ছবিঃ মাসুদ সরদার
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের উত্তরপশ্চিম চন্দ্রহার গ্রামে অবস্থিত শিখর মন্দির শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন হল সরকার মঠ। অবশ্য, স্থানীয়ভাবে এটি মাহিলাড়ার সরকার মঠ নামে পরিচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এ মঠটি ।
সরেজমিনে স্থানীয় প্রবীণদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে এটি সরকার মঠ নামে পরিচিত হলেও এ শংকর মঠটি শিখর মন্দির শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। এই সুউচ্চ মঠটি ইতালির লিসা টাওয়ারের সাথে মিল রয়েছে। মঠের গায়ে কোন প্রকার খোদিত শিলালিপি পাওয়া না যাওয়ায় এর প্রকৃত নির্মাণ সন নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে মঠটির স্থাপত্যকলা ও নির্মাণ কৌশল দেখে অনুমান করা যায় যে, এ মঠটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মাণ হয়েছিলো।
নবাব আলীবর্দী খানের শাসন (১৭৪০-১৭৫৬ সাল) আমলে সরকার রূপরাম দাশগুপ্ত নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী জমিদার এ মঠটি নির্মাণ করেন। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মঠটি প্রায় ২৭.৪৩ মিটার উঁচু। অষ্টভুজাকারে চুন ও সুরকি দিয়ে নির্মিত এ মঠের নিচের দিকের প্রতিটি ভুজ বা বাহুর দৈর্ঘ্য ১.৯১ মিটার। এ বাহুগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬.২ মিটার উপর পর্যন্ত একই দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। এরপর মঠটি ক্রমশ সরু হয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। সরু অংশটি অসংখ্য ধনুক আকারের কার্ণিসের অলঙ্করণ শোভিত হয়ে শিখরে গিয়ে শেষ হয়েছে । এ মঠের অভ্যন্তরে বর্গাকারে নির্মিত একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এ কক্ষটির একমাত্র প্রবেশ পথ মঠের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে।
সেগমেন্টাল খিলানের এ প্রবেশ পথটির উপরে অবস্থিত প্যানেলটিতে বেশ কিছু জ্যামিতিক অলঙ্করণ রয়েছে। এরূপ অলঙ্করণ মঠের অন্যান্য দিকেও দেখা যায়। এ মঠের অভ্যন্তরের কক্ষে স্বাধীনতার পর
রাধাগোবিন্দ ও শিবলিঙ্গ বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। মঠ বাউন্ডারী ঘেষে শ্রীশ্রী
নিগমানন্দ সারস্বত আশ্রম ও আশ্রম প্রাঙ্গণে স্বর্গীয় নিহার কনা ভক্তবাস, কালী মন্দির, দুর্গা মন্দির রয়েছে।
আশ্রমের পুরোহিত জানান, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অর্থায়নে ১৯৯৬ ও ২০১৩ সালে এ মঠটি সংস্কার করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন কর্মচারী দায়িত্বে রয়েছে। উত্তর পশ্চিম চন্দ্রহার মৌজায় বিএস রেকর্ডে হরি মন্দিরের নামে ২ শতক ও শ্রীশ্রী নিগমানন্দ সারস্বত আশ্রমের নামে ২৮ শতক জমি রেকর্ড রয়েছে। বর্তমানে সরকার মঠের বাউন্ডারির ভেতর ৬ শতক জমি এবং মঠের পশ্চিম ও দক্ষিণ বাউন্ডারী ঘেষা ২৪ শতক জমির ভেতরে শ্রীশ্রী নিগমানন্দ সারস্বত আশ্রম ও আশ্রম প্রাঙ্গণে স্বর্গীয় নিহার কনা ভক্তবাস, কালী মন্দির, দুর্গা মন্দির রয়েছে।
আমেরিকা প্রবাসী ডঃ সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদারের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালে এ আশ্রম ও ভক্তবাস নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর রথযাত্রায় আশ্রম প্রাঙ্গন থেকে বনাঢ়্য র্যালি বের হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রতিদিন কিছু দর্শনার্থী সরকার মঠ দর্শন করতে আসেন। দর্শনার্থীদের রাত যাপনের জন্য ভক্তবাসে ৫/৬ জনের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে পুরোহিত শ্রীমৎস্বামী সম্ভবানন্দ সরস্বতী মহারাজ জানান। জানা গেছে, ঢাকা-মোল্লারহাট ভায়া- গৌরনদী নৌ-পথে গৌরনদী বন্দর লঞ্চঘাট থেকে ১ কি.মি. পশ্চিমে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক পথে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড থেকে ৬ কি.মি. দক্ষিণ দিকে ও বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০ কি.মি. উত্তর দিকে মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে মহাসড়ক পথে আধা কিলোমিটার দক্ষিণদিকে এগিয়ে গেলে পূর্বমুখী মহাসড়কের সংযোগে মাহিলাড়া- সেনেরহাট ভায়া- শরিকল পাকা সড়ক। এ পাকা সড়ক পথে প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বদিকে এ মঠটি দেখা যায় । মঠটির দক্ষিণ পাশে ১টি দীঘি, পূর্বপাশে ১টি পুকুর এবং পশ্চিম ও উত্তর পাশে পাকাসড়ক রয়েছে। মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কি.মি. দুরত্বে এ মঠটি অবস্থিত মাহিলাড়া- সেনেরহাট ভায়া- শরিকল সড়ক ঘেষে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh