চলে গেলেন প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। বিখ্যাত অভিনেতা শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র। তার পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বেহালার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরে কলকাতার সিরিটি শ্মশানে অনাড়ম্বরভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তার
তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের যাওয়া বা চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার বিষয়ে তার তীব্র অনিহা ছিল। অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি। এমন কী মৃত্যুর পর, তার মরদেহ যাতে প্রকাশ্যে না আনা হয়, সেই বিষয়েও একটি ইচ্ছাপত্র লিখে গিয়েছিলেন বাংলার আধুনিক যুগের অন্যমত শক্তিশালী নাট্য ব্যক্তিত্ব।
ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবি অভিনয় করেন শাঁওলি মিত্র। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পান তিনি। ২০১২ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত হন তিনি।
কবি-লেখক তসলিমা নাসরিন শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শাঁওলি মিত্র'র মৃত্যুসংবাদ আমাকে বড় হতবাক করলো। চেনা মানুষগুলো, যাঁদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, তাঁদের যেন হই রই করে চিরকাল বেঁচে থাকার কথা। কার যে গোপনে বয়স বাড়ে, কার যে অসুখ করে, জানা হয় না।
২০০৭ সালে আমাকে যখন কলকাতা থেকে বের করে দিয়ে দিল্লিতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল, ক'জন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, শাঁওলি মিত্র ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি আমাকে ফোন করতেন, মনে সাহস দিতেন। আমি চিরকালই তাঁর গুণমুগ্ধ।’
শাঁওলি মিত্রের অভিনয় প্রতিভার উল্লেখ করে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘মনে আছে, আমাদের ময়মনসিংহের বাড়িতে সেই কতকাল আগে অডিও ক্যাসেটে তাঁর নাথবতী অনাথবৎ শুনতাম। শুনতাম আর তার জন্য বুকের মধ্যে একটু একটু করে ভালোবাসা জমা হতো। সেই শুরু। তারপর তো মঞ্চে তা নাটক দেখেছি, তাঁর অভিনয় দেখেছি অপলক। এমন অবিশ্বাস্য প্রতিভা নিয়ে খুব মানুষই জন্মায়!’
বাংলাদেশের প্রথিতযশা নাট্যাভিনেত্রী ‘মঞ্চকুসুম’ শিমুল ইউসুফ লিখেছেন, ‘নাথবতী অনাথবত-১৯৮৫ রবীন্দ্র সদন মঞ্চ। সেই মুগ্ধতা এখনও কাটেনি শাঁওলী দি। তুমি আমাদের অনাথ করে মা তৃপ্তি মিত্র, বাবা শম্ভু মিত্রের কাছে চলে গেলে।’