× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও গাজাবাসীর দিন শুরু হলো ধ্বংসস্তূপ ও গোলাবর্ষণের মধ্যে।

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৭ পিএম

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আনন্দ উদযাপিত হলেও বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের নতুন বিমান হামলায় গাজার আকাশ আবারো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে।


গাজার বাসিন্দা সাঈদ আল্লৌশ বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির অপেক্ষায় ছিলাম এবং অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। এটি ছিল ৭ অক্টোবরের পর সবচেয়ে আনন্দময় রাত।” কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি বলেন, “হঠাৎ করেই জানতে পারলাম ৪০ জন নিহত হয়েছে, আমাদের আনন্দ দুঃখে পরিণত হলো, যেন কোনো ভূমিকম্প ঘটেছে।”


এই বিমান হামলাগুলো সংঘটিত হয় কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর, যা কার্যকর হওয়ার কথা রবিবার থেকে। এএফপি হামলার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।


অন্যদিকে, গাজার বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ শিশু ও ২৫ নারী রয়েছে এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে।


ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গাজার ধ্বংসস্তূপে মানুষের আনাগোনা বাড়ে। অনেকেই তাদের নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজতে এবং বেঁচে থাকা জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে ছুটে আসেন। গাজার বিভিন্ন অংশে একই দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে ২৪ লাখের বেশি মানুষ যুদ্ধের কারণে অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের মর্গে নিহতদের রক্তে স্ট্রেচারগুলো ভিজে যায়। গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতালে নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে শোকের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। অনেক আহত ব্যক্তিকে সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।


উদ্ধারকর্মী ইব্রাহিম আবু আল-রিশ জানান, “যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর যখন সবাই খুশি ছিল, তখন একটি পাঁচতলা ভবনে হামলা চালানো হয়, যেখানে ৫০ জনেরও বেশি লোক ছিল।”


মধ্যরাতে গাজার ধ্বংসস্তূপের মাঝে অনুসন্ধান চালান স্থানীয় বাসিন্দারা ও উদ্ধারকর্মীরা। গাজার বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্স চালক আবু আল-রিশ বলেন, “গোলাবর্ষণ এখনো চলছে, একের পর এক বাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে।”


মধ্য গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা মাহমুদ আল-কর্ণাওয়ি বলেন, “যতদিন চুক্তি কার্যকর না হবে, ততদিন গাজার মানুষ অরক্ষিত থাকবে। বিমানগুলো এখনো আকাশে ঘুরছে, গুলি থামেনি, পরিস্থিতি খুবই কঠিন।”


নুসেইরাত শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তারা পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। বাস্তুচ্যুত মোতাজ বেকির বলেন, “আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগামী তিন দিনে এমন এক রক্তপাতের আশঙ্কা করছি, যা আরও ভয়াবহ হতে পারে।”


আন্তর্জাতিক দাতব্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস’ (এমএসএফ) জানায়, গাজায় কেউ এখনো নিরাপদ অনুভব করছে না। সংস্থাটির জরুরি সমন্বয়কারী আম্যান্ডে বাজেরল বলেন, “গত রাতে ২০ মিনিটের জন্য উল্লাসধ্বনি শোনা গিয়েছিল, তারপরই রাত হয়ে ওঠে এক অত্যন্ত রক্তাক্ত অধ্যায়।”


ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গাজা চুক্তি অনুমোদন করেছে, তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস রবিবার থেকে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য এক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেই হামলায় ১,২১০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। পাল্টা সামরিক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬,৭৮৮ জন নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই বেসামরিক। জাতিসংঘ হামাস-শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.