জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের উপদেষ্টা পদ পেতে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল-আমিন ও রিয়ান রাব্বি কিন কে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ-ছাত্রদল দুই দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই নেতা নাহিয়ান বিন হক অনিক ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত জবির সাবেক শরীফ-সিরাজের কমিটিতে জবির শাখা ছাত্রলীগের সদস্য এবং বর্তমানে জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার সহযোগী হিসেবে ছিল রাশেদ বিন হাশিম। দুইজনেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের অনুসারী।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি টিএসসিতে এলে রোববার রাতে এই মারধরের শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন টিএসসির সিরাজের চায়ের দোকানে মান্নান জুনিয়রদের সঙ্গে আড্ডাকালে অতর্কিত হামলা করে অনিকের ও তার সহযোগীরা। এতে দোকানের কয়েকটি গ্লাস ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করে তারা।
হামলার শিকার রিয়ান রাব্বি কিন বলেন, আমরা গতকাল সিনিয়র জুনিয়র সবাই একসাথে বসে চা খাচ্ছিলাম৷ এসময় ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রকল্যাণের সাবেক সভাপতি আল আমিন উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে নাহিয়ান বিন হক অনিক ও রাশেদ বিন হাশিমের নেতৃত্বে আল আমিনকে হামলা করা হয়। তখন আমি আল আমিন ভাইকে সেভ করতে গিয়ে আমি নিজেও আহত হয়েছি ব্যাপক, আমি এখনও ট্রিটমেন্ট নিচ্ছি। ওরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসে। ওরা রানিং ছাত্রদল করে ওরাই সব। এটাই ওদের কথা। সব ওদের।
জানা যায়, ছাত্রদল নেতা অনিক নেত্রকোনা জেলার হয়ে থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে ময়মনসিংহ জেলার উপদেষ্টা হতে চান। তবে এতে বিরোধিতা করেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের অন্য শিক্ষার্থীরা। ফলে মারধর করে অনিক ও তার সহযোগীরা। মারধরের শিকার আহত ভুক্তভোগী আল-আমিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
ভুক্তভোগী আল-আমিন বলেন, আমি কোনো রাজনীতিতে যুক্ত না। নাহিয়ান বিন হক অনিক অন্য জেলার হয়েও আমাদের জেলা ছাত্র কল্যাণে প্রভাব খাটাতে চায়। আমি ক্যাম্পাস জীবনে অরাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রকল্যাণেই কাজ করেছি। তার ইচ্ছেমতো নেতৃত্ব দিতে চায়। এ ব্যাপারে আমরা তার বিরোধিতা করায় গতকাল আমার উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেছে। এছাড়া সে দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা চায়। কিন্তু আমি দিতে অস্বীকৃতি জানাই, ফলে আমাকে মারধর করেছে।
জানা যায়, শাখা ছাত্রদলের নাহিয়ান বিন হক অনিক, (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), তুষার পাল (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক), আহসান মল্লিক (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), রাশেদ বিন হাশিম (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), আহম্মেদ কাওসার আকাশ (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), রাশেদুল ইসলাম রাহাত (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), মিয়া রাসেল (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), সোলাইমান খান সাগর (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক), ইসরাফিল (ছাত্রদল কর্মী), ওমর ফারুক (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক) হামলায় জড়িত ছিলেন।
তবে এই মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেন অভিযুক্ত নাহিয়ান বিন হক অনিক বলেন, আমি আল-আমিন নামের কোনো ছেলেকে চিনি না এবং মারিনি। ঐটা যেটা হয়েছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এবং এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের একটা বাকবিতন্ডা হয়। কালকে সন্ধ্যায় জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি হানিফ আহমেদ তার কিছু অনুসারী নিয়ে বসে বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিল। এবং তারা ছাত্রকল্যাণের নামে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল।
ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা তিনি বলেন, এক যুগের বেশি ছাত্র দলের রাজনীতিতে যুক্ত আছি। কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতিত হয়েছি। আওয়ামী লীগের কুচক্রী মহল পার্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই আমাকে নানা ভাবে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
দোকানে ভাঙচুরের শিকার দোকানী সিরাজ বলেন, ওরা হঠাৎ করে এসেই একজনকে মারা শুরু করে। অনেক সিনিয়র, কাউকেই চিনি না। কয়েকটি কাপ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে।
অভিযোগের বিষয়ে কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র লীগের মধ্যে টিএসসিতে ঝামেলা হলে সমাঝোতা আমাদের অনিক ও তার সাথে সবাই মিউচুয়াল করাতে যায়।
অনিক ছাত্রদলের সাথে ২০১২ সাল থেকে আছে। এগুলো মিথ্যা বানোয়াট ভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং পরপরই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে বিষয়টি জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্র-দলের পরবর্তী নির্দেশ মতো সিন্ধান্ত জানা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম কে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি সমাবেশে আছি ফোনে কথা শোনা যাচ্ছে না, পরে আপনার সাথে কথা বলব।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। এখন অভিযুক্ত নাহিয়ান বিন অনিক ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত কিনা সেটা জেনে আমি সাংবাদিকদের জানাতে পারব।