গাজায় শিশুদের ওপর হামলার কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার শিশু ও নারীর মৃত্যুতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্স এ তথ্য জানায়।
গাজায় সশস্ত্র সংঘাতে শিশু হত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের বার্ষিক প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে তালিকায় রাখা হয়েছে, যা আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
এ তালিকায় ছয় ধরনের সহিংসতার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো হত্যা ও বিকলাঙ্গ করা, যৌন সহিংসতা, অপহরণ, শিশুদের নিয়োগ ও ব্যবহার, সাহায্য প্রবেশে অস্বীকার এবং স্কুল ও হাসপাতালে হামলা।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করে বলেন, ‘জাতিসংঘের এ পদক্ষেপ লজ্জাজনক।’ ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘এ সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।’
দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের সঙ্গে ইসরায়েলের বিতর্কিত সম্পর্ক রয়েছে, যেটি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আরো খারাপ হয়েছে।
এদিকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের বিরুদ্ধে নিপীড়নকারী দেশগুলোর জাতিসংঘের বার্ষিক কালো তালিকায় ইসরায়েলকে যুক্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এক্সে আলবেনিজ বলেন, শিশুদের অধিকার রক্ষা না করার বিষয়টি সত্যিই লজ্জাজনক। গাজায় ১৫ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা ও অসংখ্য আহত এবং ২০ হাজার শিশুকে এতিম করা উচিত ছিল না। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে শিশুদের হত্যা করেছে তাতে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন তা যথোপযুক্ত।
গত আট মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সংঘাতে এরই মধ্যে গাজায় ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ৩৬ হাজার ৭৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৮৩ হাজার ৫৩০ জন।
গত মাসে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত মরদেহের তথ্যের বরাতে জাতিসংঘ বলেছিল, আট মাসব্যাপী চলমান এ যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৭ হাজার ৭৯৭ শিশু নিহত হয়েছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রতি ১০ ফিলিস্তিনি শিশুর নয়জনই ভয়াবহ খাদ্য সংকটে রয়েছে।