× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

"ম্যাজিষ্টেট শামসূল হক আমায় জামিন দিল না" -বিখ্যাত গানটির গায়ক বাউল সম্রাট চাঁন বয়াতির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

রণশি মান্নান

০৮ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৫ এএম । আপডেটঃ ১৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৫৬ এএম

২০১৬ সালের ৯ আগষ্ট গীতি কবি সুনাম ধন্য জারী সারী গানের প্রবাধ পুরুষ জামালপুরের চাঁন বয়াতির ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী। সারাদেশের মানুষের কাছে প্রচুর জনপ্রিয় জারীগান,চাঁন বয়াতির জেলখানার জারী। বৃহৎ ময়মনসিংহ বিভাগ সাহিত্য সংস্কৃতির জন্য আলোচিত ও বেশ পরিচিত। জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার চরপলিশা এলাকায় এক মুসলিম  পরিবারে ১৯৪৭ সালে ১০ জুলাই বাবা আজিমুদ্দিন মন্ডল ও মা শিখা বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহন করেন । সত্যিই যেন আকাশের একটুকরো চাঁদ,আকাশ থেকে নেমে এসেছে আজিমুদ্দিনের ভাঙ্গা ঘরে। বাবা আদর করে নাম রাখলেন চাঁন মিয়া।  বৃহৎর ময়মনসিংহ বিভাগে সুনাম ধন্য জারী সারি গানের মিষ্টি কন্ঠি অতি পরিচিত নাম চাঁন বয়াতি। ছোট্ট থেকেই চাঁন মিয়া গানের পাগল। গান শুনতে আর গাইতে তার ভালো লাগতো। সাড়ে ৩ বছর বয়সে জন্মদাত্রী শিখা বেগমকে হারিয়ে শিশু চাঁন মিয়া দিশেহারা হয়ে পড়েন। রাতদিন চোখের পানি ঝড়ে পড়ে। পরে চাচা হোসেন আলী মন্ডলের আদর স্নেহে বড়  হতে থাকেন। মা হারানোর দুঃখ কষ্ট তার মনে বিরহের জ¦ালা জ¦লে উঠে ব্যপক ভাবে আর তখন থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ বাড়তে দেখা যায়। বাবা আজিমুদ্দিন মন্ডল স্ত্রীর শোক না কাটতেই আরেকটি বিয়ে করেন,ছোট্ট চাঁন মিয়ার দেখা শোনা করার জন্যে। কিন্তু ঘটনা ঘটে উল্টো সৎ মা ঘরে  এসেই শিশু চাঁন মিয়ার উপর নেমে আসে অমানুষিক সৎ মায়ের জ¦ালা যন্তনা। একদিকে মা হারা অন্য দিকে ঘরে সৎ মায়ের জ¦ালায় অল্প বয়সেই দু’তাঁরা হাতে ঘর ছাড়ে চাঁন মিয়া। শুরু হয় বয়াতি জীবন। জারী গানের দলের সাথে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম গঞ্জে। ঘর সংসার তার কাছে অমুল্য মনে হয়। বেছে নেন বয়াতি জীবন। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পর্দাপন করে বয়াতি। তথ্য মতে জানা যায় গান করতে যেয়েই মেলান্দহ থানার চর পলিশা গ্রামের সহজ সরল লাজুক কণ্যা লাইলী বেগমকে বিয়ে করেন। আত্মীয় স্বজন চাচা ভাবলেন বিয়ের পর হয়তো চাঁন মিয়া ঘর সংসারে মনোযোগী হবে। কিন্তু না বয়াতি গানেই পাগল হলেন স্ত্রী সংসার ফেলে আবার গানের দলে বেড়িয়ে পড়েন।

