সোমবার সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ফারুকের। রক্তে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে যে হাসপাতালে ২০২১ সালের মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন বাংলা সিনেমার এই নায়ক।
ফারুকের মৃত্যুর খবর আসার পর তাকে নিয়ে কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন ববিতা। পরে কিছুটা সামলে নিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরেন।
তার কথায় উঠে আসে দুই শিল্পীর পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ ও শুটিংয়ের সময়ের নানা খুনসুটির অজানা গল্প।
“সকালে ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু খবরটি জানার পর থেকেই আমি ভীষণ মর্মাহত। ৫/৬ দিন আগে ফারুক ভাইয়ের স্ত্রীর বোনের সাথে আমার দেখা হয়েছে। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের অবস্থা ভালোর দিকে। উনি দেশে চলে আসবেন। উনার পায়ে ব্লাড সার্কুলেশনের একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা শুনে মনে হয়েছিল, ফারুক ভাই অমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কিন্তু এখন তো সব শেষ হয়ে গেলো।
“এটা মেনে নিতে পারছি না। ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু খবরটি মেনে নিতে পারছি না। এখন তো আর কিছু বলার নেই। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলি, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।“
১৯৭৩ সালে নির্মাতা খান আতাউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘আবার তোরা মানুষ হ’তে অনেকের সঙ্গে ফারুক ও ববিতা অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু এই দুজন প্রথম জুটি হয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি সিনেমা ‘আলোর মিছিল’ এ। যেখানে ববিতার নায়ক হয়ে ছোট ছোট দৃশ্যে হাজির হয়েছিলেন ফারুক।
ববিতা বলেন, “ফারুক ভাইয়ের সাথে তো অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছি। তবে উনার সাথে প্রথম যে সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করি, সেটি হলো ‘আলোর মিছিল’। এটি দেশ স্বাধীনের পর পর করেছিলাম। পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। “
বেশ কিছু সিনেমার নাম স্মরণ করে ববিতা জানিয়েছেন, তারা একে অন্যকে নিজেদের সিনেমার জন্য নির্বাচন করতেন।
“তারপর ‘লাঠিয়াল’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমণি’,’সুর্য সংগ্রাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘মিয়া ভাই’সহ বহু সিনেমায় আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। ফারুক ভাইয়ের সিনেমায় আমাকে নিয়েছেন। আমি আমার সিনেমায় ফারুক ভাইকে নিয়েছি।“
সহকর্মীসুলভ সুসম্পর্ক এক সময়ে পারিবারিক সম্পর্কে পৌঁছেছিল বলেও জানান ববিতা।
“আমরা যখন কাজ করেছি, তখন আমাদের মাঝে একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছি, জেনেছি। ফারুক ভাই আমার বাড়িতে আসতেন ভাবীকে নিয়ে। আসার সময় ভাবী আবার রান্না করে নিয়ে আসতেন। যখন ফারুক ভাইয়ের কিডনির সমস্যা হয়েছিল, আমরা তিনবোন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। পারস্পরিক এই হৃদ্যতা আমাদের মাঝে ছিল।“