শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম কতটা ভেঙে পড়তে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বাঙলা কলেজ। কলেজের ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক। এছাড়াও ভূগোল, আইসিটি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগেও শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন আশিকুর রহমান বলেন "আমরা যারা এই বিভাগে পড়ছি, তাদের জন্য এটা একটা ভয়ংকর অবস্থা। পরীক্ষা চলে আসে, কিন্তু ঠিকমতো গাইডলাইন দেওয়ার কেউ থাকেন না। শিক্ষার্থীরা দিন দিন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়ার ফলে শিক্ষকদের ওপরেও বাড়তি চাপ পরে যার ফলে রুটিনে থাকলেও অনেক সময় শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারনে ক্লাস সংগঠিত হয়না। ফলে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনা। "
একই অবস্থা দর্শন বিভাগেও। দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজি রাফিন চৌধুরি বলেন, "আমাদের বিভাগ গুরুতর শিক্ষক সংকটের মুখোমুখি। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ক্লাস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নির্ধারিত কোর্সসমূহ সময়মতো সম্পন্ন করা যাচ্ছে না, যা আমাদের একাডেমিক অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় আমরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে একাধিক কোর্স পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে এবং শিক্ষার মান কমিয়ে দিচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট কম্পিউটার ও কম্পিউটার অপারেটর নেই। যে কোন কম্পিউটার বিষয়ক কাজে বা যে কোন প্রয়োজনে প্রশাসনিক ভবনের অফিসে যেতে হয়। সেখানে দীর্ঘক্ষণ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। আমরা অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান দেখতে চাই।”
মার্কেটিং বিভাগের পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং মান উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবি নিয়ে চলতি বছরের ১৬ ই জানুয়ারি সচিবালয়ে যান শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। তবে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার এক মাসের বেশি হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ কামরুল হাসান বলেন, "শিক্ষক সংকট নিরসনে আমরা বহুবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই সমাধান আসবে।"
কিন্তু কবে নাগাদ এই সংকটের সমাধান হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে ভোগা শিক্ষার্থীদের দাবি, এখন আর আশ্বাস নয়, চাই বাস্তব পদক্ষেপ। অন্যথায় তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।