× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মরণরে রাখি ঢেকে স্মরণের আবরণে

হুমায়ুন ফরীদি না থাকার ১১ বছর আজ

কামাল সিদ্দিকী বাবু ও মশিউর অর্ণব

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:২৩ এএম

(জন্ম: ২৯ মে ১৯৫২, মৃত্যু: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২)

দেশের ক্রান্তিকালে যে যুবক অস্ত্র হাতে শত্রু নিধনে হাতে তুলে নেন অস্ত্র, স্বাধীন দেশের মানচিত্র আঁকতে যিনি জীবনবাজি রাখেন- সেই তিনিই হয়ে উঠলেন নাটকের মধ্যমণি। অর্গল ভাঙলেন প্রচণ্ড বিশ্বস্ততায়। জয়ের তরবারি হাতে এবার তিনি এলেন টেলিভিশনের আলোক-উদ্ভাসিত পর্দায়। কাঁপিয়ে দিলেন নাট্যজগৎকে। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেতা 'কিংবদন্তি' হুমায়ুন ফরিদী।

যুদ্ধ থেকে অভিনয়ের ময়দান... যিনি আদতে একজন 'বীর', একই সঙ্গে 'মুক্তিযোদ্ধা'। এই মহান অবিস্মরণীয় অভিনেতার চলে যাওয়ার ১১ বছর আজ। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করছি তাঁকে। 

সময়টা উত্তাল একাত্তর। দেশে চলছে স্বাধীনতা অর্জনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রির ছাত্র। দেশের এমন ক্রান্তিকালে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। পড়াশোনা ছেড়ে রাইফেল কাঁধে তুলে নেমে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। বীরের মতো লড়াই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে।

দেশ স্বাধীনের পর তিনি ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই শুরু হয় স্নাতক পর্বের নতুন জীবন। আর সবুজ প্রকৃতি ঘেরা ওই ক্যাম্পাসেই বিকশিত হয় তার অভিনয়ের সুপ্ত প্রতিভা। যা একসময় জ্বালাময়ী অগ্নিশিখায় পরিণত হয়। পরবর্তী একাধিক প্রজন্মের কাছে তিনি পরিচিতি পান অভিনয়ের আদর্শ, প্রতিষ্ঠান কিংবা স্কুল হিসেবে। 

যুদ্ধের ময়দান থেকে অভিনয়ের ভুবন, সবখানে বীরত্বের ছাপ রেখে যাওয়া সেই মানুষটি হুমায়ুন ফরিদী। ২০১২ সালের সেদিন  সোমবার আচমকা পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

হুমায়ুন ফরিদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পারিবারিকভাবে তাকে স্মরণ করা হবে স্বাভাবিক নিয়মে। আর ভক্ত-সহকর্মীদের মনে তো তিনি চিরভাস্মর, যার প্রতিচ্ছবি মিলবে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে দিনভর।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই- বোনের মধ্যে ফরিদী ছিলেন দ্বিতীয়। হুমায়ুন ফরিদীর প্রকৃত নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সেলিম আল দীনের কাছ থেকে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন হুমায়ুন ফরিদী। এরপর ডাক পান ঢাকা থিয়েটারে। সেখান থেকেই বিকশিত হয় তার অভিনয়ের দ্যুতি।মঞ্চ দিয়ে শুরু হওয়া সেই যাত্রা সিনেমা, টিভি নাটকে সমৃদ্ধ অবস্থানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ তিনি বিস্ময়ের চেয়ে কম ছিলেন না! ১৯৮০ সালে তার অভিষেক হয় টিভি নাটকে। প্রথম নাটকটির নাম ‘নিখোঁজ সংবাদ’।

তবে দেশজুড়ে হুমায়ুন ফরীদির জনপ্রিয়তা আসে ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ দিয়ে। এখানে তিনি কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি নাটক হলো- ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’ ইত্যাদি।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে হুমায়ুন ফরীদির প্রথম কাজ শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘দহন’। এটি ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায়।  প্রথম সিনেমা দিয়েই সেরা অভিনেতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার জিতে নেন তিনি। নব্বই দশকে তিনি সিনেমার খল চরিত্রে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান। ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’, ‘লড়াকু’ ইত্যাদি ছবিতে তার অভিনয় ভয় ধরিয়েছিলো দর্শকমনে। 

বাণিজ্যিক সিনেমার সফলতম নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন ক্যারিয়ারে ২৮টি ছবি বানিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২৫টিতেই রেখেছেন হুমায়ুন ফরীদিকে। নন্দিত এই তারকার আরও কয়েকটি ছবি হলো- ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’, ‘আহা!’ ইত্যাদি। 

দর্শক থেকে অভিনয় অঙ্গন: সবখানেই উচ্চমর্যাদা পেয়েছেন হুমায়ুন ফরীদি। তবে তার পুরস্কারভাগ্য মন্দই বটে। লম্বা ক্যারিয়ারে তাকে মাত্র একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেটা ২০০৪ সালের ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য। ২০১৮ সালে এ অভিনেতাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। 

হুমায়ুন ফরীদির ব্যক্তিগত জীবনের দর্শনও অনেকের কাছে মুগ্ধতার নাম। আশির দশকে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন তিনি। এই সংসারে দেবযানি নামে এক কন্যা রয়েছে তার। এরপর ফরীদি ঘর বাঁধেন নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। 

গাছে গাছে ফুলের অস্তিত্ব জানান দেয়, প্রকৃতিতে বসন্ত এসে গেছে। কিন্তু দেশের অভিনয় জগতে এক দশক আগেই ম্লান হয়ে গেছে ফাগুনের রঙ। কারণ বসন্তের শুরুতেই হয়েছিলো অভিনেতাদের অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জীবনাবসান। তাই বসন্ত এলেই সিনেপ্রেমী দর্শকের মনে, অভিনয়প্রিয় শিল্পীদের ভাবনায় বিষাদের ফুল হয়ে ফোটেন এই কিংবদন্তি। তারপরেও মনে হয় তিনি আছেন।

তোমার সমাধি আজ ফুলে ফুলে ভরা, কে বলে আজ তুমি নেই, (ফরীদি) তুমি আছো মন বলে তাই...



Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.