ছবিঃ সংগৃহীত।
ইতালিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সিসিলির তুষারঢাকা মাউন্ট এটনার অগ্ন্যুৎপাত দেখতে হাজার হাজার পর্যটক হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, যার ফলে সড়কগুলো যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত ভীড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে উদ্ধারকর্মীদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এমনটি জানিয়েছে ইতালির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মাউন্ট এটনা নিয়মিতভাবে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, যা কয়েক দশক ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। তবে ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাত এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে বিপুল সংখ্যক ফটোগ্রাফার, পর্বতারোহী এবং প্রকৃতিপ্রেমী এই ভয়ানক সুন্দর প্রাকৃতিক লীলার অভিজ্ঞতা নিতে উপচে পড়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সতর্কতা এবং নিষেধাজ্ঞার একাধিক আহ্বান শোনা গেছে।
সিসিলির আঞ্চলিক সিভিল প্রটেকশন প্রধান সালভো কোচিনা রবিবার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রতিদিন প্রায় ১,০০০ মানুষের একটা ধারাবাহিক প্রবাহ দেখা যাচ্ছে, এবং রাস্তার প্রান্তে বেপরোয়া পার্কিং এর ফলে জরুরি সেবা যানবাহনগুলোর চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।” তিনি আরও বলেন, "রাতের বেলায়, মানুষের সংখ্যা বাড়লে পড়ে যাওয়ার এবং তুষারে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।"
অ্যাড্রানোর মেয়র ফাবিও মাঞ্চুসো একদিন আগে তার শহরের কাছে এটনা মাউন্টের পাদদেশে সতর্কতা জারি করে বলেন, “এটনা আমাদের কাছে একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপস্থাপন করছে: লাভার স্রোত আমাদের অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এই প্রাকৃতিক ঘটনাটি দেখার জন্য আরও কাছে যেতে চাচ্ছে, কিন্তু এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক!” তিনি আরো বলেন, তুষারপাতের সাথে ল্যাভার সংঘর্ষ দ্রুত তুষারের গলনের ফলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যা উচ্চ-চাপের বাষ্প তৈরি করে এবং তা পাথর এবং গলিত লাভাকে অনেক দূরে ছুঁড়ে ফেলে, যা "যেকোনো ব্যক্তির জন্য মারাত্মক বিপদ!" এই কারণে তিনি একটি আদেশ সাইন করেছেন, যাতে কেউ লাভার সম্মুখভাগের কাছে যাওয়ার অনুমতি না পায়।
এটনার ঢালের আরেকটি শহর রাগালনাও জনগণকে ল্যাভা স্রোতের থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার (প্রায় ৫৫০ গজ) দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
তবে, কর্তৃপক্ষের এসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, লোকজন এখনও লাভা স্রোতের কাছাকাছি গিয়ে ছবি ও ভিডিও আপলোড করছে। একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মানুষ তুষারের ওপর স্কি করছে এবং দূর থেকে লাভার স্রোত ও গলিত পদার্থ পড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। একটি ভিডিওতে, এক দর্শনার্থীর শরীরের ছায়া লাভার পেছনে পড়ে যেতে দেখা যায়।
ভূতত্ত্ব পর্যটন সংস্থা গো-ইটনার মুখপাত্র জুলিয়া ক্যাম্পিসি বলেন, “কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, তবে স্থানীয় পৌরসভাগুলো এখন লাভার স্রোতের এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।” তিনি বলেন, গো-ইটনা এখন আর পর্যটকদের লাভা স্রোতের কাছে নিয়ে যাচ্ছে না এবং স্থানীয় বিধিনিষেধ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছে।
তিনি আরও জানান, "এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক যখন গরম লাভা ঠান্ডা তুষারের সাথে মিলিত হয়। কিছু গভীর জায়গায়, এটি তুষারের তাত্ক্ষণিক (এবং বাস্তবিকভাবে বিস্ফোরক) বাষ্পীভবন ঘটাতে পারে, এতে গরম পাথর যেমন গুলির মত ছুটতে পারে।" এমন ঘটনা এমনকি বিশেষজ্ঞদেরও চমকে দিতে পারে।
জাতীয় ভূতাত্ত্বিক ও আগ্নেয়গিরি ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্তেফানো ব্রাঙ্কা এটাকে একটি "সাধারণ শিখরের অগ্ন্যুৎপাত" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “যেসব মানুষ লাভা স্রোতের খুব কাছাকাছি চলে আসেন, তাদের জন্য বিপদ হতে পারে, কারণ লাভার তাপমাত্রা তুষারের দ্রুত গলন ঘটাতে পারে, যা ছোট হাইড্রোম্যাগম্যাটিক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে।”
এদিকে, জরুরি সেবার কর্মীরা সম্প্রতি পরিপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। গত সোমবার আটজন পর্যটক হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাদের উদ্ধার করতে হয়েছে, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এটনা নিউজ ২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে মানসিক চাপজনিত কারণে সাহায্য প্রয়োজন হয়েছে।
বেলপ্যাসো শহরের মেয়র কারলো কাপুটো মঙ্গলবার ইতালির টেলিভিশনে বলেন, “এটনা অন্যন্য প্রাকৃতিক উদ্যান নয়। এখানে আমাদের একটি জাতীয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, এবং এটি অন্য পার্কের তুলনায় আলাদাভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, এক নতুন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান, যা পর্যটকদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ইতালিতে অতিরিক্ত পর্যটনের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি ব্যাপার। গত বছর, ভেনিস ৫ ইউরো প্রবেশ ফি পরীক্ষা করেছে, ফ্লোরেন্স গলফ কার্ট এবং উচ্চশব্দের স্পিকার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, এবং গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয় দ্বীপগুলিতে ক্রুজ শিপের আগমন সীমিত করার জন্য উচ্চ ট্যাক্সের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
অগ্ন্যুতপাত-এর ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সূত্রঃ দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh