ছবিঃ সংগৃহীত।
এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। আজ (৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্টের স্থানীয় সময় সকালে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। তবে দেশটিতে ৬টি পৃথক টাইম-জোন থাকায় ভোটগ্রহণ শুরুর সময়কাল প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই ভিন্ন ভিন্ন। আর এরপরই মিলবে চূড়ান্ত ফল।
জনমত জরিপ অনুযায়ী, দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার। মূলত ‘সুইং স্টেট’
অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে কমালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের
জয়-পরাজয়। ইতোমধ্যেই ৮ কোটি ১০ লাখেরও বেশি আগাম ভোট পড়েছে।
নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও আরও চারজন প্রার্থী লড়াই করছেন। তারা হলেন, গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবার্টারিয়ান পার্টির চেজ অলিভার, স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তবে নির্বাচনে তারা তেমন বড় কোনো পার্থক্য করতে পারবেন না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে। কারণ যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জয়ী হন, সেক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে পাবে যুক্তরাষ্ট্র—যিনি ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন।
এই মুহূর্তে শেষ বেলার প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন দুই প্রার্থী। গতকাল সোমবার ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় এক প্রচারণা সভায় বলেন, “আমি এমনকি ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। গত ৬২ দিনের একটি দিনও ছুটি নিই নি। যদি এই নির্বাচনে আমরা হেরে যাই, তাহলে সেটির দায় হবে একান্তই আমাদের। তবে যদি আমরা সব নাগরিকের ভোট নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।”
অপরদিকে, একই দিন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেনটাউনে এক প্রচারণা সভায় কমলা হ্যারিস বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে জনগণের সাড়া দেখে আমি অভিভূত। আমার বিশ্বাস নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। এর আগে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভাষণ দেন তিনি। মিশিগানে আরব বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম ভোটারদের কাছে টানতে তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে নিজের ক্ষমতার আওতায় সবকিছু করবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে খারাপ করার পর বয়সজনিত কারণে দলীয় চাপে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। গত জুলাইয়ে তার স্থানে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৩টিতে কমলা নাকি ট্রাম্প—কে জিতবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। সমস্যা দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য—পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও জর্জিয়াকে নিয়ে। এই সাত অঙ্গরাজ্যের ফল কমলা–ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।
নানা জরিপের ফল বলছে, দুজনের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নির্বাচনে জয়–পরাজয় ঠিক করে দিতে পারে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য। তাই শেষ মুহূর্তে দুজন চষে বেড়িয়েছেন এসব অঙ্গরাজ্য।
২০২০ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় বসার সময় চলছিল করোনা মহামারি। তখন মহামারি পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামলেছিল বাইডেন প্রশাসন। তবে এ করোনাই পরে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন অর্থনীতিতে চাপ আসায় বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য, দেখা দেয় কর্মসংস্থানের অভাব। অভিবাসীদের নিয়েও শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি বাইডেন। এসবের জেরে তাঁর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।
মূলত এসব কারণেই বাইডেন ক্ষমতায় আসার কিছু সময় পর থেকে ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘদিনের আধিপত্য কমতে থাকে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে নামার পর ট্রাম্পকে দুবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এটিও তার জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে রোববার সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নানা ফৌজদারি মামলা ঘাড়ে নিয়ে চলা ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলেও সে কৃতিত্ব তার নিজের হবে না। বাইডেন প্রশাসনের প্রতি মানুষের অসন্তোষই তার জয়ের পেছনে কাজ করবে।
সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস–এর জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪৯ শতাংশ মানুষ কমলা ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ১ শতাংশ, অ্যারিজোনায় ৪ শতাংশ, নেভাদায় ১ শতাংশ, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা উইসকনসিনে ১ শতাংশ ও মিশিগানে ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় সশরীরে ভোট দেওয়ার পালা শেষ হবে। সাধারণত, যেসব অঙ্গরাজ্যের ভোট দ্রুত গণনা হয়, সেসব স্টেটের ফল রাতেই পাওয়া যেতে পারে।
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে সাধারণত অঙ্গরাজ্য ভেদে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা শুরু হতে পারে। মূলত সময়ের ব্যবধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনার সময়ে পার্থক্য দেখা যায়।
ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার নিজ নিজ আইন অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সময়সীমা ঘোষণা করা আছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ব্যালট গণনা ও কখন চিঠির মাধ্যমে আসা ভোট গ্রহণ করা যাবে, সে সংক্রান্ত আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। এ কারণে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের চূড়ান্ত ফলাফল নির্বাচনের পরের দিন বা তারও পরে জানা যাবে।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে বেশ কয়েক দিন লেগে গিয়েছিল। এবারও এমন হতে পারে যে নতুন প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ীদের নাম জানতে ৫ নভেম্বরের বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন দেখা দেবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh