ফাইল ছবি।
কিশোর কবি সুকান্ত লিখেছিলেন, অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিটমিট ক’রে চায়/ ‘কেমন করে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায়/ কত গ্রাম, কত পথ যায় স’রে স’রে/শহরে রানার যাবেই পৌছে ভোরে;/ হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন, জোনাকিরা দেয় আলো/ মাভৈঃ, রানার, এখনো রাতের কালো...
বর্তমান সময়ে এসে চিঠির সেই অবস্থা একেবারেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর ডাকবাস্কটি তারই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর পোস্ট অফিসের অস্থায়ী অফিসের সামনে ঝুলানো একটি চিঠির বাক্স। পরিত্যক্ত এ বাক্সটি শুধু ঝুলানোই আছে, সেটি কতদিন অব্যবহৃত তার পরিসংখ্যান নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। চিঠির বাক্স এভাবে ব্যবহার নেই। ঠিক কত বছর আগে এ বাক্সে চিঠি পড়েছে, তার হয়তো সঠিক তথ্য খুঁজেও পাওয়া যাবে না! কারণ এখন আর ডাক বিভাগ বা পোস্ট অফিসের সামনে ঝুলিয়ে রাখা চিঠিপত্রের বাক্সে চিঠি পড়ে না। কিন্তু ৯০ দশকের প্রথম দিকে যখন মোবাইল ফোনের বিস্তার ঘটেনি তখনও পারিবারিক সংবাদ আদান প্রদানের একমাত্র মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ, যার হার্ট এই ডাকবাক্স। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হারিয়ে গেছে আমাদের পুরানো ঐতিহ্যের বাহন যা আজ অবহেলা আর অযত্নের শিকার। ’দূর কে করেছ আপন বন্ধু আর পরকে করেছ ভাই’ সেই ডাক বিভাগ এখন নিজেই অস্তিত্ব সঙ্কটে। একসময় পরমবন্ধুর দিশা পেতে গান তৈরি হয়, ....নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম/বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পাঠাইতাম!
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল হাতে লেখা চিঠিপত্র। দূরে থাকা প্রিয়জন, আপনজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে তথ্য এবং মনের ভাব আদান-প্রদান হতো কাগজে লেখা চিঠির মাধ্যমে। যার হাতের লেখা যত সুন্দর, চিঠির সৌন্দর্য তত বেশি। রং বে-রঙের কলম দিয়ে চিঠি লেখা হতো আপনজনদের উদ্দেশে। হতো পত্রমিতালী। এসময় প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো নিল খাম। ‘বসে ছিলেম একা ছাতন তলে / রক্সি কিম্বা শান্তি নিকেতনে/ এমন সময় তোমার চিঠি বললো এসে এইতো এলাম’।
উপমহাদেশে ঘোড়ার ডাক প্রথা চালু করেন শেরশাহ নামে এক পাঠান বাদশা পরবর্তীতে ইংরেজ আমলে এসে সেটি স্বয়ংক্রিয় হয়। গড়ে ওঠে ডাক ব্যবস্থা। তখনকার দিনে এটিই ছিল অত্যাধুনিক। কেবল শহরেই নয় গ্রামেও ডাকঘর প্রতিষ্ঠা পায়। গ্রামের ডাকঘরকে বলা হতো ইডি বা একস্ট্রা ডির্পাটমেন্ট। কালের বিবর্তনে আজ সেটি হারিয়ে গেছে।
পোস্ট অফিসে এবং ডাকবিভাগের বাক্সে রাখা হতো চিঠি। পোস্ট মাস্টার, রানার বা ডাকপিয়নের হাত হয়ে সে চিঠি পৌঁছে যেত কাঙ্খিত প্রিয়জনের হাতে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জন এই সংবাদে কখনো হেসেছেন আবার কখনো বিষাদে হারিয়ে গেছেন। গ্রামের লোকজন পথ চেয়ে থাকতো খাকি পোশাক পরা ডাকপিয়নের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাকপিয়নের দিয়ে যাওয়া চিঠি হাতে পেয়ে কেউ উল্লাসে মেতে উঠতো, আবার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয়জনদের কাছ থেকে কোনো চিঠি না এলে মনে অজানা ভয় কাজ করতো। কাঙ্খিত চিঠি খুলে কেউ কাঁদতো, আবার কেউ আনন্দে আত্মহারা হতো। সেই চিঠির প্রচলন এখন আর নেই। চিঠির সুখ দুঃখ মাখা কাহিনীগুলো এখন যেন শুধু একটা গল্প। ৯০ দশকের আগের লোকেরা চিঠিপত্রের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও এখনকার প্রজন্ম পরিচিত মোবাইল ফোনের সঙ্গে। সঙ্গে আছে স্মার্ট আরও নানা ধরনের ডিভাইস। তাই এ যুগে যেন চিঠির কোনো মূল্যই নেই। সেকেন্ডের মধ্যেই হাজার হাজার মাইল দূরের মানুষের সঙ্গে কথা হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। ইন্টারনেট আর যান্ত্রিক যোগাযোগের উন্নতির ফলে হারিয়ে গেছে চিঠি। ফলে চিঠি নিয়ে আর ব্যস্ততা নেই ডাক অফিস গুলোতে। নেই ডাক পিয়ন বা ডাক বাক্সের কদর।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh