× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মিত্র থেকে শত্রু? ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

সংবাদ সারাবেলা ডেস্ক।

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ এএম । আপডেটঃ ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ এএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

বাংলাদেশের সীমান্তের প্রায় তিন-চতুর্থাংশেরও জুড়ে আছে ভারত। দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের সাথের সীমানাটুকু বাদ দিলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট দেশটাকে আক্ষরিক অর্থেই ঘিরে রেখেছে ভারত। বাংলাদেশের প্রধানতম মিত্র যাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে কাঁটাতারে পড়ে থাকে লাশ আর চলে বাণিজ্য। স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দেশটি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু তার দশ দিন আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। সেই থেকেই কখনো শত্রু কখনো বা মিত্রের ভূমিকায় দুই দেশ।


আওয়ামী লীগ ও ভারত

বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই ভারতের প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য ‘ভূমিকা’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে ব্যপক আলোচনা রয়েছে। ভারতের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেও শেখ হাসিনার সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ধেরে রেখেছিল।

২০০১ সালে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানে একটি বড় সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে আওয়ামী লীগ। সংঘাতময় এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। এরপর ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলেও কার্যত সেটি পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। অভিযোগ ওঠে, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ভারতের হস্তক্ষেপে সেটির সফলতা না পেয়ে অনেক আলোচনা, সংলাপ ও কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়।


ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নিজের আত্মজীবনীতে দাবি করেছেন, খালেদা ও শেখ হাসিনাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনি নিজে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভারত চায়নি বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। তাইতো আওয়ামী সরকারের বিজেয়ের পরদিন শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ভারত।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি বাক বদল হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, এ নির্বাচনে ভারতের তথাকথিত ‘হস্তক্ষেপ’ সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশে আসেন।

ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তখন বলা হয়েছিল, জাতীয় পার্টিকে চাপ দিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসতে এবং নির্বাচনকে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ চেহারা দিতেই সুজাতা সিং এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা সফর করেছিলেন। হয়েছিলও তাই, শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি এবং বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আগে থেকেই ভারত প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। কারণ, নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতের অত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন করেনি, এমনটাই স্বীকারও করেছিলেন তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার।

বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও নির্বাচনে ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন শেখ হাসিনার দিকেই ছিল, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে গোপন ছিল না।

বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। সেই কারচুপির কিছু ভিডিও প্রকাশও হয়। পরে নির্বাচন বয়কট করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি। অথচ, নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্রও সমালোচনা করা হয়নি। শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের সমর্থন যে দলমতনির্বিশেষে—সেটাই আরও একবার প্রমাণিত হয়।

শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে ভারত। এই নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে বেশিরভাগ দল অংশ না নেওয়ায় দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্রপ্রার্থী বানায় দলটি।

বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ভারতের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেও শেখ হাসিনার সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ধেরে রেখেছিল। এ সময়ে হাসিনা সরকারের দুর্নীতি, হত্যাসহ সব অন্যায় ভারত খোলামেলা সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভারত মনে করে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা পেলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় ফেরার পথ সুগম হবে। তাই তারা চায়নি বাংলাদেশে আওয়াম লীগ ছাড়া অন্য কেই ক্ষমতায় আসুক। অথচ, মুসলিম দেশে ইসলাম চর্চাটা স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল।


ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী যত চুক্তি

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে অন্তত ২০টি চুক্তি ও ৬৬টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বেশির ভাগই বাংলাদেশের স্বার্থের তোয়াক্কা করা হয়নি। একতরফাভাবে ভারতকে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।


ভারত ট্রানজিট নিয়ে আ.লীগের ভাঁওতাবাজি


২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। সে সময়ের স্বৈরশাসকের মন্ত্রীরা বলেছিলেন ভারতকে ট্রানজিট দিলে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, দুবাইয়ের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো হয়ে উঠবে। বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ মানুষ ট্রানজিটের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদ ভ্রুক্ষেপ করেনি শেখ হাসিনা। পরের বছরেই বিনা শুল্কে ভারত ও বাংলাদেশ প্রথম নৌ-ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করে।

এরপর ভারতকে আরও চারটি নদীপথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পর্যায়ক্রমে ভারতকে বাংলাদেশের সড়ক ও রেল ট্রানজিটও দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।


চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি


ট্রানজিট দেওয়ার পর ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাও দেয় স্বৈরাচার সরকার। বাংলাদেশের এ দুটি বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারত বহু বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিল। এ চুক্তির ফলে, বাংলাদেশের বন্দর দুটি ব্যবহার করে ভারত নিজ দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

চাহিদার তুলনায় দেশে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়ার পরও ২০১৭ সালে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু গৌতম আদানি। তিনি আদানি পাওয়ারের মালিক। দেশের স্বার্থে নয়, আদানির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই এই চুক্তি করে হাসিনা সরকার। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন বারবার দাবি করে এলেও এ চুক্তিটি প্রকাশ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু স্বৈরাচারের পতনের পর আদানির চুক্তিতে নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে করমুক্ত আমদানি নীতি, কয়লার বাড়তি দর, বিলম্বে বিল পরিশোধে অতিরিক্ত সুদ আরোপের জটিলতা রয়েছে। এমনকি যে রুট দিয়ে আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে তা কোনো শুল্ক স্টেশনই নয়।

এ ছাড়া আলোচিত চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বার্বভৌমত্বকে হুমকিতে রেখে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়চুক্তি, ভারতের সঙ্গে ‘গোলামি’র রেল চুক্তি, ভারতের স্বার্থ রক্ষায় রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেকে চুক্তি করা হয়েছিল।

চুক্তি ও সমঝোতা ছাড়াও বাংলাদেশে ভারতের কয়েক লাখ মানুষকে চাকরি দেওয়া, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর দায়িত্ব ভারতকে দেওয়া, বাংলাদেশের আইটি ক্ষাত ভারতীয়দের দখলে দেওয়া, চীনকে পাশ কাটিয়ে ভারতকে তিস্তা প্রকল্প দেওয়ার পরিকল্পনা, ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অবাধ সম্প্রচার এবং বাংলাদেশকে ভারতের জন্য উম্মুক্ত বাজারের সুবিধাও দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য চাওয়াগুলো যেমন সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও ন্যায্য হিস্যা দেওয়া, এসব বিষয় আওয়ামী লীগের আমলে অমীমাংসিত থেকেছে।

গত ৫ আগস্ট দেশব্যপী আপামর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। এই মোড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দুই দেশের প্রতিবেশি বা অন্যান্য মিত্র দেশগুলো। আর দুই দেশের মানুষের, আসলে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, কূটনীতি যেটার সঙ্গেই জড়িত হোক, দিনশেষে ভুক্তভোগী হচ্ছে দুই দেশের মানুষেরাই, স্বাভাবিকভাবেই। 


১. *রাজনৈতিক সচেতনতা*: ছাত্র জনতার আন্দোলন ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এবং বাংলাদেশির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা হয়ে উঠেছে। ছাত্ররা নিজেদের রাজনৈতিক মতামত ও অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে, যা উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন দৃষ্টিকোণে দেখতে সহায়তা করছে।


২. *বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাব*: ছাত্র আন্দোলন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মনোভাবের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এই আন্দোলন নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তা বাংলাদেশের যুবসমাজের ভাবনায় প্রভাব ফেলতে পারে।


৩. *সাংস্কৃতিক বিনিময়*: ছাত্র জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং ছাত্র বিনিময়ের উদ্যোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। উভয় দেশের ছাত্র সমাজের মধ্যে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।


৪. *অর্থনৈতিক সহযোগিতা*: ছাত্র আন্দোলনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং স্বার্থের সম্পর্ক ঐতিহাসিক দিক থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন বিন্দু তৈরি করবে। শ্রমিক শ্রেণী ও যুবসমাজের মধ্যে বাণিজ্যিক উদ্যোগ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।


৫. *নিরাপত্তা এবং সহযোগিতা*: ছাত্র আন্দোলনের পর উভয় দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রেও কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। দুই দেশের সরকারকে একসাথে কাজ করতে হবে অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায়।


এইসব দিকগুলোকে বিবেচনায় রেখে, ছাত্র জনতার আন্দোলন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি করছে, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির উপর প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে উভয় দেশের সরকার এবং সমাজ একত্রে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা করছে এবং সম্পর্ককে আরও উন্নয়নমুখী করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।


সংখ্যালঘু অপপ্রচার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া


ভারত ও বাংলাদেশ দুটি প্রতিবেশী দেশ হলেও সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে। এই অপপ্রচার দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


অপপ্রচারের প্রকৃতি

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিন্দুধর্মীয় একজন নেতার বিরুদ্ধে জনৈক বিএনপি কর্মীর দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘটনা, তার জেরে সংঘর্ষ ও একজন আইনজীবীর মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের কিছু মন্দির ও ঘরে হামলার ঘটনা ঘটা থেকে ভারতে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা ছিল যুগপৎ অতিরঞ্জিত ও উসকানিমূলক। 

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অতিরঞ্জিত খবর প্রচার করে ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম দুই দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ও ঘৃণা বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে এই অপপ্রচারকে আরও বাড়ানো হচ্ছে। ইউএন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের ওপর হামলা এবং অত্যাচারের নানা রকম তথ্য, অপতথ্য এবং গুজব ব্যাপকভাবে প্রচার হতে দেখা গেছে।


শ্রীরাধা দত্ত ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশ সম্পর্কে গবেষণা করছেন। শ্রীরাধা দত্ত বিবিসির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, "রাইট মেসেজ বা সিগন্যাল পাচ্ছি না যে ওখানে সবকিছু আন্ডার কন্ট্রাল। মানে কোথাও যেন মনে হচ্ছে গর্ভনমেন্ট ম্যানেজ করতে পারছে না। একই সঙ্গে কেউ যদি একটা বিবৃতি দেয় যে ভায়োলেন্সগুলো দেখানো হচ্ছে সেগুলো ঠিক না। আজকাল যেটা হয়েছে প্রবলেম সোশ্যাল মিডিয়াতেতো বন্যা বয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।"

দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ধর্ম নিয়ে যেটা চলছে সেটা খুবই স্পর্শকাতর।

"একদিকে আমরা যেটা দেখেছি ফিফথ অগাস্টের পর একটা ভায়োলেন্সের জায়গা। সেটাতো আমাদের স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা আশঙ্কা তৈরি করেছিল। তারপর এখন যেটা দেখছি সংখ্যালঘু নিয়ে। দুটো দেশের মধ্যে রিলিজিয়ন নিয়ে যেটা চলছে টানাপোড়েন এটা কিন্তু হওয়ার কথা না দুই ফ্রেন্ডলি নেবারের সঙ্গে। আর দুজনকে দুজনের দরকার। তো আমরা সম্পর্ক কেন সুন্দর রাখবো না।”

সার্বিকভাবে দুদেশের সম্পর্কের গতি প্রকৃতি এখন নেতিবাচক বার্তাই দিচ্ছে বলে বিবিসিকে বলেন সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির।

"ভারত ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মেজেস যেটা যে ভারত আমার বর্তমান বাস্তবতার সাথে সহযোগী হতে রাজি নয়। মেসেজটা এখনো নেতিবাচক রয়ে গেছে ভিসা না দেয়ার কারণে। অন্যান্য সার্ভিসগুলো হচ্ছে না সেগুলো নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। আগরতলাতে আমরাও অফিস বন্ধ করে দিয়েছি ওখানেও একইরকমভাবে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ আর আমাদের ভিসা দেবে না।"

৫ অগাস্ট পরবর্তী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার জায়গাটিও সংকুচিত হয়ে গেছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলাপ আলোচনা দরকার বলে উল্লেখ করে এম হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে যে ধরনের সরকারি বেসরকারি জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগগুলি হয় সবগুলি যোগাযোগ কিন্তু স্থবির হয়ে আছে। কাজেই এগুলোকে আবার চালু করা দরকার। তবেই আস্তে আস্তে সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক জায়গায় আসবে।

"একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমাদের জন্য দরকার একইভাবে ভারতের জন্য দরকার। কারণ বাংলাদেশকে ঘিরে তার নিরাপত্তার বিষয় আছে, তার ব্যবসা বাণিজ্য আছে, তার বিনিয়োগ আছে তার ভূরাজনীতি আছে। সবগুলো ক্ষেত্রেই যদি বাংলাদেশ যদি তার সঙ্গে সহযোগী না হয় বা সহযোগিতা না করে তাহলে সেগুলো ভারতের জন্যই নতুন করে জটিলতা তৈরি করবে। এই বাস্তবতার আলোকেই আমি মনে করি বাংলাদেশ এবং ভারতের দুই দেশের নেতৃবৃন্দের এই উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় হওয়া দরকার।"

দু'দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার ঘাটতি এবং পতাকা অবমাননা প্রসঙ্গে ভারতের বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, "দুই দেশের সরকার এটা সাপোর্ট দেয় না। দেখুন সব দেশেই কিছু দুস্কৃতিকারী থাকে। তারা ন্যারেটিভটাকে অন্যদিকে নিয়ে যায় এবং পুরো জিনিসটাকে কী রকম একটা ঘোলাটে করে দেয়। আমার যেটা সবচে বেশি ফিলিং এখন যে পরিস্থিতিটা যে একটা সার্টন ভেস্টেড কোয়ার্টার এটা চাইছে না যে ইন্ডিয়া বাংলাদেশে সুস্থ্য সবলভাবে একসঙ্গে এনগেজ করুক।"

আগরতলায় হামলার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদ করে। সেখানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে প্রণয় ভার্মা বলেন, "ভারত ও বাংলাদেশের সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আমাদের সম্পর্ক ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।"

দুই দেশের মধ্যে অনেক আন্তঃনির্ভরতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা এই নির্ভরতাগুলোকে পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে চাই।'

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেছেন পাঁচ তারিখের আগে এবং পরের সরকারের মধ্যে তফাৎ আছে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।
"পাঁচ তারিখ একটা ওয়াটারমার্ক। অবশ্যই এর পরের সম্পর্ক আর আগের সম্পর্ক এক না। এটা আমরা জানি এবং এই সমস্যাটা স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করি আমরা। একটা সমস্যা স্বীকার করলে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যায় এবং চেষ্টা করাই স্বাভাবিক। আমরা ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক ভালো সুসম্পর্ক চাই পরস্পরের স্বার্থ ঠিক রেখে।"

ভারতে বাংলাদেশীদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলার পর ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে । ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আলাদা আলাদা কর্মসূচি দিয়েছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পর্যন্ত প্রতিবাদী মিছিল করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যে থাকা গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি ভেঙে দিয়ে নতুন এ সংগঠনটি তৈরি হয়েছে।


সংগঠনের সদস্য সচিব আখতার হোসেন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, "হাসিনা প্রায় দুই হাজার মানুষকে খুন করে ভারতে আশ্রয় পেয়ে আছে। এরকম ধরনের একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এই সময়টাতে যাচ্ছে। আমরা চাইবো এই জায়গায় যেন স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, ভারত যেন হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। আর আমরা চাই ভারতের সাথে যেসব চুক্তি আছে সেসব চুক্তি যেন আবার রিভিউ করা হয়।"

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলে সামনের সারিতে অংশ নেয়া তাজনুভা জাবিন বলেন, সীমান্ত হত্যা, পানির হিস্যা বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের একটা নতজানু নীতি ছিল। "আগের মতো যে তাদের (ভারত) অধীনস্ত বা তাদের আধিপত্য এটা এখন আর থাকবে না। আমরা কিন্তু তাদের সাথে শত্রুতা চাই না। আমরা তাদের সাথে সমান সমান বন্ধুত্ব চাই।"

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটি অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতে জনগণ এবং সরকার এবং জনগণ যেভাবে বাংলাদেশকে দেখছে সেটির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বলেও বাংলাদেশ দাবি করছে। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় বিভিন্ন কূটনীতিক মিশন ও রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিং করেছে সরকার।

সম্পর্কের চরম অবনতি

ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির মনে করেন দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের এই নেতিবাচক অবস্থাটি নজিরবিহীন। মি. কবির বলছেন জনগণের পর্যায়ে সম্পর্কের যে উত্তেজনা তারই প্রতিফলন হলো ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলা এবং বাংলাদেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ।

