× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বাংলা বর্ণমালায় নিজেদের ভাষা শিখবে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ত্রিপুরার শিশুরা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

০৮ এপ্রিল ২০২২, ০২:৩০ এএম

কোটবাড়ি শালবনের ভেতর পাহাড়ের কোলেই নির্মিত ‘ককবরক’ ভাষা শেখার স্কুল। ছবি: সংবাদ সারাবেলা

‘আমা’ মানে ‘মা’, ‘চেরাই’ শব্দের অর্থ ‘ছেলে’, ‘ভুব্রুইভুসা’ মানে ‘মেয়ে’। নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ত্রিপুরার মাতৃভাষা ‘ককবরক’ নিয়ে উচ্চারণগত ভিন্নতা থাকলেও ভাষাটি লিখতে ব্যবহার করা হয় বাংলা বর্ণমালা। তাদের ত্রিপুরাদের মাতৃভাষার আদিকাল থেকেই কোনও আলাদা বর্ণমালা নেই। মুখে মুখেই কালের গুটি কয়েক মানুষের মাঝে টিকে রয়েছে এই ভাষা। প্রাতিষ্ঠানিক কোন চর্চা না থাকায় কালের আবর্তনে বাংলাদেশ থেকে এই ভাষা হারানোর দিকেও এগুচ্ছিলো। এবারের মাতৃভাষা দিবসে এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মাণ করা হয় এই ভাষা শেখানোর স্কুল। এবারের নববর্ষে শুরু হবে ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম।

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর যে কয়েকটি পরিবার আছে তাদের মধ্যে প্রবীণরাই শুধু জানেন এই ভাষার ব্যবহার। এই ভাষা টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে ‘ককবরক’ ভাষা শেখানোর স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোটবাড়ি শালবনের ভেতর পাহাড়ের কোলেই নির্মাণ করা হয় স্কুলটি। স্বেচ্ছাশ্রমে স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মনিন্দ্র ত্রিপুরা। 

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ‘ককবরক’ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই স্কুল তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত ২৭ মার্চ বিকেলে স্কুলটির এক কক্ষ বিশিষ্ট স্কুল ভবনের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ- কুমিল্লার উপ পরিচালক শওকত ওসমান। 

ত্রিপুরা পল্লী ককবরক মাতৃভাষা স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মনিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, ‘ককবরক’ ভাষায় উচ্চারণগত ভিন্নতা থাকলেও, আলাদা কোন বর্ণমালা নেই। বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করেই লিখতে হয় এই ভাষা। আদি এই ভাষাটি নতুন প্রজন্মের ত্রিপুরারা যেন ভুলে না যায়- তাই এই উদ্যোগ। শুরুতেই প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এই ভাষা শেখানো হবে। চাইলে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর যে কেউ এই আদি ভাষাটি শিখতে পারে।  

স্থানীয় সংগঠক সজীব চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় লালমাই পাহাড়ের কোলে ৩৮টি ত্রিপুরা পরিবারের বসবাস। সালমানপুর, জামমুড়া, হাতি গাড়া এলাকায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর আনুমানিক ৫০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনা করছে। তাদের অনেকেই তাদের এই মাতৃভাষা বলতে জানে না। এই স্কুল নির্মাণের ফলে আদিবাসী এই জনগোষ্ঠী তাদের আদি ইতিহাস ধারণ করবে এবং জানতে পারবে। 

সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু বলেন, স্কুলটি কুমিল্লা এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জন্য আরেকটি মাইল ফলক। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এমন স্কুল বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার উন্নয়নের আরও একটি দৃশ্যমান যাত্রা। ত্রিপুরাদের ভাষা যেন হারিয়ে না যায়, তাই এ প্রচেষ্টা। ইতিহাসের মাইল ফলক। ভারতের ত্রিপুরা থেকে ককবরক ভাষার বই সংগ্রহ করে দিবো।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান জানান, উপজাতিদের ভাষা নিয়ে সরকারের নানান ধারাবাহিক কার্যক্রম চালু আছে। কুমিল্লার ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ককবরক ভাষা নিয়েও সরকার পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কাজ চলবে। নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সংস্কৃতি চর্চা নিয়মিত রাখতে হবে। নিজের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হলে মাতৃভাষার চর্চা করতে হবে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এই স্কুলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্বেচ্ছাশ্রমে আপাতত এই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। ককবরক ভাষা পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় আরও বেগবান হবে। স্কুলের জন্য ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা থেকে বই সংগ্রহ। পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্কুলের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। বাংলাদেশের আদি ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে একদিন গবেষণার বিষয় হবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.