খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্মার্ট এগ্রোনমির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি খাত আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, মাটির উর্বরতা হ্রাস, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট এগ্রোনমি কার্যকর সমাধান দিতে পারে।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ এগ্রোনমি সোসাইটির (বিএসএ) ২৩তম জাতীয় ও ২য় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘টেকসই শস্য উৎপাদনের জন্য স্মার্ট কৃষিতত্ত্ব’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে তিন দিনব্যাপি ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএসএ'র সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর আহমেদ খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. মঈনুল হক, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম শিকদার, ইরি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. হামনাথ ভান্ডারি এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ভিয়েতনাম শাখার চিফ টেকনিক্যাল অফিসার সাসো মার্টিনভ। সম্মেলনের সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বিএসএ'র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম রুহুল আমিন। সম্মেলনের উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য দেন বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রমিজ উদ্দিন।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নীতকরণ কেন্দ্রের (সিমিট বাংলাদেশ) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. দেবাশীষ চক্রবর্তী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি এবং টেকসই কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'ইন্টারনেট-সেন্সর (আইওটি), ড্রোন এবং তথ্য বিশ্লেষণ প্রযুক্তি আধুনিক কৃষিকে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করছে। ইন্টারনেট-সেন্সরের (আইওটি) মাধ্যমে জমির পর্যবেক্ষণ, সঠিকভাবে সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা, ড্রোনের সাহায্যে নির্দিষ্ট স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ এবং তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’
এছাড়াও টেকসই কৃষি নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং তা সবার জন্য সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সম্মেলনে সাসো মার্টিনভ স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে বলেন, ‘এটি তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং টেকসই চর্চার মাধ্যমে সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন কৌশল প্রয়োজন।’ এফএও-এর মাধ্যমে কৃষি খাতে জ্ঞান ভাগাভাগি এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি এই সম্মেলনকে টেকসই কৃষির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।
সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে লালতীর সিড লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষি এখনও অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। দেশের বেশিরভাগ কৃষক ছোট ও প্রান্তিক, যাদের আর্থিক ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য কম। বাজারের অস্থিরতা ও পুরনো পদ্ধতির ব্যবহার কৃষিতে নতুন বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তির দ্রুত প্রয়োগ এবং কাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি।’
সম্মেলনে ৫ জন বিশিষ্ট কৃষিতত্ত্ব গবেষক ও অধ্যাপককে বিএসএ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২ শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নেন।
সম্মেলন উপলক্ষে ৭ ও ৮ ডিসেম্বর মিলে মোট ৮টি টেকনিক্যাল সেশন ও একটি পোস্টার সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সেশনে মোট ২০৫টি গবেষণা প্রবন্ধের ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ১০০টি মৌখিক ও ১০৫টি পোস্টার উপস্থাপনা।