"দুই দিকেই কেমন যেন একটা সাজ সাজ রব মনে হচ্ছে এবং সেটা প্রধানত জনগণ পর্যায়ে। জন উত্তেজনার একটা নতুন জায়গা তৈরি হয়েছে যেটা কিন্তু আশঙ্কার কারণ। কেন আশঙ্কা কারণ হলো, এতে করে ভারতে বাংলাদেশিদের কোনো হোটেলে থাকতে দিচ্ছে না। সীমান্তে এসে ভারতীয়রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে বা বাংলাদেশ ঢুকবার চেষ্টা করছে, পণ্যসামগ্রী আদান প্রদানে বাধা প্রদানের চেষ্টা করছে। এইগুলো হলো আমার কাছে মনে হয় আশঙ্কার জায়গা।"

কোনো অসম সম্পর্ক সুস্থ ও দীর্ঘমেয়াদি হয় না। নতজানু নীতি আর যাই হোক, বিশ্বমঞ্চে কোনো জাতিকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দেয় না। বন্ধুত্ব তখনই সম্ভব যখন তা হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সমমর্যাদাসম্পন্ন। ভারতকে ‘দাদা’ বা ‘বড় ভাই’ থেকে নেমে বন্ধুর পর্যায়ে দাঁড়াতে হবে। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাংলা পত্রিকা প্রথম আলো ৬৪ জেলায় ও ৬৯ উপজেলায় তাদের নিজস্ব প্রতিবেদকের মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত চালিয়ে ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৬৮টি বাড়ি ও ব্যবসায়িক স্থাপনায় হামলার প্রমাণ পায়। এ ছাড়া, ২২টি উপাসনালয়ে হামলার তথ্যও পায়। তাদের প্রতিবেদকরা এসব স্থানের মধ্যে ৫৪৬টিতে (৫১ শতাংশ) সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং বাকিগুলোর পরিস্থিতিও নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করে। এসব ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন—একজন বাগেরহাটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃণাল কান্তি চট্টোপাধ্যায় এবং অপরজন খুলনার পাইকগাছার স্বপন কুমার বিশ্বাস।

এ ধরনের পরিস্থিতিতেও দুধরনের ঘটনা ঘটতে দেখি আমরা। অনেকেই দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর দায়িত্ব পালন করেন। আবার অনেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলীয় স্বার্থ (ক্ষুদ্র, কেননা জাতীয় নয়) হাসিলে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। তবে আশার কথা, দুই পক্ষেই ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পক্ষে কথাবার্তা হচ্ছে। এবারের ঘটনায় আশাব্যঞ্জক দিক হলো—অন্তত আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি—সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই এই উত্তেজনার ঘোরে গা না ভাসিয়ে বাস্তবতার দিকেই চোখ রেখেছেন।


বৃহত্তর স্বার্থ


শপথ নেওয়ার পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী, চারদিক থেকেই ভারত আমাদের আছে। কাজেই তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হওয়া উচিত। ড. ইউনূস বলেন, হাসিনা ব্যতীত বাংলাদেশের সবাই ইসলামবাদী, ভারতকে এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ তাকে (হাসিনা) ফেরত আনবে। কারণ এটাই জনগণের চাওয়া।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। আর ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।


তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক রেখে কেউ লাভবান হবে না। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা হবে সবচেয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। বন্ধুত্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, ভারত সবসময় তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর প্রভুত্ব করেছে, যা কারও জন্যই শুভ নয়। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ও বন্ধু। অশা করি দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হওয়ার সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভারত ইচ্ছা করেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চেয়েছিল। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রভাব। সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশকেই কো-অপারেটিভ হতে হবে। রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে বাংলাদেশ চেষ্টা করবে। আর ভারতকেও তার রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনেই তার আচরণ নির্ধারণ করতে হবে। বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে উভয় দেশের পরস্পর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা যায়। এটা না হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা বাড়তে থাকবে।

দিনশেষে ভারত-বাংলাদেশ বিবাদ দক্ষিণ এশিয়ার ঐক্যে ফাটল ধরাবে এতে অন্যান্য দেশ নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ঐক্যের এই ফাটলে প্রবেশ করে ফাটলকে ভাঙনে রুপ দেওয়ার সুযোগে থাকবে। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেরই উচিৎ হবে পরস্পর বিরোধী কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করে মিত্রতার এক নতুন দুয়ার খোলা। 



Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.