহ্বানও জানিয়েছে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে চীন জাপানে যাওয়ার প্রায় ৫ লাখ ফ্লাইট বাতিল করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মাত্র কয়েক মাস আগেই বেইজিং জাপানি সামুদ্রিক খাবারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে শিথিল করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা দুই বছর আগে টোকিওর ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত বর্জ্য পানি সমুদ্রে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কারণে আরোপিত হয়েছিল।

২০১১ সালের ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামির কারণে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তাতে প্রায় ৮৮০ টন বিপজ্জনক পদার্থ কেন্দ্রের ভিতরে রয়ে গিয়েছিল। এই দুর্ঘটনাটি জাপানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সেই বর্জ্য পরিশোধিত করে সমুদ্রে ছাড়ে জাপান। চীন জাপানকে জানিয়েছে, দূষিত পানি ছাড়ার ওপর আরো নজরদারির প্রয়োজনের কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হয়েছে। জাপানের সরকারি সম্প্রচারক এনএইচকে এবং কিয়োডো সংবাদ সংস্থা সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে।

এদিকে জাপানও চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সোমবার চীনে তার নাগরিকদের নিরাপত্তা সতর্কতা বাড়াতে এবং জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলতে সতর্ক করেছে। টোকিও বলেছে, সংসদে তাকাইচির মন্তব্য সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।  যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই উত্তেজনা সমাধানে কোনো অগ্রগতি আসন্ন নয়।

গত জুন মাসে চীন বলেছিল, তারা জাপানের ৪৭টি প্রিফেকচারের মধ্যে ১০টি বাদে বাকি সবগুলো থেকে জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি পুনরায় শুরু করবে। জাপানের অনেক কম্পানির জন্য চীনের নেওয়া নতুন পদক্ষেপ একটি যন্ত্রণাদায়ক ধাক্কা হতে যাচ্ছে। জাপানের কৃষিমন্ত্রী নোরিকাজু সুজুকি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ৭০০ জাপানি রপ্তানিকারক চীনে সামদ্রিক খাবার চালানের জন্য পুনরায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি অনুমোদিত হয়েছে।

২০২৩ সালের নিষেধাজ্ঞার আগে চীন ছিল জাপানের শীর্ষ ঝিনুক ক্রেতা এবং সামুদ্রিক মাছের একটি প্রধান আমদানিকারক। এ ছাড়া জাপানে চীনা নাগরিকদের ভ্রমণে বাধা জাপানের নড়বড়ে অর্থনীতির জন্য একটি সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের মতে, জাপানের সামগ্রিক মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৭ শতাংশ পর্যটনের অবদান এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান চালিকাশক্তি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জাপানে চীনের মূল ভূখণ্ড এবং হংকং থেকে আসা পর্যটকরা মোট পর্যটকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টিরও বেশি চীনা বিমান সংস্থা জাপানগামী রুটে টিকিট ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। একজন বিমান সংস্থা বিশ্লেষক অনুমান করেছেন, প্রায় ৫ লাখ টিকিট ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিরোধের কারণে শনিবার বেইজিংয়ে শুরু হতে যাওয়া দুই দেশের শিক্ষাবিদদের বার্ষিক সভাও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পশ্চিম জাপানের হিরোশিমা শহরে ২১ নভেম্বর জাপান-চীন বন্ধুত্বের প্রচারের আরেকটি অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। জাপানি শিল্পীরাও এই বিক্ষোভের কবলে পড়েছেন।

বিনোদন সংস্থা ইয়োশিমোতো কোগিও মঙ্গলবার জানিয়েছে, সাংহাইয়ে আসন্ন একটি উৎসবে জাপানি কৌতুকাভিনেতাদের পরিবেশনা অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে বাতিল করা হয়েছে। চীনে আসন্ন জাপানি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীও স্থগিত করা হয়েছে, অন্যদিকে একটি জাপানি বয় ব্যান্ড এই সপ্তাহের শুরুতে গুয়াংজুতে একটি ফ্যান ইভেন্ট বাতিল করেছে।

সূত্র : রয়টার্স

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.