সীমান্ত ঘেঁষা পর্যটন ও প্রবাসি জেলা মৌলভীবাজারে মুগ্ধতা ছড়ালো ফরাসি নাটকের বাংলা রূপান্তর ‘কঞ্জুস’। ফরাসিদের পাশের দেশ ব্রিটেন। যেখানে থাকেন ফরাসিদের চিরশত্রু ব্রিটিশরা। সেখানে আছেন অনেক ‘বাংলাদেশী ব্রিটিশ’। যার বড় একটা অংশ মৌলভীবাজার ও সিলেট বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ, কিংবা ‘সিলটি ব্রিটিশ’। সেই সিলটি ব্রিটিশদের দেশ মৌলভীবাজারের মানুষজনও ফরাসি এই নাটকটি দেখে মুগ্ধ। অনেকের হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ইংরেজি বছরের প্রথমদিন ‘কঞ্জুস’ নাটক এক নির্মল আনন্দ দিয়ে গেছে মৌলভীবাজারবাসী'কে।
ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের কমেডি ‘দ্য মাইজার’র রূপান্তর ‘কঞ্জুস’। নাটকটির রূপান্তর করেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। শনিবার (১লা জানুয়ারি) সন্ধ্যারাতে রূপান্তরিত এ নাটকটি মঞ্চস্থ হলো মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে।
‘হোক কলরব, আজ বিজয় মহোৎসব’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে (৭) সাতদিনব্যাপী নাট্য উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও উদ্যোগে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন এ উৎসবের আয়োজন করেছে।
লোকনাট্য দলের হাস্যরসধর্মী এ নাটকটি ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে তার ৭০০তম মঞ্চায়ন পালা। মৌলভীবাজারে দারুণ অভিনয় করেছেন সব কলাকুশলীরা। নাটকের দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও দর্শকমুগ্ধতা তার বড় প্রমাণ। নাটক শেষে কলাকুশলীদের হাতে সম্মাননা তোলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানাসহ অতিথিরা।
‘কঞ্জুস’ বা হাড়কিপ্টে কাহিনী:
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘কঞ্জুস’ বা হাড়কিপ্টে চরিত্রে ছিলেন হায়দার আলী খান। তার বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোনো এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামান ওরফে বদি মিয়ার। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া খাস চাকর হয়ে যায় হায়দার আলী খানের।
এদিকে, হায়দার আলী খাঁনের ছেলে কাযিম আলী খাঁন প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে, তখন হায়দার আলীর চোঁখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এহেন আচরণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়। এরপর নানা ঘটনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের গল্প।
অভিনয়ের পাশাপাশি দর্শকদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে নাটকের কোরিওগ্রাফিও। বিভিন্ন দৃশ্যে দর্শকদের হাসি নির্মল আনন্দের প্রকাশ ঘটায়। অভিনয়ের দিক থেকে প্রধান চরিত্রগুলোর কলাকৌশলীরা যেমন বোদ্ধা শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন, ঠিক তেমনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন নাটকটির সহযোগী চরিত্রের কুশলীরাও।
দর্শকদের মতে, নাটকটির পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জা, নৃত্য, আলোকসজ্জা, পোশাক, সংগীত, রূপসজ্জা ছিলো অত্যন্ত চমৎকার। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর গল্পের মধ্য দিয়ে মঞ্চায়ন হয়েছে 'কঞ্জুস' নাটকটির।
১৯৮৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বিগত ৩৪ বছর ধরে নাটকটি নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের দর্শক তৈরিতে এ নাটকটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া কঞ্জুস বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাটক। এ নাটকের কুশীলবরা দীর্ঘদিন ধরে এ নাটকে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ সময়ের মঞ্চায়ন অভিজ্ঞতা থেকে এ নাটকের ডিজাইন ও অভিনয় রীতিমত দর্শকদের মুগ্ধ করার এক অনন্য প্রয়াস।
হাসির নাটক হিসেবে শুরু থেকেই সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে নাটকটিতে একটি প্রাণবন্ত নাট্য-আবহ তৈরির। রূপান্তরের ক্ষেত্রেও প্রচলিত ভাষা ও কথ্যরীতির ব্যবহার বেশ চমৎকার বলেই মন্তব্য করেছেন দর্শকরা। তাদের মতে, পুরনো ঢাকার বাসিন্দা, যারা ‘ঢাকাইয়া’ ভাষায় কথা বলেন, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরেছে নাটকটি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh