× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জমে উঠেছে সোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প ও লোকজ মেলা

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

১২ মার্চ ২০২২, ০১:৫৩ এএম

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ ও সংস্কৃতির ব্যবহার্য জিনিসপত্র যুগ যুগ টিকিয়ে রাখতে এবং প্রাচীন শিল্প, ইতিহাস ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ও এসব শিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন।

বাংলাদেশ লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছরের মতো এবারো ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই মেলার। দেশের প্রাচীন গ্রামীণ মেলাগুলোর মধ্যে সোনারগাঁয়ের লোককারুশিল্প মেলাটি অন্যতম। গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ না-থাকায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই আসছেন এই মেলায়, তবে সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের ঢল নামে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, লোককারুশিল্প মেলার মূল চত্বরে কর্মরত কারুশিল্পীদের সুসজ্জিত প্যাভেলিয়ন। এখানে সারিবদ্ধভাবে কারুশিল্পীরা তাদের বাহারি কারুপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে রয়েছে শখের হাঁড়ি, নকশিকাঁথা, কাঠের হাতি-ঘোড়া, বাঁশের ঝুড়ি, বেতের ঝাঁপি, পাটের শিকা, শীতলপাটি, তাঁতের শাড়ি, মাটির পুতুল, শোলাশিল্প, কামারশিল্প ইত্যাদি।

কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীতে দেখা মিলবে সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী চিত্রিত হাতি-ঘোড়া, পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, চট্টগ্রামের তালপাতার পাখা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতলপাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা ও টেপা পুতুলশিল্প, মুন্সীগঞ্জের পটচিত্র, সিলেটের মণিপুরী তাঁতশিল্প, সোনারগাঁয়ের কামারশিল্প, ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশের ঢালা, কুলা ও কুমিল্লার বাঁশের বাঁশিশিল্প। কর্মরত কারুশিল্প প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎসব প্রাঙ্গণে বসে কারুশিল্পীরা তাদের কারুপণ্য তৈরি করবেন এবং তা প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন। এর ফলে উৎসবে আসা দর্শনার্থীরা ঐতিহ্যের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি কারুপণ্য কীভাবে তৈরি হচ্ছে, কী কী প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা তৈরি হচ্ছে সবকিছুই প্রত্যক্ষ করতে পারছেন।

মাগুরার শোলাশিল্পী শংকর মালাকার বললেন, আমরা যে প্রজাতির শোলা দিয়ে ফুলসহ অন্যান্য কারুপণ্য তৈরি করি, সেসব শোলা বিস্তীর্ণ বিল ও হাওরে জন্মে থাকে। দিন যত যাচ্ছে ততই শোলা সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে এ পেশা ধরে রাখাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কিশোরগঞ্জ থেকে মেলায় যোগ দিতে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী টেপা পুতুল তৈরির কারুশিল্পী আরতি রানী। তিনি জানান, একসময় গ্রামের উৎসব-পার্বণে টেপা পুতুলের বেশ চাহিদা ছিল কিন্তু এখন প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের আধুনিক পুতুল ও খেলনার ব্যাপকতায় এ টেপা পুতুলের চাহিদা কমে গেছে।

নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতি তুলে ধরতে উৎসব চত্বরের সোনারতরি লোকজ মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছে নানা ধরনের লোকজ অনুষ্ঠানমালা। বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান বাউল গান, পালা গান, কবি গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি-সারি, হাছন রাজার গান, লালনসংগীত, শরিয়তি-মারফতি গান, মাইজভান্ডারি গান, মুর্শিদি গান, আলকাপ গান, গায়েহলুদের গান, বান্দরবান বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ ছড়াপাঠের আসর, পুথিপাঠসহ লোকনৃত্য হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলার জন্য উৎসবে রয়েছে গ্রামীণ খেলার মাঠ। এখানে বিলুপ্ত প্রায় গোল্লাছুট, কানামাছি, বৌচি, দাঁড়িয়াবান্ধা, লাঠি খেলাসহ নানা রকম গ্রামীণ খেলা প্রদর্শিত হচ্ছে। যা দেখে উৎসবে আসা নতুন প্রজন্ম বাংলার গ্রামীণ খেলা সম্পর্কে জানতে পারছে। উৎসবে রয়েছে লোকজীবন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। এখানে লোকজ জীবনধারার নানা চিত্র অভিনয় করে দেখানো হয়। স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই লোকজীবন প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। লোকজীবন প্রদর্শনীতে রয়েছে পালকিতে বরযাত্রা, জামাইয়ের পিঠা খাওয়া, বিয়ের কনে দেখা ও গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। আবহমান বাংলায় কীভাবে এসব উৎসব পালিত হতো তা এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক   রবিউল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪৮ জন কারুশিল্পীর কারুকার্য এ মেলায় প্রদর্শন করছেন। উদ্যোক্তাদের জন্যও মেলায় স্টল রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.