 ১৯৮৬ সালে চাঁন বয়াতি জেলখানায়, জারী গানটি সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এই জারী গানটি মুলত বয়াতির নিজের জীবনের গল্প নিয়ে গাওয়া। তথ্য মতে জানা যায় পারিবারিক জমি-জমা নিয়ে পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশির সাথে ঝগড়া বিবাদ হয় সেই সূত্র ধরে চাঁনবয়াতিকে ফাঁসানোর জন্য রাতের অন্ধকারে নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বয়াতিসহ তার পরিবার স্বজনদের নামে বাড়ি পোড়ার মামলা করে দেয়। তারপর থানা পুলিশ, গ্রেফতার এবং পরিশেষে চাঁন বয়াতিকে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্টেট জেলখানায় ভরে দেন। বাড়ি পোড়ার মামলাটি মিথ্যে হলেও চলে দীর্ঘ দিন। বয়াতির জামিন খুব কঠিন হয়ে যায়। সুন্দর সহজ সরল মনের মানুষ বয়াতি অন্ধকার জেলে নিজে খুব অসহায় আর নিঃস্ব মনে করে হতাশা দিন কাটায়। ইতি মধ্যেই বয়াতির ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। নাম রাখলেন লাবলু।  কারাগারে স্ত্রী সন্তানের কথা ভেবে চোখের জ¦লে বুক ভেসে যায় চাঁন বয়াতির। জেল খানায় অন্যান্য আসামী কয়েদীরা বয়াতিকে কাছে পেয়ে চোখের জল মুছে দেয়,মনের কষ্ট দূর করতে  খোশ গল্পে মেতে উঠে,আবদার করে গান গাইতে। যাবৎজীবন সাঁজা প্রাপ্ত আসামী ্মাহমুদপুরের ফাইমুদ্দিন বলে বয়াতি ভাই আমরা সবাই দুঃখী মানুষ,দুঃখ করে লাভ নাই। গান গাও তোমার গানের স্বরে আমাদের দুঃখ কিছুটা হলেও দুর হবে। হাজার হলেও গানের পাখি জেলখানার ইট পাথরের দেয়ালের ভিতর ভেসে আসে বয়াতির সুরেলা কন্ঠ। গানের যন্ত্রপাতি নাই বললেই চলে। যন্ত্রপাতির বদলে জেলখানার থালা বাটি গ্লাস,চামিচ দিয়ে শুরু করেন গান। চাঁন বয়াতির আবেগী কন্ঠস্বর জেলের দেয়াল টপকে চলে আসে বাইরে জেলার সাহেবের বাসভবনে। তখনকার সময় টেপ র্রেকডারের প্রচলন ছিলো। জেলার সাহেব সহ তার পরিবার বয়াতির গান শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে। জেলার সাহেব তার মেয়েকে নিয়ে সরাসরি চলে এলেন জেল গেটে। চাঁন বয়াতি একে একে গাইলেন কয়েকটি গান এবং সব গান গুলিই রের্কডিং করা হলো। চাঁন বয়াতি গানের স্বরে আবেগ প্রবন হয়ে পড়েন জেলার সাহেব। এই গানের ক্যাসেট করে কে বা কাহারা বাজারে ছেড়ে দেয় আর তাতেই রাতারাতি হিট তারকা বনে যান চাঁনবয়াতি। জেলার সাহেব কিছুটা বিপাকে পড়ে যান। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান চাঁন বয়াতি। জানা যায়, চাঁন বয়াতির মামলা পরিচালনাকারী ম্যাজিষ্টেট শামসূল হক চারদিকে চাঁন বয়াতির মর্মান্তিক জেলখানার জারী গানে বিরুক্তি বোধ করেন। আলোচনা সমালোচনায় পড়েন। অন্য দিকে বয়াতি তারকা বনে যান। বাড়ি পোড়ার মামলায় খালাস পেলেও নিয়মনীতি ভেঙ্গে জেলাখানার জারী র ক্যাসেট বের হওয়ার জন্যে আরেকটি মামলা হয়। যে মামলাটি শেষ বয়স র্পযন্ত মোকাবেলা করতে হয় তাকে। বয়াতি মানুষ তেমন টাকা পয়সা ছিলো না, ছিলো না ফসলী সম্পত্তি। গান গেয়ে যা উর্পাজন করতেন তাঁর বেশির ভাগ খরচা করতে হতো মামলার পিছনে। 

চাঁনবয়াতির গানের কথা সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়্।ে সাড়া পড়ে যায়  গ্রাম গঞ্জে।  বয়াতির জামিন হয়ে ছিলো ঠিকই,কিন্তু আরেকটি নতুন মামলা তার গাড়ে জুকে বসে। সেটা হলো গান গাওয়ার অপরাদেরর মামলা। যত দিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এই মামলা চালাতে হয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে টাকা পয়সা শেষ করে পথে বসে গিয়েছিলেন সুরেলা কণ্ঠি চাঁন বয়াতি। জামিন পেয়ে কিছুদিন গান বাজনা বন্দ রেখে ছিলেন। কিন্তু বয়াতি মানুষ ঘরে মন বসে না আবার দলবল নিয়ে গ্রামে গঞ্জে দাওয়াতে যেতে থাকেন। তার বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে মনছুর হিল্লার জারী, মা ফাতেমা (রঃ) এর জারী, আরো অনেক জারী গান গেয়ে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন বৃহৎ ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার চাঁন বয়াতি। ময়মনসিংহ মানেই গীত সংগীত আর লোক সংস্কৃতির খনি রাজ্য অকপটে স্বীকার করা যায়। জনপ্রিয় এই বয়াতির শেষ বয়স কেটেছে অভাব দারিদ্রতায়। রোগে শোকে একদিন বিছানায় পড়েন। পাননি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। নিজে ইচ্ছা করেই কারো কাছে হাত পাতেননি। চাঁন বয়াতি অভিমানী ছিলেন। কারো কাছে তিনি মাথা নত করেননি। শিল্পীদের জীবনটা আসলেই এই রকম। বেঁচে থাকতে সবাই কাছে আসে সন্মান করে কিন্তু বিছানায় পড়লে আর কেউ কোন খোঁজ খবর রাখে না। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অনেক নাম না জানা শিল্পী বয়াতি আছে, যারা দেশীয় সংস্কৃতিকে বাচিঁয়ে রাখে। তাদের নাম ইতিহাসে না থাকুক নিজ জেলার শিল্পকলা একাডেমীতে তাদের নাম ঠিকানা ,জন্ম,মৃত্যুর তারিখটা লেখা থাকলে তাদের পরিবারের মনটা কিছুটা হলেও তৃপ্ত হবে। খুব কষ্ট পাই মনে যখন জানলাম সুনাম ধন্য চাঁন বয়াতির মত একজন দেশী সাংস্কৃতিক ব্যাক্তির নাম ঠিকানা জন্ম,মৃত’্যর তারিখ জামালপুর শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার জানেন না।  অভিমানী বয়াতি বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে ২০১৬ সালের ৯ আগষ্ট জন্ম ভুমি মেলান্দহ থানার ভাবকী বাজারের পাশে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে। আজ তার ৬ষ্ঠ মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই গুণি জারী সারী গানের পরান পাখী চাঁন বয়াতিকে।


 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.