শবিঃ সংগৃহীত
আমাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে আরও একটি বছর শেষ হতে চলেছে। ২০২৪ সাল শেষের পথে। নতুন বছরের হাতছানি নিয়ে যখন ঢাকাবাসী নতুন আশায় দিন গুনছেন, তখনই বিদায়ী বছরের দুঃসহ স্মৃতিগুলো তাদের মনে দাগ কেটে যাচ্ছে।
এই বছরটি রাজধানীর মানুষের জন্য ছিল বায়ুদূষণ ও ডেঙ্গুর প্রকোপে জর্জরিত একটি বছর। বছরের শুরু থেকে শীতকালীন বায়ুদূষণের তীব্রতা, আর বর্ষাকালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহ রূপ ঢাকাবাসীর জীবনে দুর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২০২৪ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো সবার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। আমাদের জীবন থেকে পুরনো বছর বদলে নতুন বছরের আগমন ঘটে। তবে বদলায় না আমদের রোগ-শোক আর দুর্দশা। বিদায়ী বছরের শেষ সময়ে এসেও তীব্র শীতের ফলে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু-জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, বায়ুদূষণজনিত রোগসহ বিভিন্ন সংক্রমিত নানা বয়সী রোগীর ভিড় লেগেই আছে।
২০২৪ সালের অভিজ্ঞতা যেন আমাদের জন্য একটি শিক্ষা—পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ২০২৫ সালও হয়তো একই রকম দুর্ভোগ নিয়ে আসবে।
বায়ুদূষণ
২৪ সাল জুড়ে বায়ুদূষণ ছিল রাজধানীবাসীর নৈনন্দিন জীবনের অন্যতম সঙ্গী। ধূলাবালি থেকে শুরু করে যানবাহনসহ কলকারখানার ধোঁয়ায় বছছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে ঢাকার বায়ুমান ছিল একেবারেই নিম্নস্তরে। শহরের নির্মাণকাজ, সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ফলে দূষিত হয় বাতাস। এতে মাস্ক ব্যবহার করেও মিলছেনা বায়ুদূষণ থেকে বাঁচার সমাধান।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের (IQAir) সূচকে প্রায়ই দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত বায়ুর শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়।
গত এক মাসের হিসাবে ঢাকার বায়ুমান ১৫১ থেকে ২৯৯ স্কোরে ওঠানামা করেছে। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে দেখা যায়, গত নভেম্বরের ১৫, ১৬, ২৩, ২৪, ২৫ ও ডিসেম্বরের ৪, ৫, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখে ঢাকার বায়ুমানের স্কোর ছিল ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে। অর্থাৎ এই ১৪ দিন ‘ খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ঢাকার বাতাস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে একমাত্র বায়ুদূষ্ণের কারণে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপসের (CAPS) গবেষণা থেকে জানা যায়, শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমের নভেম্বর থেকে মার্চ- এই ৫ মাসে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে ৫৭ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের নভেম্বরে ঢাকার মানুষ একদিনও স্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিতে পারেনি।
'স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী বাতাসের মানের উদ্বেগজনক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বায়ুদূষণজনিত রোগের শিকার হয়ে থাকে। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়।
ডেঙ্গু
এ বছরের চলতি মাসের ১৪ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা লাখের ঘরে (৯৮ হাজার ৫০৪ জন) ছুঁইছুঁই। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৪৮ জনের মৃত্যু ঘটে।
এ বিষয়ে বিষেষজ্ঞরা বলছেন যে, মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে ডেঙ্গু বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত ভাইরাসটি শহরাঞ্চলের একটি রোগ, তবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও গত বছরের (২০২৩ সাল) তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম দেখা গেছে, তবে এতে আক্রান্ত হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী হাস্পাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাস আক্রান্ত ও মৃত্যু কিছুটা কম ছিল। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯ জন ভর্তি হন এবং মারা যান ৫ জন। মার্চে ভর্তি ৩১১ জন, মৃত্যু হয় ৫ জনের। এপ্রিলে ভর্তি হন ৫০৪ জন, মারা যান ২ জন।
এরপর থেকেই বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। মে মাসে ৬৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১২ জন মারা যান। জুন মাসে ভর্তি হন ৭৯৮ জন, মারা যান ৮ জন। জুলাই মাসে এক লাফে বেড়ে ২ হাজার ৬৬৯ জন ভর্তি হন, যার মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ভর্তি হন ৬ হাজার ৫২১ জন, মারা যান ৩০ জন। সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়। এই মাসে ভর্তি হন ১৮ হাজার ৯৭ জন এবং মোট মৃত্যু হয় ৮৭ জনের।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত মাসে (নভেম্বর)। নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯ হাজার ৬৫২ জন। তার আগের মাসে অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১৩৫ জনের। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৫ এবং মারা গেছেন ৬০ জন।
বিভাগভিত্তিক ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর (২০২৩ সাল) ঢাকায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩২১ জন, এবার এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৬ হাজার ৬১২ জন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৪৪ হাজার ৪৩৫ জনের, এ বছর বিভাগটিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১০৫ জন।
গত বছর (২০২৩) খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার ৪৯ জনের, আর এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭২১ জনের। বরিশালে গত বছর ৩৪ হাজার ৭২২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও এ বছর হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ জনের। ময়মনসিংহে গত বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ১৯ হাজার ৪০৯ জনের, এ বছর ২ হাজার ৯৮৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। রাজশাহীতে গত বছর ৮ হাজার ২৬৮ জন এবং এ বছর ৩ হাজার ৮১৪, রংপুরে গত বছর ৫ হাজার ৫৪০ জন এবং এ বছর ১ হাজার ৪৯৪ জন, সিলেটে গত বছর ১ হাজার ৪৩৫ জন এবং এ বছর ৩২৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh